শিক্ষা সফরে শিক্ষকদের অবহেলা, ছাত্রীরা জমা করেছে ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা
জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রীদের শিক্ষা সফরের খরচের ভার পুরোটাই ছাত্রীরা বহন করলেও এই শিক্ষা সফরের গাইড হিসাবে এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ ৫০ জন শিক্ষক যাওয়ার কথা রয়েছে, যাদের কেউই ১ টাকাও চাঁদা দেননি। শিক্ষা সফরের এই বাজেটে ১২০ জন ছাত্রী দিয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা।
এই ধরনের বৈষম্যের বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় অভিভাবকমহলসহ সচেতনমহলে বেশ তোলপাড় চলছে। ১৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার ভোরে নরসিংদী জেলার ড্রিম হলিডে পার্কের উদ্দেশে রওনা হচ্ছে জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রভাতী ও দিবা শিফটের দশম শ্রেণির ছাত্রীদের এবারের শিক্ষা সফরের বহর। এটা তাদের একদিনের কর্মসূচি। এই পার্কের স্পট ভাড়া গুণতে হবে একদিনের জন্য ৯০ হাজার টাকা।
বিদ্যালয় সূত্র এবং একাধিক অভিভাবকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার ভোর ৫টায় চারটি বাস জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির প্রভাতী ও দিবা শাখার ছাত্রীদের শিক্ষা সফরের পূর্বনির্ধারিত সূচি রয়েছে। তাদেরকে এবার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নরসিংদী জেলার ড্রিম হলিডে পার্কে। ১৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার ভোর পাঁচটায় চারটি বাস বিদ্যালয় থেকে ছেড়ে যাবে নরসিংদীর সেই পার্কের উদ্দেশ্যে।
সাধারণত শিক্ষার্থীদের এই ধরনের শিক্ষা সফরের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিপ্তরের সরকারি বেসরকারি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন প্রকার সরকারি বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয় না। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও বিনোদনে উৎসাহী ও উজ্জীবিত করতে বিদ্যালয়গুলোর পরিচালনা কমিটি এবং প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকেরা অভিভাবকদের সাথে পরামর্শ করে নিজেরাও আর্থিক সহায়তা দিয়ে এই ধরনের একদিনের বা একাধিক দিনের শিক্ষা সফরের আয়োজন করে থাকেন।
কিন্তু সরকার শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দেওয়া থেকে শুরু করে মাধ্যমিক স্তরে অবৈতনিক শিক্ষা, নানান মেধাবৃত্তি, দরিদ্রদের জন্য আর্থিক সহায়তাসহ নানাভাবে ভর্তুকি দিয়ে থাকেন। সেখানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই জনপ্রতি মোটা অংকের টাকার চাঁদা ধরে সেই টাকায় শিক্ষা সফরের আয়োজন করা হয়ে থাকে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা চাঁদা দেন ও বিদ্যালয়ের শোভাকাংক্ষীরাও শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফর সফল করার জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়ে পাশে দাঁড়ান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এবারের শিক্ষা সফরের জন্য দশম শ্রেণির দিবা ও প্রভাতী শিফটের চারটি সেকশনের ২৪০ জন ছাত্রীর মধ্যে শিক্ষা সফরে যাচ্ছে ১২০ জন। জনপ্রতি চাঁদা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮০০ টাকা। যা দিয়ে বাজারে ২৫ কেজি বস্তার এক বস্তা চাল কেনা যায়। এই শিক্ষা সফর থেকে এবার ২৪০ জন ছাত্রীর মধ্যে ১২০ জন ছাত্রী বাদ পড়ছে। একই শ্রেণির ১২০ জন ছাত্রীকে বাদ দিয়ে শিক্ষা সফরের আয়োজন করা হচ্ছে। জনপ্রতি ১ হাজার ৮০০ টাকা হিসেবে ১২০ জন ছাত্রীর কাছ থেকে চাঁদা তোলা হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা।
এছাড়াও ছাত্রীদের এই শিক্ষা সফরের গাইড হিসাবে প্রধান শিক্ষকসহ প্রভাতী ও দিবা শিফটের ৫০ জন শিক্ষকও যাচ্ছেন শিক্ষা সফরে। কিন্তু শিক্ষকেরা যাচ্ছেন বিনা চাঁদায়। শিক্ষকদের জনপ্রতি চাঁদা ছাত্রীদের চাইতে যেখানে আরও বেশি দেওয়া দরকার ছিল। সেখানে সরকারি বেতনভুক্ত প্রধান শিক্ষকসহ ৫০ জন শিক্ষক ১ টাকা করেও চাঁদা দেননি বলে অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ছাত্রীদের শিক্ষা সফরের জন্য শিক্ষকেরা ১ টাকাও চাঁদা বা আর্থিক সহায়তা না করার বিষয়টি নিশ্চিত করে জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান ১৬ ফেব্রুয়ারি রবিবার বিকালে এ প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি দশম শ্রেণির প্রভাতী ও দিবা শিফটের সকল শিক্ষকদের সাথে কথা বলেছি। শিক্ষকদের একজনও ছাত্রীদের টাকায় এই শিক্ষা সফরে যেতে পারবেন না। এটা কোন অবস্থাতেই করা যাবে না। এজন্য দুই শিফটের ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষক যাতে যান সেই পরামর্শ দিয়েছি। যারাই যাবেন তাদের সবাইকে চাঁদা দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে। তিনি বিষয়টি সকল শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে রাতের মধ্যেই ঠিক করবেন বলে জানান। এই ধরনের শিক্ষা সফরের জন্য সরকারি কোন বাজেট বরাদ্দ নেই বলেও জানান তিনি।