দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় ২০২৪ সালে ৬০টি অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা উপজেলায় গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। খানসামা থানার তথ্য অনুযায়ী, এদের মধ্যে ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৩ জন, বিষপানে ১২ জন, পানিতে ডুবে ৯ জন, বিদ্যুৎস্পর্শে ৩ জন, আগুনে পুড়ে ১ জন, এবং সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২২ জন।
গড়ে প্রতি মাসে ৫ জন অপমৃত্যুর শিকার হয়েছেন। অপমৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে,ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা: বেশিরভাগই পারিবারিক কলহ বা হতাশায় ভুগে আত্মহত্যা করেছেন, যাদের মধ্যে বিবাহিত নারীর সংখ্যা বেশি। পানিতে ডুবে মৃত্যু: অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুদের অভিভাবকদের অসতর্কতা দায়ী। বিষপানে মৃত্যু: অধিকাংশই তরুণ-তরুণী, যারা আবেগের বশে কীটনাশক পান করেছেন। সচেতন মহলের মতে, কীটনাশক নিষিদ্ধ করলে এ ধরনের মৃত্যু কমে আসবে। সড়ক দুর্ঘটনা: বেপরোয়া গতি, ট্রাফিক আইন অমান্য এবং অপ্রাপ্তবয়সী চালকের কারণে সড়কে মৃত্যু ঘটেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামসুদ্দোহা মুকুল বলেন, “অপমৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিষণ্ণতা, পারিবারিক নির্যাতন বা মানসিক চাপে মানুষ এমন সিদ্ধান্ত নেয়। সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট ও পরিবারের সচেতনতা জরুরি। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার তরুণদের ক্ষেত্রে ট্রাফিক আইন মানার পাশাপাশি পরিবার থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান সরকার বলেন, “অপমৃত্যু খুবই দুঃখজনক। এর পেছনের কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে কাউন্সেলিং, ধর্মীয় শিক্ষা এবং পরিবার থেকে সঠিক দিকনির্দেশনার ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা ও প্রচারণার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
খানসামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজমূল হক বলেন, অপমৃত্যু প্রতিরোধে সঠিক কারণ চিহ্নিত করে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। শিশু ও বৃদ্ধদের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে এবং সড়ক আইন মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
স্থানীয় সুধী সমাজ মনে করেন, বাংলাদেশে সামাজিক ঐক্য, সম্প্রীতি ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। সঠিক শিক্ষা ও দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে পারিবারিক ও সামাজিক হতাশা মোকাবিলা করতে হবে। সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা অপমৃত্যুর হার কমাতে সহায়ক হতে পারে।
অপমৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনা প্রতিরোধে প্রশাসন, স্থানীয় সমাজ এবং সচেতন মহলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এ হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে সবাই আশাবাদী।