মাধবপুরে সুমাইয়া হত্যা মামলায় চাচা রেনু মিয়ার দুই দিনের রিমান্ড
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া চাচা রেনু মিয়াকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। ১৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আশীষ কুমার রেনু মিয়াকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শফি উল্লাহ দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আদেশ দেন।
জানাযায়, গত ১৬ জুন সন্ধ্যায় মাধবপুর উপজেলার এক্তিয়ারপুর গ্রামে এ মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ঘটে। বাড়ির পাশের পুকুর সংলগ্ন খালে ধারালো অস্ত্র দিয়ে সুমাইয়াকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে ফেলে রেখে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক দ্রুত ঢাকায় স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। কিন্তু ঢাকায় নেওয়ার পথে নরসিংদীতে পৌঁছানোর আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সুমাইয়া।
নিহত সুমাইয়া এক্তিয়ারপুর গ্রামের বেনু মিয়ার মেয়ে এবং এক্তিয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে মাধবপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় একই গ্রামের আশিক মিয়াসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
প্রথমদিকে আশিক মিয়াকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে র্যাব গ্রেপ্তার করলেও একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে পরিস্থিতির মোড় ঘুরে যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, আহত অবস্থায় সুমাইয়াকে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলে, “আমাকে মেরেছে রেনু, আমার চাচা।” হত্যার কারণ জানতে চাইলে সুমাইয়া বলে, “আমি জানি না। সে কয়েল কিনে দিয়ে আমাকে বাড়িতে পাঠায়। কয়েল নিয়ে আসার পথে আমাকে কুপিয়ে রেখে চলে যায়।”
ভিডিও প্রকাশের পর গ্রামজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নিহতের সহপাঠী ও গ্রামবাসীরা প্রতিবাদে এক্তিয়ারপুর স্কুল মাঠে মানববন্ধন করে প্রকৃত হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। তাদের অভিযোগ, প্রথমদিকে প্রকৃত অপরাধীকে আড়াল করা হচ্ছিল।
ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন রেনু মিয়া। অবশেষে গত সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে র্যাব চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানার ভাটারিয়ায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হলে তদন্ত কর্মকর্তা জানান, হত্যাকাণ্ডে একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে। মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী কে তা খুঁজে বের করার জন্য রেনু মিয়ার রিমান্ড প্রয়োজন। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আশীষ কুমার বলেন, “আসামিদের মধ্যে কেউ একজন অবশ্যই মূল হত্যাকারী। তবে নিশ্চিতভাবে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্ত চলছে। রেনু মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত রহস্য বের হয়ে আসবে।”
অন্যদিকে, র্যাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, রেনু মিয়াই মূল হত্যাকারী। তবে পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তার মতে, এটি কেবল র্যাবের দাবি, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না।
নিহতের সহপাঠী, শিক্ষক ও গ্রামবাসীরা সুমাইয়ার হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, ভিডিওতে সুমাইয়ার বক্তব্যই প্রমাণ করে আসল অপরাধী রেনু মিয়া। তাই তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যার প্রকৃত কারণ ও অন্যদের সংশ্লিষ্টতাও বেরিয়ে আসবে।










