ঢাকা ১১:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাগেরহাটের কৃতি সন্তান ড. মোঃ ফরিদুল ইসলাম বাবলুর পদোন্নতিতে ঘুচল ১৯ বছরের বঞ্চনা

হারুন শেখ, বাগেরহাট প্রতিনিধি::

বাগেরহাটের সন্তান ড. মো. ফরিদুল ইসলাম বাবলু দীর্ঘ ১৯ বছর পর সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে বঞ্চনার অবসান ঘটিয়েছেন। সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পরও দীর্ঘদিন পদোন্নতি বঞ্চিত থাকার পর অবশেষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক ‘ভূতাপেক্ষ’ পদোন্নতির তালিকায় উঠে আসে তার নাম।

২০০৭-০৮ সালে ১/১১ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সময় ভুয়া অভিযোগের মুখে পড়েন ফরিদুল ইসলাম। তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি। এরপরও একাধিকবার তদন্তের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত চলার পর লিখিতভাবে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও তার পদোন্নতি আটকে থাকে বছরের পর বছর।

সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে ‘ভূতাপেক্ষ’ পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১১৯ জন সচিব পদে উন্নীত হন, যাদের মধ্যে ১৬ থেকে ১৯ বছর ধরে পদোন্নতির অপেক্ষায় থাকা কর্মকর্তারা ছিলেন। ফরিদুল ইসলাম তাদেরই একজন।

ফরিদুল ইসলাম শুধু প্রশাসনিক দায়িত্বে নয়, সমাজসেবায়ও নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তার বাবা লতিফ মাস্টারের নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘লতিফ মাস্টার ফাউন্ডেশন’। নিজের ও পরিবারের পৈতৃক সম্পত্তি তিনি এই ফাউন্ডেশনের জন্য দান করেছেন। তার নেতৃত্বে ফাউন্ডেশনটি মানবিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বাগেরহাটের বেশরগাতী গ্রামে অবস্থিত এই ফাউন্ডেশনে রয়েছে এতিম ও বৃদ্ধদের জন্য আধুনিক নিবাস, বেকারদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, প্রবীণদের জন্য থেরাপি সেন্টার, বিশাল মসজিদ, খেলার মাঠ, বিনামূল্যে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং উন্নত বিপণন ব্যবস্থার ব্যবস্থা। এছাড়া স্থানীয় জনগণের জন্য পানির সংকট সমাধানে একটি ওয়াটার প্ল্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে।

ছেলেবেলা থেকেই মেধাবী ফরিদুল ইসলাম মাস্টার্সের ইন্টারভিউ দিতে গিয়েই জানতে পারেন যে তিনি ১১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এরপরও উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারাননি।

তিনি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার এসি ল্যান্ড থাকাকালীন এলএলবি প্রথম পর্ব পাস করেন এবং পরে ঢাকা ডিসি অফিসে যোগদান করে মিরপুর ল-কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাবলিক পলিসিতে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। লন্ডন ইউনিভার্সিটিতে পাবলিক পলিসিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন।

পরবর্তীতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীনে পিএইচডি স্কলারশিপ পেলেও চাকরির অনুমতি না পাওয়ায় যেতে পারেননি। তবে তিনি হাল ছাড়েননি। লিয়েন নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ বিষয়ে পিএইচডি শুরু করেন। ১/১১-র সময়কার নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও গবেষণা চালিয়ে যান এবং পরে American Independent University, Los Angeles থেকে Public Administration-এ পিএইচডি সম্পন্ন করেন।

ফরিদুল ইসলাম বলেন, “জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মনে হয়, যদি কেউ নিজের স্বপ্নে অটুট থাকে এবং সৎভাবে তার লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে থাকে, তবে কোনো কিছুই তাকে দমিয়ে রাখতে পারে না। একসময় রাষ্ট্রযন্ত্র আমাকে আটকাতে চেয়েছিল, কিন্তু দিনশেষে সততা ও নীতির কাছে সব বাধা পরাজিত হয়েছে।”

তিনি বলেন, আমার বাবার কাছ থেকে আমি শিখেছি, নিজের নামে সম্পদ গড়ার লোভ যেন না আসে। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করাই আমার লক্ষ্য। এটাই আমার জীবনের শান্তি।

 

