জয়পুরহাটে ডায়রিয়ার ব্যাপক প্রাদুর্ভাব, পাঁচ দিনে হাসপাতালে ভর্তি ৪১৮ জন
অব্যাহত বৃষ্টি শেষে তীব্র গরমে জয়পুরহাটে ডায়রিয়ার প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত পাঁচ দিনে জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৪১৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এসব রোগীর মধ্যে বেশিরভাগই শিশু এবং বয়স্ক।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শনিবার (৪ অক্টোবর) ভর্তি হয়েছেন ১৩৮ জন, রোববার ১০১ জন, সোমবার থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ১২৯ জন এবং বুধবার সকাল পর্যন্ত আরও ৪৮ জন রোগী ভর্তি হন। হঠাৎ রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা চরম সংকটে পড়েছেন।
হাসপাতালের ওয়ার্ড ও করিডোর ঘুরে দেখা গেছে, শয্যা সংকটে অনেক রোগী মেঝেতে বা বারান্দায় বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। স্যালাইনও দেওয়া হচ্ছে সেখানেই।
পৌরশহরের মাস্টারপাড়ার জালাল উদ্দিন বলেন, “স্ত্রীর বমি ও পায়খানা শুরু হলে হাসপাতালে আনি। কিন্তু শয্যা না পেয়ে বারান্দাতেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।”
রোগী গোপাল প্রসাদ অভিযোগ করেন, “পৌরসভার পানিতে ময়লা থাকে। সেই পানি পান করেই আমরা অসুস্থ হয়েছি।”
চাটখুর গ্রামের হাজেরা বানু জানান, “পূজার মেলায় খাবার খাওয়ার পর থেকে মেয়ের ডায়রিয়া শুরু হয়েছে।”
হাসপাতালের নার্স সাদিয়া ইরা বলেন, “হঠাৎ এত রোগী কেন বাড়ছে, তা এখনও নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। আগেও পৌরসভার লিকেজযুক্ত পানির কারণে এমন ঘটনা ঘটেছিল।”
সহকারী চিকিৎসক ডা. মো. হারিছ জানান, “বেশির ভাগ রোগী পৌর এলাকার বাসিন্দা। পরীক্ষা করলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।”
পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মামুনুর রশীদ বলেন, “পানি পরীক্ষার জন্য নমুনা ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এখনো ত্রুটি প্রমাণিত হয়নি।”
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক বলেন, “পাঁচ দিন ধরে রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। পানি ও উন্মুক্ত খাবার উভয়ই দায়ী হতে পারে।”
জয়পুরহাটের সিভিল সার্জন ডা. আল মামুন জানান, “ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। দূষিত পানি বা ভেজাল খাদ্য থেকেই ছড়ায়। আমরা জরুরি বৈঠক করেছি এবং পৌর প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”
এদিকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, আক্রান্ত এলাকায় সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ ও বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিতকরণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।











