ঢাকা ০৪:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে নিহত ৮৬ ও নির্যাতিত ১০৩২ শিক্ষার্থী’

চেকপোস্ট ডেস্ক::

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ৮৬ জন নিহত হয়েছেন। ধর্ষিত হয়েছেন ১৪জন নারী। যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে ৬৯ জনের সঙ্গে। এই ১৫ বছরে তাদের হাতে নির্যাতিত হয়েছে এক হাজার ৩২ জন শিক্ষার্থী।

নিষিদ্ধ এ সংগঠনটি ৫৩টি চাঁদাবাজি, ৩৯টি টেন্ডারবাজি এবং ৩০টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে। নিজেদের দলীয় কোন্দলে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৭ জন। পরীক্ষায় নকল জালিয়াতি ও ভুয়া বাণিজ্যে গত ১৫ বছরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ৩৭টি ঘটনার সবগুলোর সঙ্গেই ছাত্রলীগ জড়িত ছিল।

শনিবার (৯ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘নিরাপদ বাংলাদেশ চাই’-এর আয়োজনে ‘শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে এমন তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা।

আয়োজিত এই শীর্ষক সেমিনারে ‘ছাত্র রাজনীতির অন্ধকারের এক যুগ’ বিষয়ক গবেষণা প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিহত হয় ৫১ জন। বিভিন্ন পর্যায়ে ৮৬ জন নিহত হয়েছেন।

একই অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, শিক্ষাঙ্গন নিরাপদ না হলে পুরো দেশটাই অনিরাপদ হয়ে যাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সারাদেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে ছাত্রলীগ অনিরাপদ পরিবেশ তৈরি করেছিল। এ জন্যই ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আর যেন কোথাও ছাত্রলীগ তৈরি হতে না পারে সে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এ জন্য শিক্ষার্থী এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও শিক্ষকদের ভূমিকা রাখতে হবে। সুষ্ঠু একটি দেশ গড়তে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

এ সময় নতুন করে রাষ্ট্র মেরামত করতে হলে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস দূর করত হবে বলেও জানান প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

এর আগে গত ২৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার।

প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করিয়া বিগত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজী, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং এতৎসম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য দেশের সকল প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হইয়াছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে।

যেহেতু ১৫ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে উন্মত্ত ও বেপরোয়া সশস্ত্র আক্রমণ করিয়া শতশত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিদের হত্যা করিয়াছে এবং আরও অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে। যেহেতু সরকারের নিকট যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যের সহিত জড়িত।

সেহেতু সরকার ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯’ এর ধারা ১৮ এর উপ-ধারা (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিল এবং ওই আইনের তফসিল-২ এ ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’নামীয় ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করল।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৩:২৬:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪
৫০৩ বার পড়া হয়েছে

‘নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে নিহত ৮৬ ও নির্যাতিত ১০৩২ শিক্ষার্থী’

আপডেট সময় ০৩:২৬:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ৮৬ জন নিহত হয়েছেন। ধর্ষিত হয়েছেন ১৪জন নারী। যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে ৬৯ জনের সঙ্গে। এই ১৫ বছরে তাদের হাতে নির্যাতিত হয়েছে এক হাজার ৩২ জন শিক্ষার্থী।

নিষিদ্ধ এ সংগঠনটি ৫৩টি চাঁদাবাজি, ৩৯টি টেন্ডারবাজি এবং ৩০টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে। নিজেদের দলীয় কোন্দলে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৭ জন। পরীক্ষায় নকল জালিয়াতি ও ভুয়া বাণিজ্যে গত ১৫ বছরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ৩৭টি ঘটনার সবগুলোর সঙ্গেই ছাত্রলীগ জড়িত ছিল।

শনিবার (৯ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘নিরাপদ বাংলাদেশ চাই’-এর আয়োজনে ‘শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে এমন তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা।

আয়োজিত এই শীর্ষক সেমিনারে ‘ছাত্র রাজনীতির অন্ধকারের এক যুগ’ বিষয়ক গবেষণা প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিহত হয় ৫১ জন। বিভিন্ন পর্যায়ে ৮৬ জন নিহত হয়েছেন।

একই অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, শিক্ষাঙ্গন নিরাপদ না হলে পুরো দেশটাই অনিরাপদ হয়ে যাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সারাদেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে ছাত্রলীগ অনিরাপদ পরিবেশ তৈরি করেছিল। এ জন্যই ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আর যেন কোথাও ছাত্রলীগ তৈরি হতে না পারে সে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এ জন্য শিক্ষার্থী এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও শিক্ষকদের ভূমিকা রাখতে হবে। সুষ্ঠু একটি দেশ গড়তে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

এ সময় নতুন করে রাষ্ট্র মেরামত করতে হলে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস দূর করত হবে বলেও জানান প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

এর আগে গত ২৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার।

প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করিয়া বিগত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজী, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং এতৎসম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য দেশের সকল প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হইয়াছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে।

যেহেতু ১৫ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে উন্মত্ত ও বেপরোয়া সশস্ত্র আক্রমণ করিয়া শতশত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিদের হত্যা করিয়াছে এবং আরও অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে। যেহেতু সরকারের নিকট যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যের সহিত জড়িত।

সেহেতু সরকার ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯’ এর ধারা ১৮ এর উপ-ধারা (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিল এবং ওই আইনের তফসিল-২ এ ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’নামীয় ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করল।