ঢাকা ০৮:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জামালপুরে বদলি বাবা’র দরবারে টাকা ছাড়া হয়নি শিক্ষক বদলি

জাকিরুল ইসলাম,জামালপুর::

জামালপুরের প্রাথমিক শিক্ষা খাতে বদলি ও নিয়োগ বানিজ্যের এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ আতিকুর রহমান ছানা ও তার সিন্ডিকেট মোটা অংকের টাকা নিয়ে শিক্ষক বদলি করেছেন।

তত্ত সুত্রে জানাযায়, ‘বদলি বাবা’ নামে পরিচিত এই নেতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলি প্রক্রিয়াকে কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। তার অনুমোদন ছাড়া কোনো শিক্ষক বদলি হতে পারতেন না। সুবিধাজনক স্থানে বদলির জন্য শিক্ষকদের দিতে হতো ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত।

স্থানীয় শিক্ষকরা জানান, সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে বছরের পর বছর ঘুরেও টাকা ছাড়া বদলির আদেশ পাওয়া যেত না। উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তারা ‘বদলি বাবা’র অনুমতি ছাড়া কোনো ফাইল এগিয়ে নিতে পারতেন না। ফলে ভুক্তভোগী শিক্ষকদের বাধ্য হয়ে তার সিন্ডিকেটের দালালদের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা দিতে হতো।

সূত্র জানায়, ছানা মিয়া দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাবিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা, আওয়ামীপন্থী শিক্ষক নেতা ও কিছু অসাধু কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

একজন ভুক্তভোগী শিক্ষক বলেন, “বদলি বাবার দরবারে টাকা ছাড়া কিছুই সম্ভব ছিল না। নিয়ম অনুযায়ী বদলির সুযোগ থাকলেও বছরের পর বছর ঘুরতে হয়েছে।”

জানা গেছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে ছানা মিয়া নিজ এলাকা ময়মনসিংহের ফুলপুর থেকে বিতাড়িত হন। পরে জামালপুরে আশ্রয় নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং ধীরে ধীরে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।

দীর্ঘদিন দলের সাথে সম্পৃক্ত থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতির পদে আসীন হন। পরবর্তীতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে প্রভাব বিস্তার করে শিক্ষক বদলি ও নিয়োগ বানিজ্যসহ নানা অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত হন।

ছানা মিয়ার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত করে তাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক ও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, এই সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যদেরও খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অনিয়ম করতে না পারে।

এ বিষয়ে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে তদন্ত শুরু হয়েছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে শিক্ষকরা দ্রুত বিচার ও শিক্ষাব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ফেরানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৮:২৫:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
৫১২ বার পড়া হয়েছে

জামালপুরে বদলি বাবা’র দরবারে টাকা ছাড়া হয়নি শিক্ষক বদলি

আপডেট সময় ০৮:২৫:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

জামালপুরের প্রাথমিক শিক্ষা খাতে বদলি ও নিয়োগ বানিজ্যের এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ আতিকুর রহমান ছানা ও তার সিন্ডিকেট মোটা অংকের টাকা নিয়ে শিক্ষক বদলি করেছেন।

তত্ত সুত্রে জানাযায়, ‘বদলি বাবা’ নামে পরিচিত এই নেতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলি প্রক্রিয়াকে কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। তার অনুমোদন ছাড়া কোনো শিক্ষক বদলি হতে পারতেন না। সুবিধাজনক স্থানে বদলির জন্য শিক্ষকদের দিতে হতো ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত।

স্থানীয় শিক্ষকরা জানান, সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে বছরের পর বছর ঘুরেও টাকা ছাড়া বদলির আদেশ পাওয়া যেত না। উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তারা ‘বদলি বাবা’র অনুমতি ছাড়া কোনো ফাইল এগিয়ে নিতে পারতেন না। ফলে ভুক্তভোগী শিক্ষকদের বাধ্য হয়ে তার সিন্ডিকেটের দালালদের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা দিতে হতো।

সূত্র জানায়, ছানা মিয়া দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাবিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা, আওয়ামীপন্থী শিক্ষক নেতা ও কিছু অসাধু কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

একজন ভুক্তভোগী শিক্ষক বলেন, “বদলি বাবার দরবারে টাকা ছাড়া কিছুই সম্ভব ছিল না। নিয়ম অনুযায়ী বদলির সুযোগ থাকলেও বছরের পর বছর ঘুরতে হয়েছে।”

জানা গেছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে ছানা মিয়া নিজ এলাকা ময়মনসিংহের ফুলপুর থেকে বিতাড়িত হন। পরে জামালপুরে আশ্রয় নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং ধীরে ধীরে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।

দীর্ঘদিন দলের সাথে সম্পৃক্ত থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতির পদে আসীন হন। পরবর্তীতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে প্রভাব বিস্তার করে শিক্ষক বদলি ও নিয়োগ বানিজ্যসহ নানা অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত হন।

ছানা মিয়ার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত করে তাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক ও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, এই সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যদেরও খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অনিয়ম করতে না পারে।

এ বিষয়ে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে তদন্ত শুরু হয়েছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে শিক্ষকরা দ্রুত বিচার ও শিক্ষাব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ফেরানোর আহ্বান জানিয়েছেন।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/checkpostcom/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464