ব্রহ্মপুত্র নদে অভিশপ্ত কচুরিপানা, নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার জলজ সম্পদ
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র নদে কচুরিপানার বিস্তার বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে স্থানীয় জলজ সম্পদ এবং কৃষি। নদটির মাঝে পূর্ব-পশ্চিমমুখী একটি ভাসমান সেতুর উত্তর পাশে সম্পূর্ণ কচুরিপানায় আচ্ছাদিত, এবং দক্ষিণ পাশের কিছু অংশ এখনও মুক্ত থাকলেও শিগগিরই তা কচুরিপানার দখলে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় পৌরবাসীদের মতে, ব্রহ্মপুত্র নদে কয়েক দশক ধরে দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ প্রকল্প আকারে প্রতি বছর কোটি টাকার বেশি মাছ চাষ করেছে। বর্তমানে নদটি অযত্নে-অবহেলায় পড়ে রয়েছে, এবং কচুরিপানার কারণে কোটি টাকার জলজ সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। নদীর কিনারে যেখানে ধান চাষ হতো, সেখানে এখন কচুরিপানার আধিপত্য। মাছ ধরার জন্য জাল ফেলা তো দূরের কথা, বর্ষা মৌসুমে নদীতে নৌকা চালানোও দুষ্কর হয়ে পড়ে।
বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া এবং বাংলা পিডিয়ার তথ্য অনুসারে, কচুরিপানা পচে পানির নিচে বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি করে, যা পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি করে। এর ফলে জলজ উদ্ভিদ এবং মাছ মরে যায়। এই পানি ব্যবহারে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। কচুরিপানা দ্রুত বর্ধনশীল উদ্ভিদ, যা ১ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয় এবং মাত্র ৫০ দিনে তিন হাজারের বেশি সংখ্যায় বিস্তার লাভ করতে পারে। এটি মশার আবাসস্থল তৈরি করে, যা ম্যালেরিয়া এবং কলেরা রোগের সঙ্গে পরোক্ষভাবে যুক্ত।
১৮শ শতকের শেষভাগে ব্রিটিশ পাট ব্যবসায়ী জর্জ মরগ্যান ভারত উপমহাদেশে কচুরিপানা নিয়ে আসেন। ১৯২০ সালের মধ্যে বাংলার প্রায় প্রতিটি জলাশয় এই উদ্ভিদে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ১৯৩৬ সালে কচুরিপানা নির্মূলের জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়। শেরে-ই-বাংলা এ.কে. ফজলুল হক ১৯৩৯ সালে বাংলায় “কচুরিপানা সপ্তাহ” পালন করেন। সে সময় কচুরিপানাকে “বিউটিফুল ব্লু ডেভিল” এবং “বেঙ্গল টেরর” হিসেবে অভিহিত করা হতো।
২০২২ সালে সাবেক মেয়র শেখ মোহাম্মদ নুরুন্নবী অপু সাড়ে ছয় লক্ষ টাকা খরচ করে নদ থেকে কচুরিপানা অপসারণ করেছিলেন। তবে চলতি বছর কচুরিপানা আবার নদটি ঢেকে ফেলেছে। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ তিন লক্ষ টাকার বাজেট প্রস্তাব করলেও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের মতে সাত থেকে আট লক্ষ টাকা প্রয়োজন হবে। পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবে এই মুহূর্তে কচুরিপানা অপসারণ করা সম্ভব নয়।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মো. রাশেদ ইবনে সিরাজ জানান, কচুরিপানার কারণে সূর্যালোক সঠিকভাবে পানিতে পৌঁছায় না, যা নদীর খাদ্যশৃঙ্খলকে ব্যাহত করে। এছাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম বলেন, “ব্রহ্মপুত্র নদটি প্রায় মৃত অবস্থায় রয়েছে। কচুরিপানা দ্রুত অপসারণ না করলে জলজ বাস্তুসংস্থান ও দেশীয় মাছের প্রজনন চিরতরে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।