ঢাকা ০৮:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ: রোদে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অতিথিবরণ

হারুন শেখ, বাগেরহাট প্রতিনিধি::

ছবি: চেকপোস্ট

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার একমাত্র সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চরম অমানবিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা রোদে দাঁড়িয়ে থেকে অতিথিবরণ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।

চিতলমারী সরকারি সামছুন্নেছা মেমোরিয়াল মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই দিনব্যাপী বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে ঘটে এই ঘটনা। প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সকাল ৯টায় অনুষ্ঠানের সূচি নির্ধারিত থাকলেও প্রধান অতিথিরা পৌঁছাতে দেরি করায় শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সময় রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

সকাল ৮টার মধ্যেই শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এসে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে অতিথিরা উপস্থিত না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করা হয়। এ সময় অনেক শিক্ষার্থী দুর্বল হয়ে মাটিতে বসে পড়ে, কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে। ক্ষুধা ও ক্লান্তিতে অনেক শিক্ষার্থী প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে।

একজন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “শুনেছি আমাদের স্কুলের সভাপতি ইউএনও স্যার। তিনিই যদি সময়মতো না আসেন, তাহলে আমাদের কী শেখার আছে?

অন্য এক শিক্ষার্থী বলে, “সকাল ৮টার দিকে এসে শুধু চা-বিস্কুট খেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এখন ১১টা বেজে গেছে, কিন্তু অতিথিরা আসেননি। প্রচণ্ড ক্ষুধায় পেটে ব্যথা করছে, এটি একপ্রকার অত্যাচার।”

এই অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস পাল এবং বাংলাদেশ ওলামা লীগের চিতলমারী উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ইদ্রিসুর রহমান একসঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বিতর্ক দেখা দেয়। অনেক গুণীজন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজনের অভিযোগও ওঠে।

বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক রমেন্দ্রনাথ মল্লিক জানান, “বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণ, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, কোচিং বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম চলে আসছে। প্রতিবাদ করলে শিক্ষার্থীদের লেলিয়ে দেওয়া হয়।”

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার খান বলেন, “শিক্ষার্থীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিল, এটি জানা নেই। কেউ অসুস্থতার কথা আমাকে জানায়নি।”

এ বিষয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস পাল বলেন, “আমি বিষয়টি জানতাম না, তবে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

চিতলমারী সরকারি সামছুন্নেছা মেমোরিয়াল মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি এমন অমানবিক আচরণ এবং অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০১:১৫:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
৫২৯ বার পড়া হয়েছে

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ: রোদে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অতিথিবরণ

আপডেট সময় ০১:১৫:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার একমাত্র সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চরম অমানবিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা রোদে দাঁড়িয়ে থেকে অতিথিবরণ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।

চিতলমারী সরকারি সামছুন্নেছা মেমোরিয়াল মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই দিনব্যাপী বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে ঘটে এই ঘটনা। প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সকাল ৯টায় অনুষ্ঠানের সূচি নির্ধারিত থাকলেও প্রধান অতিথিরা পৌঁছাতে দেরি করায় শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সময় রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

সকাল ৮টার মধ্যেই শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এসে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে অতিথিরা উপস্থিত না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করা হয়। এ সময় অনেক শিক্ষার্থী দুর্বল হয়ে মাটিতে বসে পড়ে, কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে। ক্ষুধা ও ক্লান্তিতে অনেক শিক্ষার্থী প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে।

একজন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “শুনেছি আমাদের স্কুলের সভাপতি ইউএনও স্যার। তিনিই যদি সময়মতো না আসেন, তাহলে আমাদের কী শেখার আছে?

অন্য এক শিক্ষার্থী বলে, “সকাল ৮টার দিকে এসে শুধু চা-বিস্কুট খেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এখন ১১টা বেজে গেছে, কিন্তু অতিথিরা আসেননি। প্রচণ্ড ক্ষুধায় পেটে ব্যথা করছে, এটি একপ্রকার অত্যাচার।”

এই অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস পাল এবং বাংলাদেশ ওলামা লীগের চিতলমারী উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ইদ্রিসুর রহমান একসঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বিতর্ক দেখা দেয়। অনেক গুণীজন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজনের অভিযোগও ওঠে।

বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক রমেন্দ্রনাথ মল্লিক জানান, “বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণ, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, কোচিং বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম চলে আসছে। প্রতিবাদ করলে শিক্ষার্থীদের লেলিয়ে দেওয়া হয়।”

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার খান বলেন, “শিক্ষার্থীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিল, এটি জানা নেই। কেউ অসুস্থতার কথা আমাকে জানায়নি।”

এ বিষয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস পাল বলেন, “আমি বিষয়টি জানতাম না, তবে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

চিতলমারী সরকারি সামছুন্নেছা মেমোরিয়াল মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি এমন অমানবিক আচরণ এবং অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।