ঢাকা ০৮:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বছরজুড়ে চুনারুঘাটে ৯ জনের প্রাণহানি

স্টাফ রিপোর্টার::

বছরজুড়ে চুনারুঘাটে ৯ জনের প্রাণহানি

ভারতীয় সীমান্তবর্তী হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা ২০২৪ সালে ছিল খুন, ডাকাতি এবং মাদকের বিস্তারের ভয়াবহ দৃষ্টান্ত। বছরজুড়ে এই উপজেলায় ঘটে যাওয়া অপরাধমূলক ঘটনাগুলো স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বছরের শুরু থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত উপজেলায় ৯টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাশ গলা কাটা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও ৭টি লাশ গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় পাওয়া গেছে। এসব ঘটনা উপজেলায় একটি গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বছরজুড়ে ছিল উপজেলায় মাদকের ছড়াছড়ি, ডাকাতিসহ নানা অপরাধ। গেল বছর ডাকাতির ঘটনায় কয়েকজনের প্রাণহানি ঘটে। উবাহাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এজাজ ঠাকুর চৌধুরীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ছিল টক অপ দা চুনারুঘাট।

২০২৪ সালের প্রথম দিনই উপজেলার রানীগাঁও ইউনিয়নে একটি ফসলি জমি থেকে আইনজীবী সহকারী হারুন মিয়া (৪০) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়।

২৪ জানুয়ারি উবাহাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এজাজ ঠাকুর চৌধুরীর বাড়িতে দুর্র্ধষ ডাকাতি সংঘটিত হয়। লুট করে নেওয়া হয় নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ ৩০ লাখ টাকার মালামাল।

এরপর ১১ ফেব্রুয়ারি উবাহাটা ইউনিয়নের বালিয়ারী গ্রামের টমটম চালক দরিদ্র আতাউর রহমানকে (৫০) খুন করে ছিনতাই করা হয় টমটম। ২২ ফেব্রুয়ারি আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের চিমটিবিল খাস গ্রামের বিষু মালকে (৪০) ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়।

মাদকের টাকা পাওনার ঘটনা নিয়ে এ ঘটনা ঘটে। ২৭ মার্চ চুনারুঘাট পৌরশহরের পাকুড়িয়া খামারবাড়ি থেকে স্বপন (১০) নামের এক কিশোরকে গলাকেটে হত্যা করা হয়।

তারপর ২১ মে মিরাশী ইউনিয়নের লাতুরগাঁও গ্রামের আব্দুল হাসিম (৬০) কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। ৭ জুলাই গাজীপুর ইউনিয়নের ঘনকিরপাড় গ্রামের আফরোজ মিয়াকে (৫০) ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী।

১৭ জুলাই রাতে সাতছড়িতে লাশবাহী গাড়িসহ অর্ধ শতাধিক যানবাহনে ডাকাতি সংঘটিত হয়। ১০ আগস্ট রাণীগাঁও ইউনিয়নের একটি এগ্রো ফার্মে ডাকাতি সংগঠিত হয়।

এরপর ১৫ আগস্ট রাণীগাও গ্রামের ডুবাই প্রবাসী রাসেল মিয়ার বাড়িতে ডাকাতরা হানা দেয় এবং রাসেল মিয়াকে হত্যা করে মালামাল লুট করে। ১৮ আগস্ট চুনারুঘাট পৌর এলাকার নয়ানী গ্রামে চেতনানাশক প্রয়োগ করে বন্ধুর কন্যাকে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় বিল্লাল ও ফয়সল নামের দুই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

২৯ আগস্ট রাণীগাও গ্রীনল্যান্ড পার্কের একটি কাঁঠাল গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় আব্দুল মতিন (৬০) নামের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

কিছুদিন পর ১০ সেপ্টেম্বর রঘুনন্দন হীল থেকে অজ্ঞাত যুবক মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ৩ অক্টোবর শায়েস্তাগঞ্জ-পঞ্চাশ সড়কে ডাকাতি হয়। ১১ অক্টোবর রেমা চা বাগানে প্রতিবন্ধী জালাম মিয়াকে খুন করে দোকানের মালামাল লুট করা হয়।

১৩ অক্টোবর দেউন্দি চা বাগানের ফুলছড়ি টিলা থেকে অভিজিৎ সাওতালকে (৪৫) গলা কেটে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ২৭ অক্টোবর রানীগাঁও  গ্রামের ওয়াহিদুর রহমানের কন্যা রুমির (১৮) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

তারপর ২১ নভেম্বর গাজীপুর ইউনিয়নের হাপ্টার হাওর গ্রামে রাজু মিয়াকে (৫০) খুন করা হয়। ১৪ ডিসেম্বর রাণীগাঁও রিজার্ভ টিলা থেকে সুচিত্রা সাঁওতাল (৪৫) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ২৪ ডিসেম্বর উপজেলায় মাদকের ছড়াছড়ি ছিল অন্যান্য বছর থেকে বেশি।

২০২৪ সালে পুলিশ আর বিজিবি প্রায় ১০ কোটি টাকার বিভিন্ন জাতের ভারতীয় মাদক আটক করে।

২০২৪ সাল জুড়ে চুনারুঘাটে অপরাধের বিস্তার একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা দেখিয়েছে। খুন, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, এবং অন্যান্য গুরুতর অপরাধগুলোর পেছনে মাদকের প্রভাব এবং সীমান্তবর্তী অবস্থান একটি বড় ভূমিকা রেখেছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও সক্রিয় পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয় জনগন।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০১:১০:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫
৫৩০ বার পড়া হয়েছে

