ঢাকা ০২:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অভয়নগরে এক দিনে দুই প্রসূতির মৃত্যু, হাসপাতাল ভাঙচুর

মোঃ এনামুল হক, অভয়নগর প্রতিনিধি::

যশোরের অভয়নগরের নওয়াপাড়া ফাতেমা (প্রাঃ) হাসপাতালে একসঙ্গে দুই প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। তবে এক দিনের ব্যবধানে দুজনেরই মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় উত্তেজিত স্বজনরা হাসপাতালে ভাঙচুর চালায়।

গত ২১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাতে নওয়াপাড়া ফাতেমা প্রাইভেট হাসপাতালে শারমিন বেগম (২৬) ও আসমা খাতুন (৩২) নামের দুই প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর থেকে তাদের শরীরে প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পরে তাদের দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে পৌঁছানোর পর রাত ৮টার দিকে আসমা খাতুনের মৃত্যু হয়।

অপরদিকে, শারমিন বেগমের অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে খুলনা মেডিকেল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তার মৃত্যু ঘটে। মৃত শারমিন বেগম মনিরামপুর উপজেলার নেহালপুর গ্রামের বাবু মোল্যার স্ত্রী এবং আসমা খাতুন একই গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী।

মৃত শারমিন বেগমের স্বামী বাবু মোল্যা বলেন, আমার স্ত্রীকে ফাতেমা হাসপাতালের ডাক্তার ভুল অপারেশন করে হত্যা করেছে। অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারলাম না। আমার সন্তান এতিম হয়ে গেছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।

অপর মৃত আসমা বেগমের ভাই জসিম উদ্দিন বলেন, আমার বোনকে ডাক্তার সঠিকভাবে সেলাই না দেওয়ায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। ৫ ব্যাগ রক্ত দিয়েও আমরা বোনকে বাঁচাতে পারলাম না। ভুল অপারেশনের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

ফাতেমা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মঞ্জুরুল মোরশেদ বলেন, “ভুল চিকিৎসার কারণে মৃত্যু হয়নি, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তাদের দ্রুত খুলনায় পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এমন পরিণতি হবে, তা কল্পনাও করতে পারিনি।”

হাসপাতালটির মালিক রফিকুল ইসলাম বাঘা জানান, প্রথম দিন এক জন মৃত্যুবরণ করেছিলো। আজ দুপুরে আরেকজনের মৃত্যুর খবর শুনেছি। দুই পরিবারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলিমুর রাজিব বলেন, “দুই পরিবারের কেউ এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তবে আমরা পত্রিকার মাধ্যমে ঘটনা জেনেছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

যশোর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা বলেন, “বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি নিজে অভয়নগরের ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে অভিযান পরিচালনা করবো।”

এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে এবং সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপডেট সময় ১১:১১:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
৫১০ বার পড়া হয়েছে

অভয়নগরে এক দিনে দুই প্রসূতির মৃত্যু, হাসপাতাল ভাঙচুর

আপডেট সময় ১১:১১:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

যশোরের অভয়নগরের নওয়াপাড়া ফাতেমা (প্রাঃ) হাসপাতালে একসঙ্গে দুই প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। তবে এক দিনের ব্যবধানে দুজনেরই মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় উত্তেজিত স্বজনরা হাসপাতালে ভাঙচুর চালায়।

গত ২১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাতে নওয়াপাড়া ফাতেমা প্রাইভেট হাসপাতালে শারমিন বেগম (২৬) ও আসমা খাতুন (৩২) নামের দুই প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর থেকে তাদের শরীরে প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পরে তাদের দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে পৌঁছানোর পর রাত ৮টার দিকে আসমা খাতুনের মৃত্যু হয়।

অপরদিকে, শারমিন বেগমের অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে খুলনা মেডিকেল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তার মৃত্যু ঘটে। মৃত শারমিন বেগম মনিরামপুর উপজেলার নেহালপুর গ্রামের বাবু মোল্যার স্ত্রী এবং আসমা খাতুন একই গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী।

মৃত শারমিন বেগমের স্বামী বাবু মোল্যা বলেন, আমার স্ত্রীকে ফাতেমা হাসপাতালের ডাক্তার ভুল অপারেশন করে হত্যা করেছে। অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারলাম না। আমার সন্তান এতিম হয়ে গেছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।

অপর মৃত আসমা বেগমের ভাই জসিম উদ্দিন বলেন, আমার বোনকে ডাক্তার সঠিকভাবে সেলাই না দেওয়ায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। ৫ ব্যাগ রক্ত দিয়েও আমরা বোনকে বাঁচাতে পারলাম না। ভুল অপারেশনের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

ফাতেমা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মঞ্জুরুল মোরশেদ বলেন, “ভুল চিকিৎসার কারণে মৃত্যু হয়নি, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তাদের দ্রুত খুলনায় পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এমন পরিণতি হবে, তা কল্পনাও করতে পারিনি।”

হাসপাতালটির মালিক রফিকুল ইসলাম বাঘা জানান, প্রথম দিন এক জন মৃত্যুবরণ করেছিলো। আজ দুপুরে আরেকজনের মৃত্যুর খবর শুনেছি। দুই পরিবারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলিমুর রাজিব বলেন, “দুই পরিবারের কেউ এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তবে আমরা পত্রিকার মাধ্যমে ঘটনা জেনেছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

যশোর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা বলেন, “বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি নিজে অভয়নগরের ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে অভিযান পরিচালনা করবো।”

এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে এবং সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/checkpostcom/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464