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৮:২৫:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
৫৫২ বার পড়া হয়েছে

বাগেরহাটের কৃতি সন্তান ড. মোঃ ফরিদুল ইসলাম বাবলুর পদোন্নতিতে ঘুচল ১৯ বছরের বঞ্চনা

আপডেট সময় ০৮:২৫:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বাগেরহাটের সন্তান ড. মো. ফরিদুল ইসলাম বাবলু দীর্ঘ ১৯ বছর পর সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে বঞ্চনার অবসান ঘটিয়েছেন। সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পরও দীর্ঘদিন পদোন্নতি বঞ্চিত থাকার পর অবশেষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক ‘ভূতাপেক্ষ’ পদোন্নতির তালিকায় উঠে আসে তার নাম।

২০০৭-০৮ সালে ১/১১ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সময় ভুয়া অভিযোগের মুখে পড়েন ফরিদুল ইসলাম। তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি। এরপরও একাধিকবার তদন্তের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত চলার পর লিখিতভাবে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও তার পদোন্নতি আটকে থাকে বছরের পর বছর।

সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে ‘ভূতাপেক্ষ’ পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১১৯ জন সচিব পদে উন্নীত হন, যাদের মধ্যে ১৬ থেকে ১৯ বছর ধরে পদোন্নতির অপেক্ষায় থাকা কর্মকর্তারা ছিলেন। ফরিদুল ইসলাম তাদেরই একজন।

ফরিদুল ইসলাম শুধু প্রশাসনিক দায়িত্বে নয়, সমাজসেবায়ও নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তার বাবা লতিফ মাস্টারের নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘লতিফ মাস্টার ফাউন্ডেশন’। নিজের ও পরিবারের পৈতৃক সম্পত্তি তিনি এই ফাউন্ডেশনের জন্য দান করেছেন। তার নেতৃত্বে ফাউন্ডেশনটি মানবিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বাগেরহাটের বেশরগাতী গ্রামে অবস্থিত এই ফাউন্ডেশনে রয়েছে এতিম ও বৃদ্ধদের জন্য আধুনিক নিবাস, বেকারদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, প্রবীণদের জন্য থেরাপি সেন্টার, বিশাল মসজিদ, খেলার মাঠ, বিনামূল্যে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং উন্নত বিপণন ব্যবস্থার ব্যবস্থা। এছাড়া স্থানীয় জনগণের জন্য পানির সংকট সমাধানে একটি ওয়াটার প্ল্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে।

ছেলেবেলা থেকেই মেধাবী ফরিদুল ইসলাম মাস্টার্সের ইন্টারভিউ দিতে গিয়েই জানতে পারেন যে তিনি ১১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এরপরও উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারাননি।

তিনি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার এসি ল্যান্ড থাকাকালীন এলএলবি প্রথম পর্ব পাস করেন এবং পরে ঢাকা ডিসি অফিসে যোগদান করে মিরপুর ল-কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাবলিক পলিসিতে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। লন্ডন ইউনিভার্সিটিতে পাবলিক পলিসিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন।

পরবর্তীতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীনে পিএইচডি স্কলারশিপ পেলেও চাকরির অনুমতি না পাওয়ায় যেতে পারেননি। তবে তিনি হাল ছাড়েননি। লিয়েন নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ বিষয়ে পিএইচডি শুরু করেন। ১/১১-র সময়কার নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও গবেষণা চালিয়ে যান এবং পরে American Independent University, Los Angeles থেকে Public Administration-এ পিএইচডি সম্পন্ন করেন।

ফরিদুল ইসলাম বলেন, “জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মনে হয়, যদি কেউ নিজের স্বপ্নে অটুট থাকে এবং সৎভাবে তার লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে থাকে, তবে কোনো কিছুই তাকে দমিয়ে রাখতে পারে না। একসময় রাষ্ট্রযন্ত্র আমাকে আটকাতে চেয়েছিল, কিন্তু দিনশেষে সততা ও নীতির কাছে সব বাধা পরাজিত হয়েছে।”

তিনি বলেন, আমার বাবার কাছ থেকে আমি শিখেছি, নিজের নামে সম্পদ গড়ার লোভ যেন না আসে। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করাই আমার লক্ষ্য। এটাই আমার জীবনের শান্তি।

 


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/checkpostcom/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464