বছরজুড়ে চুনারুঘাটে ৯ জনের প্রাণহানি

আপডেট সময় ০১:১০:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫

ভারতীয় সীমান্তবর্তী হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা ২০২৪ সালে ছিল খুন, ডাকাতি এবং মাদকের বিস্তারের ভয়াবহ দৃষ্টান্ত। বছরজুড়ে এই উপজেলায় ঘটে যাওয়া অপরাধমূলক ঘটনাগুলো স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বছরের শুরু থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত উপজেলায় ৯টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাশ গলা কাটা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও ৭টি লাশ গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় পাওয়া গেছে। এসব ঘটনা উপজেলায় একটি গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বছরজুড়ে ছিল উপজেলায় মাদকের ছড়াছড়ি, ডাকাতিসহ নানা অপরাধ। গেল বছর ডাকাতির ঘটনায় কয়েকজনের প্রাণহানি ঘটে। উবাহাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এজাজ ঠাকুর চৌধুরীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ছিল টক অপ দা চুনারুঘাট।

২০২৪ সালের প্রথম দিনই উপজেলার রানীগাঁও ইউনিয়নে একটি ফসলি জমি থেকে আইনজীবী সহকারী হারুন মিয়া (৪০) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়।

২৪ জানুয়ারি উবাহাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এজাজ ঠাকুর চৌধুরীর বাড়িতে দুর্র্ধষ ডাকাতি সংঘটিত হয়। লুট করে নেওয়া হয় নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ ৩০ লাখ টাকার মালামাল।

এরপর ১১ ফেব্রুয়ারি উবাহাটা ইউনিয়নের বালিয়ারী গ্রামের টমটম চালক দরিদ্র আতাউর রহমানকে (৫০) খুন করে ছিনতাই করা হয় টমটম। ২২ ফেব্রুয়ারি আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের চিমটিবিল খাস গ্রামের বিষু মালকে (৪০) ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়।

মাদকের টাকা পাওনার ঘটনা নিয়ে এ ঘটনা ঘটে। ২৭ মার্চ চুনারুঘাট পৌরশহরের পাকুড়িয়া খামারবাড়ি থেকে স্বপন (১০) নামের এক কিশোরকে গলাকেটে হত্যা করা হয়।

তারপর ২১ মে মিরাশী ইউনিয়নের লাতুরগাঁও গ্রামের আব্দুল হাসিম (৬০) কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। ৭ জুলাই গাজীপুর ইউনিয়নের ঘনকিরপাড় গ্রামের আফরোজ মিয়াকে (৫০) ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী।

১৭ জুলাই রাতে সাতছড়িতে লাশবাহী গাড়িসহ অর্ধ শতাধিক যানবাহনে ডাকাতি সংঘটিত হয়। ১০ আগস্ট রাণীগাঁও ইউনিয়নের একটি এগ্রো ফার্মে ডাকাতি সংগঠিত হয়।

এরপর ১৫ আগস্ট রাণীগাও গ্রামের ডুবাই প্রবাসী রাসেল মিয়ার বাড়িতে ডাকাতরা হানা দেয় এবং রাসেল মিয়াকে হত্যা করে মালামাল লুট করে। ১৮ আগস্ট চুনারুঘাট পৌর এলাকার নয়ানী গ্রামে চেতনানাশক প্রয়োগ করে বন্ধুর কন্যাকে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় বিল্লাল ও ফয়সল নামের দুই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

২৯ আগস্ট রাণীগাও গ্রীনল্যান্ড পার্কের একটি কাঁঠাল গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় আব্দুল মতিন (৬০) নামের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

কিছুদিন পর ১০ সেপ্টেম্বর রঘুনন্দন হীল থেকে অজ্ঞাত যুবক মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ৩ অক্টোবর শায়েস্তাগঞ্জ-পঞ্চাশ সড়কে ডাকাতি হয়। ১১ অক্টোবর রেমা চা বাগানে প্রতিবন্ধী জালাম মিয়াকে খুন করে দোকানের মালামাল লুট করা হয়।

১৩ অক্টোবর দেউন্দি চা বাগানের ফুলছড়ি টিলা থেকে অভিজিৎ সাওতালকে (৪৫) গলা কেটে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ২৭ অক্টোবর রানীগাঁও  গ্রামের ওয়াহিদুর রহমানের কন্যা রুমির (১৮) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

তারপর ২১ নভেম্বর গাজীপুর ইউনিয়নের হাপ্টার হাওর গ্রামে রাজু মিয়াকে (৫০) খুন করা হয়। ১৪ ডিসেম্বর রাণীগাঁও রিজার্ভ টিলা থেকে সুচিত্রা সাঁওতাল (৪৫) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ২৪ ডিসেম্বর উপজেলায় মাদকের ছড়াছড়ি ছিল অন্যান্য বছর থেকে বেশি।

২০২৪ সালে পুলিশ আর বিজিবি প্রায় ১০ কোটি টাকার বিভিন্ন জাতের ভারতীয় মাদক আটক করে।

২০২৪ সাল জুড়ে চুনারুঘাটে অপরাধের বিস্তার একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা দেখিয়েছে। খুন, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, এবং অন্যান্য গুরুতর অপরাধগুলোর পেছনে মাদকের প্রভাব এবং সীমান্তবর্তী অবস্থান একটি বড় ভূমিকা রেখেছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও সক্রিয় পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয় জনগন।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/checkpostcom/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464