মালদ্বীপ হয়ে পোশাক রফতানিতে কেজিপ্রতি ১ ডলার সাশ্রয়
কলকাতার বিমানবন্দরের পরিবর্তে মালদ্বীপের বিমানবন্দর ব্যবহার করে পোশাক রফতানির কারণে দেশের রফতানিকারকরা প্রতি কেজি পণ্য রফতানিতে অন্তত এক ডলার সাশ্রয় করতে পারছে। দেশের রফতানি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশ বা ভারতের বিমান পরিবহন ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে মালদ্বীপকে সহজ ও সস্তা পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে রফতানি যেমন সহজ হয়েছে তেমনি সাশ্রয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা ডলার।
পোশাক রফতানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতের কলকাতা অনেক কাছে। কিন্তু পরিবহন খরচ বেশি। আর ঢাকা থেকে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের দূরত্ব প্রায় দুই হাজার ৮০০ কিলোমিটার। মালদ্বীপের বিমানবন্দর ব্যবহার করে আকাশপথে পণ্য পরিবহনের ফলে ইউরোপের দেশগুলোতে প্রতি কেজি পণ্য পাঠাতে প্রায় এক ডলার পর্যন্ত সাশ্রয় হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঢাকা থেকে প্রচলিত রুটের বিমানবন্দর কলকাতা, কলম্বো বা সিঙ্গাপুর দিয়ে পণ্য পাঠানোয় একদিকে খরচ যেমন বেশি হচ্ছে অপরদিকে সময়ও বেশি লাগছে। এতে খরচ এবং সময় বাঁচানোর জন্য তারা মালদ্বীপের বিমানবন্দর ব্যবহার করতে এখন বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তৈরী পোশাক শিল্প সঙ্কটে পড়ায় রফতানি শিল্পে ব্যাপকভাবে প্রভাব পড়ে। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে রফতানি বাণিজ্যও বাড়ে। এ সময় বায়ারের চাহিদা পূরণের জন্য বিমানপথে ঢাকা থেকে প্রতি কেজি পণ্য পাঠাতে খরচ হয় ছয় ডলার ৩০ সেন্ট থেকে সাড়ে ছয় ডলার পর্যন্ত। বর্তমানে মালদ্বীপের বিমানবন্দর ব্যবহারের কারণে ইউরোপে পণ্য পাঠাতে কেজিতে খরচ হচ্ছে তিন ডলার ৮০ সেন্ট থেকে চার ডলার ১০ সেন্ট।
বিজিএমইএর সাবেক এক সভাপতি গতকাল বলেন, ভারতের বিমানবন্দর ও নৌবন্দর দিয়ে তৈরী পোশাক রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ। এর পরিবর্তে এখন মালদ্বীপের মাধ্যমে গার্মেন্টপণ্য বিশ্বব্যাপী পৌঁছানো হচ্ছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ পোশাক রফতানিকারক দেশের এই পদক্ষেপে ভারতের বন্দরগুলো বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে। তিনি বলেন, আগে বাংলাদেশের পণ্য ভারতীয় বিমানবন্দরের মাধ্যমে পরিবহন হতো। কিন্তু এখন তারা অন্যান্য রুটে পণ্য পরিবহন করছেন। এর অর্থ, আগে এসব পণ্যের কার্গো থেকে ভারত যে রাজস্ব পেত সেটি এখন পাচ্ছে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের মাধ্যমে পোশাক রফতানি করায় দেশটির সরকার ট্রানজিট ফি ও বন্দরের শুল্কবাবদ বিপুল আয় করত। পণ্য পরিবহনের ব্যবসাও হতো লাভবান। সেই আয়ে এখন ভাটা পড়বে বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) কর্মকর্তারা বলছেন, অন্যান্য রুটে পণ্য পাঠানোর খরচ বেশি হওয়ায় মালদ্বীপের রুটটি সামনে চলে আসে। দেশে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসে। কারখানাগুলো আবার চালু হলে পণ্য জাহাজীকরণের চাহিদা বেড়ে যায়। ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ড্রাই কার্গো শিপমেন্টের চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে ৮০০-৯০০ টনে দাঁড়ায়, যা আগে ছিল ৪০০-৪৫০ টন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় বন্দরসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রফতানিকারকরা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য পাঠাতে পারেননি। পণ্য রফতানিতে বেঁধে দেয়া সময়সীমা পূরণে মরিয়া হয়ে ওঠায় জাহাজীকরণ সঙ্কট দ্রুত দূর করতে ব্যবস্থা নিতে হয়।
এদিকে পরিচালন খরচ, শুল্ক ও ঝুঁকির কারণে ঢাকার বিমানবন্দর রফতানিকারকদের জন্য ব্যয়বহুল। সেখানে স্ক্যানিং মেশিন ও বিস্ফোরক শনাক্তকরণ ব্যবস্থার (ইডিএস) মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। এ ছাড়াও পণ্য পরিবহনে ঢাকার সাথে যোগাযোগকারী পর্যাপ্ত সংখ্যক এয়ারলাইন্স নেই। এজন্য বিকল্প হিসেবে মালদ্বীপকে ব্যবহার করা হচ্ছে।