দিনাজপুরে প্রথমবারের মতো স্মারক ডাকটিকিট প্রদর্শনী
দিনাজপুরে প্রথমবারের মতো হয়ে গেল স্মারক ডাকটিকিট প্রদর্শনী ও বিক্রয় অনুষ্ঠান। গতকাল শুক্রবার সকালে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র মিলনায়তনে দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ও বরেন্দ্র ফিলাটেলিক সোসাইটি যৌথভাবে প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
এ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দিনাজপুর ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল রশিদুল ইসলাম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এনামউল্যা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য শফিকুল ইসলাম সিকদার, বাংলাদেশ ডাক অধিদপ্তরের পরিচালক (স্ট্যাম্পস) মামুনুর রশিদ, বরেন্দ্র ফিলাটেলিক সোসাইটির সাংগঠনিক সম্পাদক উদয় শংকর বিশ্বাস, রাজশাহীর অতিরিক্ত পোস্টমাস্টার জেনারেল জিয়াউর রহমান প্রমুখ।
এ প্রদর্শনীতে আট হাজারের বেশি ডাকটিকিট, পোস্ট কার্ড, স্যুভেনির, বিশেষ খাম, উদ্বোধনী খাম বিভিন্ন বিষয়ে বিভক্ত করে প্রদর্শিত হয়। এ বিভাগগুলোর মধ্যে ছিল ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ, বাংলাদেশের ফুল, পশু-পাখি, মাছ, লোকসংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন উৎসব, পোশাক, অলিম্পিকসহ বিভিন্ন খেলাধুলা, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, সমাজসংস্কারে অবদান রাখা ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি। বিক্রির জন্য রাখা ছিল উদ্বোধনী খাম, বিশেষ খাম, বিভিন্ন স্মারক ডাকটিকিট ও পোস্টকার্ড। কৌতূহল নিয়ে এগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীরা।
ডাক বিভাগের নকশাকারক সুমন্ত কুমার জানান, ২০২১ সালে বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে বরেন্দ্র ফিলাটেলিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন কয়েকজন ডাকটিকিট সংগ্রাহক। বর্তমানে সংগঠনের সদস্য সংখ্যা অর্ধশত। এ সদস্যদের প্রত্যেকের সংগ্রহে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ডাকটিকিট রয়েছে। সেগুলো দিয়ে দেশের পাঁচটি বিভাগীয় শহরে এ ধরণের প্রদর্শনী করা হয়েছে। তিনি জানান, ‘বর্তমান প্রজন্মের মাঝে ডাকটিকিট সংগ্রহের নির্মল আনন্দকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করছি। বর্তমানে অধিকাংশ শিশু-কিশোর-যুবক মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়েছে, নেশাগ্রস্ত হয়ে জীবনকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ডাকটিকিট সংগ্রহের মাধ্যমে নির্মল আনন্দ ফিরিয়ে আনতে এটিকে একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে কাজ করছে বরেন্দ্র ফিলাটেলিক সোসাইটি।’
প্রদর্শনীতে এসেছিলেন দিনাজপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রাহিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘খুবই ভালো লাগছে। জীবনে প্রথমবার এ রকম প্রদর্শনীতে এসেছি। একটি ডাকটিকিটের মাধ্যমে একটি দেশকে চেনা যায়। কত রকমের যে ডাকটিকিট দেখলাম!’
প্রদর্শনী বিষয়ে বরেন্দ্র ফিলাটেলিক সোসাইটির সাংগঠনিক সম্পাদক উদয় শংকর বিশ্বাস বলেন, ‘ডাকটিকিট সংগ্রহ করা একটি মজার শখ এবং নেশাও বটে। আপাতদৃষ্টে একটি ডাকটিকিট একটি কাগজের টুকরো। কিন্তু একজন শিক্ষার্থী যখন ওই কাগজের টুকরোটি হাতে নেবে তখন তার মনে নানা প্রশ্ন জাগবে এবং সে জ্ঞান চর্চায় মনোনিবেশ করার প্রয়াস পাবে।’ তিনি জানান, একটি দেশের সংস্কৃতি উপস্থাপিত হয় সে দেশের ডাকটিকিটে। বাংলাদেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে জনমত যাচাইয়েও ডাকটিকিটের ভূমিকা ছিল। আমাদের সুমহান ঐতিহ্যে আগামী প্রজন্মকে জানাতে ডাকটিকিট প্রদর্শনীর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।