ঢাকা ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হবিগঞ্জের পুরাতন খোয়াই ও সুতাং নদী দখল-দূষণে বিপর্যস্ত

এম এ ওয়াহেদ, লাখাই, হবিগঞ্জ::

ছবি: সংগৃহীত

হবিগঞ্জ জেলার প্রধান দুটি নদী পুরাতন খোয়াই ও সুতাং এখন দখল ও দূষণের চরম হুমকিতে। নদীর কালো, দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে মাছসহ জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠছে। প্লাস্টিক, পলিথিন, শিল্পবর্জ্য ও আবর্জনায় নদী ভরাট হয়ে অস্তিত্ব হারানোর পথে। অপরিকল্পিত শিল্পকারখানা, পাহাড়-টিলা ও বনভূমি ধ্বংস, হাওরের পানিশূন্যতা এবং নির্বিচারে গাছ কাটার কারণে পরিবেশ বিপর্যয় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

এই বাস্তবতা তুলে ধরে এবং নদী-হাওর রক্ষার দাবিতে শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে হবিগঞ্জ শহরে এক বিশেষ ছবি আঁকার কর্মসূচি পালন করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন “ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)”, আর্ট এন্ড টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট হবিগঞ্জ এবং প্রাকৃতজন।

ধরা হবিগঞ্জের আহ্বায়ক তাহমিনা বেগম গিনির সভাপতিত্বে আয়োজিত কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ ইকরামুল ওয়াদুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল এবং সমাজকর্মী অলক দত্ত বাবু। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আর্ট এন্ড টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট হবিগঞ্জের প্রিন্সিপাল আশিষ আচার্য্য।

বক্তারা বলেন, তথাকথিত উন্নত দেশগুলোর কারণে জলবায়ু পরিবর্তন ঘটলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের মতো দেশ। বাংলাদেশের ঋতুচক্র পাল্টে গেছে, হাওরগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়ছে, দেশীয় মাছ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। শিল্পবর্জ্য ও কলকারখানার অপরিশোধিত দূষিত পানি সুতাং নদীকে দেশের সবচেয়ে দূষিত নদীতে পরিণত করেছে।

নদী দখল ও দূষণের ভয়াবহতা সুতাং নদী বহু বছর ধরে হবিগঞ্জের শিল্পকারখানার বর্জ্য সরাসরি এ নদীতে ফেলা হচ্ছে। এখন এটি দেশের সবচেয়ে দূষিত নদী হিসেবে পরিচিত। পুরাতন খোয়াই নদী দুই দশক ধরে নদীটির দখলমুক্তির দাবি উঠলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। দখল-দূষণে নদীর অস্তিত্ব চরম সংকটে টিলা কাটার মাধ্যমে বন উজাড়, নির্বিচারে গাছ কাটা এবং অপরিকল্পিত সড়ক নির্মাণে হাওর-প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে।

পরিবেশবাদী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেছেন, নদী, হাওর, বনভূমি ও টিলা রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। উন্নয়নের নামে প্রকৃতি বিনাশ বন্ধ করতে হবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে শিল্পকারখানায় বর্জ্য শোধনাগার (ETP) বাধ্যতামূলক করতে হবে। বন ও নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, মানুষের অধিকার, ন্যায়বিচার, কর্মসংস্থান এবং সুন্দর পৃথিবীর জন্য প্রকৃতিকে বাঁচাতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প শক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে অন্যায় কর্মকাণ্ড রুখে দিয়ে সকলের সম্মিলিত উদ্যোগে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব।

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৮:১৯:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
৫৫৭ বার পড়া হয়েছে

হবিগঞ্জের পুরাতন খোয়াই ও সুতাং নদী দখল-দূষণে বিপর্যস্ত

আপডেট সময় ০৮:১৯:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

হবিগঞ্জ জেলার প্রধান দুটি নদী পুরাতন খোয়াই ও সুতাং এখন দখল ও দূষণের চরম হুমকিতে। নদীর কালো, দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে মাছসহ জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠছে। প্লাস্টিক, পলিথিন, শিল্পবর্জ্য ও আবর্জনায় নদী ভরাট হয়ে অস্তিত্ব হারানোর পথে। অপরিকল্পিত শিল্পকারখানা, পাহাড়-টিলা ও বনভূমি ধ্বংস, হাওরের পানিশূন্যতা এবং নির্বিচারে গাছ কাটার কারণে পরিবেশ বিপর্যয় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

এই বাস্তবতা তুলে ধরে এবং নদী-হাওর রক্ষার দাবিতে শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে হবিগঞ্জ শহরে এক বিশেষ ছবি আঁকার কর্মসূচি পালন করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন “ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)”, আর্ট এন্ড টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট হবিগঞ্জ এবং প্রাকৃতজন।

ধরা হবিগঞ্জের আহ্বায়ক তাহমিনা বেগম গিনির সভাপতিত্বে আয়োজিত কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ ইকরামুল ওয়াদুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল এবং সমাজকর্মী অলক দত্ত বাবু। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আর্ট এন্ড টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট হবিগঞ্জের প্রিন্সিপাল আশিষ আচার্য্য।

বক্তারা বলেন, তথাকথিত উন্নত দেশগুলোর কারণে জলবায়ু পরিবর্তন ঘটলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের মতো দেশ। বাংলাদেশের ঋতুচক্র পাল্টে গেছে, হাওরগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়ছে, দেশীয় মাছ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। শিল্পবর্জ্য ও কলকারখানার অপরিশোধিত দূষিত পানি সুতাং নদীকে দেশের সবচেয়ে দূষিত নদীতে পরিণত করেছে।

নদী দখল ও দূষণের ভয়াবহতা সুতাং নদী বহু বছর ধরে হবিগঞ্জের শিল্পকারখানার বর্জ্য সরাসরি এ নদীতে ফেলা হচ্ছে। এখন এটি দেশের সবচেয়ে দূষিত নদী হিসেবে পরিচিত। পুরাতন খোয়াই নদী দুই দশক ধরে নদীটির দখলমুক্তির দাবি উঠলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। দখল-দূষণে নদীর অস্তিত্ব চরম সংকটে টিলা কাটার মাধ্যমে বন উজাড়, নির্বিচারে গাছ কাটা এবং অপরিকল্পিত সড়ক নির্মাণে হাওর-প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে।

পরিবেশবাদী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেছেন, নদী, হাওর, বনভূমি ও টিলা রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। উন্নয়নের নামে প্রকৃতি বিনাশ বন্ধ করতে হবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে শিল্পকারখানায় বর্জ্য শোধনাগার (ETP) বাধ্যতামূলক করতে হবে। বন ও নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, মানুষের অধিকার, ন্যায়বিচার, কর্মসংস্থান এবং সুন্দর পৃথিবীর জন্য প্রকৃতিকে বাঁচাতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প শক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে অন্যায় কর্মকাণ্ড রুখে দিয়ে সকলের সম্মিলিত উদ্যোগে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব।