ঢাকা ০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোবাইলে বন্দি সমাজের প্রাকৃতিক আনন্দ

শহীদুল ইসলাম শরীফ::

বাংলাদেশ, একটি নদীমাতৃক দেশ, যেখানে খাল, বিল, নদী, নালা, হাওর-বাওর প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে দীর্ঘকাল ধরে মানুষের জীবন-যাত্রার অংশ হয়ে এসেছে। এসব জলাশয়ের নানা প্রাকৃতিক উপাদান, যেমন শামুক, ঝিনুক, শাপলা, শালুক, সিঙ্গারা সহ আরও অসংখ্য অচাষকৃত খাদ্য উদ্ভিদ, এক কথায় বলতে গেলে, নিরাপদ খাদ্যের বিশাল ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করেছে। এসব জলাশয়ে বর্ষাকালে বৈচিত্র্যময় মাছের প্রজনন ঘটে, এবং পুরনো সময়ে গ্রাম বাংলায় মাছ ধরার নানা উৎসব আয়োজন করা হত।

বর্ষার পর, যখন পানি শুকিয়ে যায়, তখন খাল-বিল ও অন্যান্য জলাশয়গুলোতে হাঁটু বা কোমর পর্যন্ত পানি নেমে আসে। তখন, বিশেষ করে গ্রামীণ সমাজে মাছ ধরার নানা উৎসব চলে। এর মধ্যে হাঁটু পানিতে মাছ ধরার, বড়শি ঝাঁকি, জাল টানা, বেড় জাল দিয়ে মাছ ধরা অন্যতম ছিল। বিশেষত, পলো দিয়ে মাছ ধরার ঐতিহ্য ছিল এক বিশেষ ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান। পলো শিকারিরা একসাথে সারিবদ্ধভাবে পলো ফেলতে ফেলতে মাছ ধরার কাজ করতেন।

তবে আজকাল, নাব্যতা হারিয়ে খাল-বিল সংকুচিত হয়ে গেছে, অনেক জায়গায় খালের অস্তিত্বও বিলীন হয়ে গেছে। ফলে, মাছ ধরার এসব ঐতিহ্য ও উৎসব কমে গেছে। উন্নত প্রযুক্তির কারণে, বর্তমানে ছেলেরা মোবাইলের দিকে বেশি ঝুঁকেছে, যার ফলে আগের মতো প্রকৃতির সঙ্গে মেলামেশা ও সামাজিক আনন্দ ভাগাভাগি করার পরিবেশ এখন আর পাওয়া যায় না।

এছাড়া, অনেক অঞ্চলে এখন আর পর্যাপ্ত পানি না থাকায়, বিশেষ করে বর্ষাকালে মাছ ধরার পরিবেশ সৃষ্টির পরিস্থিতিও নেই। এক সময়ে যেসব চিত্র ছিল—গ্রাম বাংলায় সকলেই একত্রিত হয়ে মাছ ধরার আনন্দ উপভোগ করত, তা এখন অনেকটাই মোবাইল বা প্রযুক্তির দ্বারা বন্দি হয়ে গেছে। তবে এখনো কিছু অঞ্চলে এই ঐতিহ্য রয়ে গেছে, যেখানে মানুষ একত্রিত হয়ে মাছ ধরার উৎসব পালন করে।

এমন এক সময় ছিল, যখন সামাজিক বন্ধন মজবুত ছিল, সবাই একে অপরকে সাহায্য করে এবং একসাথে আনন্দ উপভোগ করত। এখন সেই দিনগুলি অনেকটাই হারিয়ে গেছে, এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জীবনযাত্রা প্রভাবিত হয়ে পড়েছে।

এখন আর সেই পুরানো দৃশ্য দেখা যায় না, যেখানে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ একত্রিত হয়ে মাছ ধরার আনন্দে মেতে উঠত। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির উন্নতি এবং সামাজিক পরিবর্তনের ফলে সেই ঐতিহ্য অনেকটাই হারিয়ে গেছে। আগে যেখানে খাল, বিল, হাওর কিংবা নদীতে সকলে মিলে মাছ ধরার উৎসব উদযাপন করত, এখন সেসব ঐতিহ্য আর আগের মতো চোখে পড়ে না।

এছাড়া, যেহেতু বর্তমানে অধিকাংশ তরুণেরা মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য প্রযুক্তির প্রতি বেশি আকৃষ্ট, ফলে তাদের হাতে মাছ ধরা বা প্রাকৃতিক আনন্দ উপভোগের সুযোগ কমে গেছে। বর্ষাকালে পর্যাপ্ত পানি না থাকার কারণে অনেক অঞ্চলে মাছ ধরার পরিবেশও অবশিষ্ট নেই। বিশেষ করে নব্বইয়ের দশকের শৈশব যারা অতিবাহিত করেছেন, তাদের কাছে সেই সময়ের সামাজিক বন্ধন ও একসাথে আনন্দ উপভোগ করার মুহূর্তগুলি এখন স্মৃতি হয়ে রয়েছে।

সামাজিক বন্ধন তখন এতই দৃঢ় ছিল যে, পুরো পাড়া বা মহল্লার সবাই এক পরিবারের সদস্য হয়ে উঠত। আর সেই বন্ধনে একে অপরকে সহায়তা করে এবং আনন্দ ভাগ করে নিত। আজকাল যদিও প্রযুক্তি ও ব্যক্তিগত জীবনের পরিবর্তনের কারণে সেসব দৃশ্য বিরল হয়ে গেছে, তবে কিছু কিছু অঞ্চলে এখনও পুরানো ঐতিহ্য বজায় রয়েছে, যেখানে মানুষ একত্রিত হয়ে ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানগুলো উদযাপন করে।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০২:১১:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫
৫৩১ বার পড়া হয়েছে

মোবাইলে বন্দি সমাজের প্রাকৃতিক আনন্দ

আপডেট সময় ০২:১১:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশ, একটি নদীমাতৃক দেশ, যেখানে খাল, বিল, নদী, নালা, হাওর-বাওর প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে দীর্ঘকাল ধরে মানুষের জীবন-যাত্রার অংশ হয়ে এসেছে। এসব জলাশয়ের নানা প্রাকৃতিক উপাদান, যেমন শামুক, ঝিনুক, শাপলা, শালুক, সিঙ্গারা সহ আরও অসংখ্য অচাষকৃত খাদ্য উদ্ভিদ, এক কথায় বলতে গেলে, নিরাপদ খাদ্যের বিশাল ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করেছে। এসব জলাশয়ে বর্ষাকালে বৈচিত্র্যময় মাছের প্রজনন ঘটে, এবং পুরনো সময়ে গ্রাম বাংলায় মাছ ধরার নানা উৎসব আয়োজন করা হত।

বর্ষার পর, যখন পানি শুকিয়ে যায়, তখন খাল-বিল ও অন্যান্য জলাশয়গুলোতে হাঁটু বা কোমর পর্যন্ত পানি নেমে আসে। তখন, বিশেষ করে গ্রামীণ সমাজে মাছ ধরার নানা উৎসব চলে। এর মধ্যে হাঁটু পানিতে মাছ ধরার, বড়শি ঝাঁকি, জাল টানা, বেড় জাল দিয়ে মাছ ধরা অন্যতম ছিল। বিশেষত, পলো দিয়ে মাছ ধরার ঐতিহ্য ছিল এক বিশেষ ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান। পলো শিকারিরা একসাথে সারিবদ্ধভাবে পলো ফেলতে ফেলতে মাছ ধরার কাজ করতেন।

তবে আজকাল, নাব্যতা হারিয়ে খাল-বিল সংকুচিত হয়ে গেছে, অনেক জায়গায় খালের অস্তিত্বও বিলীন হয়ে গেছে। ফলে, মাছ ধরার এসব ঐতিহ্য ও উৎসব কমে গেছে। উন্নত প্রযুক্তির কারণে, বর্তমানে ছেলেরা মোবাইলের দিকে বেশি ঝুঁকেছে, যার ফলে আগের মতো প্রকৃতির সঙ্গে মেলামেশা ও সামাজিক আনন্দ ভাগাভাগি করার পরিবেশ এখন আর পাওয়া যায় না।

এছাড়া, অনেক অঞ্চলে এখন আর পর্যাপ্ত পানি না থাকায়, বিশেষ করে বর্ষাকালে মাছ ধরার পরিবেশ সৃষ্টির পরিস্থিতিও নেই। এক সময়ে যেসব চিত্র ছিল—গ্রাম বাংলায় সকলেই একত্রিত হয়ে মাছ ধরার আনন্দ উপভোগ করত, তা এখন অনেকটাই মোবাইল বা প্রযুক্তির দ্বারা বন্দি হয়ে গেছে। তবে এখনো কিছু অঞ্চলে এই ঐতিহ্য রয়ে গেছে, যেখানে মানুষ একত্রিত হয়ে মাছ ধরার উৎসব পালন করে।

এমন এক সময় ছিল, যখন সামাজিক বন্ধন মজবুত ছিল, সবাই একে অপরকে সাহায্য করে এবং একসাথে আনন্দ উপভোগ করত। এখন সেই দিনগুলি অনেকটাই হারিয়ে গেছে, এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জীবনযাত্রা প্রভাবিত হয়ে পড়েছে।

এখন আর সেই পুরানো দৃশ্য দেখা যায় না, যেখানে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ একত্রিত হয়ে মাছ ধরার আনন্দে মেতে উঠত। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির উন্নতি এবং সামাজিক পরিবর্তনের ফলে সেই ঐতিহ্য অনেকটাই হারিয়ে গেছে। আগে যেখানে খাল, বিল, হাওর কিংবা নদীতে সকলে মিলে মাছ ধরার উৎসব উদযাপন করত, এখন সেসব ঐতিহ্য আর আগের মতো চোখে পড়ে না।

এছাড়া, যেহেতু বর্তমানে অধিকাংশ তরুণেরা মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য প্রযুক্তির প্রতি বেশি আকৃষ্ট, ফলে তাদের হাতে মাছ ধরা বা প্রাকৃতিক আনন্দ উপভোগের সুযোগ কমে গেছে। বর্ষাকালে পর্যাপ্ত পানি না থাকার কারণে অনেক অঞ্চলে মাছ ধরার পরিবেশও অবশিষ্ট নেই। বিশেষ করে নব্বইয়ের দশকের শৈশব যারা অতিবাহিত করেছেন, তাদের কাছে সেই সময়ের সামাজিক বন্ধন ও একসাথে আনন্দ উপভোগ করার মুহূর্তগুলি এখন স্মৃতি হয়ে রয়েছে।

সামাজিক বন্ধন তখন এতই দৃঢ় ছিল যে, পুরো পাড়া বা মহল্লার সবাই এক পরিবারের সদস্য হয়ে উঠত। আর সেই বন্ধনে একে অপরকে সহায়তা করে এবং আনন্দ ভাগ করে নিত। আজকাল যদিও প্রযুক্তি ও ব্যক্তিগত জীবনের পরিবর্তনের কারণে সেসব দৃশ্য বিরল হয়ে গেছে, তবে কিছু কিছু অঞ্চলে এখনও পুরানো ঐতিহ্য বজায় রয়েছে, যেখানে মানুষ একত্রিত হয়ে ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানগুলো উদযাপন করে।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/checkpostcom/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464