ঢাকা ১১:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুয়েটে হল ছাড়ল শিক্ষার্থীরা পানি ও ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন

মোঃ রবিউল হোসেন খান ; খুলনা::

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) প্রশাসনের নির্দেশের পর শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে আবাসিক হল ছাড়তে শুরু করেছেন। তবে নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও সাতটি আবাসিক হলে এখনও কিছু শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের হল ছাড়তে বাধ্য করতে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।

ড. এস এম রশিদ হলে অবস্থানরত এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের জোর করে হল ছাড়তে বাধ্য করছে। ইন্টারনেট সংযোগ ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে আমাদের অসুবিধায় ফেলা হয়েছে।” শিক্ষার্থীদের পরিচালিত “কুয়েট ১৯” নামে একটি ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রচার করা হয়েছে। তবে বিকেলের দিকে পানির সরবরাহ পুনরায় চালু করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়, যার পর বুধবার সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা হল ছাড়তে শুরু করেন। তবে হলে অবস্থানরত এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে উপাচার্যকে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছি। যেহেতু আমরা তাকে বর্জন করেছি, তাই সিন্ডিকেটের কোনো সিদ্ধান্তও আমরা মানতে বাধ্য নই। উপাচার্য আমাদের তিন ঘণ্টার সংঘর্ষের মধ্যে ঠেলে দিয়েছিলেন, যা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে।”

এদিকে, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদ। তিনি বলেন, “হল ত্যাগের ঘোষণার পরও যারা অবস্থান করছেন, আমাদের প্রভোস্ট ও শিক্ষকরা তাদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং বোঝানোর চেষ্টা করছেন যাতে তারা স্বেচ্ছায় হল ছাড়েন। বল প্রয়োগ করে নয়, বরং বুঝিয়ে হল খালি করা হচ্ছে।”

এর আগে, মঙ্গলবার রাতে হল ছাড়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তারা উপাচার্যকে সকাল ১০টার মধ্যে হল ছাড়ার আহ্বান জানান। মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, “ফ্যাসিবাদী কায়দায় হল ভ্যাকেন্ট করে আমাদের যৌক্তিক আন্দোলন দমন করার চেষ্টা চলছে। আমরা হল ছাড়ব না। প্রয়োজনে পুলিশ বা সেনাবাহিনী দিয়ে আমাদের রক্তের ওপর দিয়ে হল ছাড়াতে হবে।”

উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চালু রাখা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বহিরাগতদের সংঘর্ষ হয়, যেখানে উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষার্থীদের পাঁচটি দাবি মেনে নেওয়া হয়, যার মধ্যে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন, তদন্ত কমিটি গঠন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীরা আরও দাবি করেন, “কুয়েট প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে, তাই আমরা উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ প্রশাসনের পরিবর্তন চাই।”

এছাড়া, বুধবার দুইটি বাসে ৮০ জন শিক্ষার্থী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে ঢাকায় যান। কাকরাইল মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বাধা দেয়, পরে তারা প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করেন।

এ ঘটনায় কুয়েট প্রশাসন অজ্ঞাতনামা ৪-৫০০ শিক্ষার্থীকে আসামি করে খানজাহান আলী থানায় মামলা করেছে। ইতোমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, যাদের মধ্যে চারজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৮:০৯:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
৫১৩ বার পড়া হয়েছে

কুয়েটে হল ছাড়ল শিক্ষার্থীরা পানি ও ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন

আপডেট সময় ০৮:০৯:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) প্রশাসনের নির্দেশের পর শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে আবাসিক হল ছাড়তে শুরু করেছেন। তবে নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও সাতটি আবাসিক হলে এখনও কিছু শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের হল ছাড়তে বাধ্য করতে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।

ড. এস এম রশিদ হলে অবস্থানরত এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের জোর করে হল ছাড়তে বাধ্য করছে। ইন্টারনেট সংযোগ ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে আমাদের অসুবিধায় ফেলা হয়েছে।” শিক্ষার্থীদের পরিচালিত “কুয়েট ১৯” নামে একটি ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রচার করা হয়েছে। তবে বিকেলের দিকে পানির সরবরাহ পুনরায় চালু করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়, যার পর বুধবার সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা হল ছাড়তে শুরু করেন। তবে হলে অবস্থানরত এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে উপাচার্যকে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছি। যেহেতু আমরা তাকে বর্জন করেছি, তাই সিন্ডিকেটের কোনো সিদ্ধান্তও আমরা মানতে বাধ্য নই। উপাচার্য আমাদের তিন ঘণ্টার সংঘর্ষের মধ্যে ঠেলে দিয়েছিলেন, যা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে।”

এদিকে, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদ। তিনি বলেন, “হল ত্যাগের ঘোষণার পরও যারা অবস্থান করছেন, আমাদের প্রভোস্ট ও শিক্ষকরা তাদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং বোঝানোর চেষ্টা করছেন যাতে তারা স্বেচ্ছায় হল ছাড়েন। বল প্রয়োগ করে নয়, বরং বুঝিয়ে হল খালি করা হচ্ছে।”

এর আগে, মঙ্গলবার রাতে হল ছাড়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তারা উপাচার্যকে সকাল ১০টার মধ্যে হল ছাড়ার আহ্বান জানান। মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, “ফ্যাসিবাদী কায়দায় হল ভ্যাকেন্ট করে আমাদের যৌক্তিক আন্দোলন দমন করার চেষ্টা চলছে। আমরা হল ছাড়ব না। প্রয়োজনে পুলিশ বা সেনাবাহিনী দিয়ে আমাদের রক্তের ওপর দিয়ে হল ছাড়াতে হবে।”

উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চালু রাখা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বহিরাগতদের সংঘর্ষ হয়, যেখানে উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষার্থীদের পাঁচটি দাবি মেনে নেওয়া হয়, যার মধ্যে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন, তদন্ত কমিটি গঠন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীরা আরও দাবি করেন, “কুয়েট প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে, তাই আমরা উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ প্রশাসনের পরিবর্তন চাই।”

এছাড়া, বুধবার দুইটি বাসে ৮০ জন শিক্ষার্থী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে ঢাকায় যান। কাকরাইল মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বাধা দেয়, পরে তারা প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করেন।

এ ঘটনায় কুয়েট প্রশাসন অজ্ঞাতনামা ৪-৫০০ শিক্ষার্থীকে আসামি করে খানজাহান আলী থানায় মামলা করেছে। ইতোমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, যাদের মধ্যে চারজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/checkpostcom/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464