এই শীতে কাজের অভাবে দিনমজুররা যেমন ভুগছেন, তেমনি তাদের জীবনের প্রতিটি দিন কঠিন হয়ে উঠছে। আজান দেওয়ার সময় ভোরে কাজের খোঁজে বাড়ি থেকে বের হন কাজেম আলী (৪৫)। তিনি পুঠিয়া উপজেলার জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা, আর প্রতিদিন ২০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে রাজশাহী নগরের তালাইমারী মোড়ে কাজের জন্য আসেন। যদিও শীতের তীব্রতা তাকে অনেকটাই অবসন্ন করে দেয়, তারপরও কাজের আশা নিয়ে তিনি শহরে আসেন।
কাজেম আলী জানান, সাত দিনে একদিন কাজ পেয়েছি, আর এই শীতে কাজ পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘‘শীত গায়ে ঢুকে যায় রাস্তায় আসতে আসতে, তবুও কাজের জন্য আসতেই হয়।
তালাইমারী এবং শহরের অন্যান্য এলাকায়, যেমন বিনোদপুর, রেলগেট, বর্ণালি মোড়, কোর্ট স্টেশন, কাকডাকা ভোরে গ্রামের দিনমজুররা শহরে কাজে আসেন। তাদের সঙ্গী একমাত্র কোদাল আর ডালি। তবে, গত কয়েক মাসে সরকার পতনের পর শহরে কাজে ভাটা পড়েছে, আর শীতে তা আরও কমে গেছে।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর গ্রামের মোতালেব আলী বলেন, গ্রামে কাজ নেই, ধান কাটাও শেষ, আলু-পেঁয়াজ লাগানোর কাজও প্রায় শেষ। শহরই এখন একমাত্র ভরসা, কিন্তু জমিজমা নেই যে চাষ করে খাব।’’ তিনি জানান, সপ্তাহে একদিন ৬০০ টাকার কাজ পান।
এই শীতে কাজ পাওয়ার সমস্যা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। মো. হাসান, মোতালেবের গ্রামবাসী, বলেন, ‘‘এত ঠান্ডায় কাজ করা কার ভালো লাগে? কাজ না পেলে আমাদের তো আর উপায় নেই, তবুও এখানে আসতে হয়।
রাজশাহী শহরের রেলগেট এলাকায় গিয়ে কিছু শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে কথা হয়। পবার পারিলা ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘ছয় দিন কাজের জন্য এসে চার দিনই ফিরে যেতে হয়েছে। বাজারে সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে, সংসার চালাতে ধারকর্জ করতে হচ্ছে।
পবা উপজেলার দামকুড়া এলাকার আবদুল জব্বার জানান, এত দূর থেকে সাইকেল চালিয়ে এসে কাজ পাই না। এই ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে আসি, কিন্তু কাজ পাওয়া যেন সোনার হরিণ হয়ে গেছে।
রাজশাহীতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, এবং শীতের তীব্রতায় শ্রমজীবী মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তাদের দিন কাটছে না কাজের অভাবে, আর সংসার চালাতে চরম অস্বস্তিতে পড়ছেন তারা।