ঢাকা ০৯:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্পের বেপরোয়া বাণিজ্যনীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা

চেকপোস্ট প্রতিবেদক::

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত ও অস্থির বাণিজ্য নীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে স্থায়ী ক্ষতির পথ তৈরি করেছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। ‘দ্য ইকোনমিস্ট’-এর এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের ঘোষিত সর্বশেষ শুল্ক নীতি বিশ্ববাজারে এক ভয়াবহ অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। যদিও সাময়িকভাবে ৯০ দিনের জন্য ওই নীতি স্থগিত করা হয়েছে, তবে ক্ষয়ক্ষতির দাগ থেকে যাচ্ছে অর্থনৈতিক কাঠামোতে।

৯ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন একপাক্ষিক শুল্ক আরোপের ঘোষণার পরপরই মার্কিন শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতন দেখা দেয়। যদিও পরবর্তীতে শুল্ক স্থগিত হওয়ার খবরে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায় বাজার, তবুও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন-এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব বাণিজ্যের প্রতি আস্থা নষ্ট করেছে।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান বাণিজ্য সংঘাত, বাজারে ভয়াবহ অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগকারীদের দ্বিধা এবং মার্কিন ভোক্তাদের ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা এখন বাস্তব রূপ নিচ্ছে। স্নায়ুযুদ্ধের আমল থেকেও শক্তিশালী বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্কগুলো এখন প্রশ্নবিদ্ধ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প যেভাবে একতরফাভাবে শুল্ক আরোপ করে, সামাজিক মাধ্যমে নীতিনির্ধারণ করেন, এবং উপদেষ্টাদেরও অন্ধকারে রাখেন-তা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নেতৃত্বের ধারণার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।

ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববাজারে মূল্যসূচক ধস নামে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক তাৎক্ষণিকভাবে ১৫ শতাংশ কমে যায়। হেজ ফান্ডগুলো লিভারেজ কমাতে বাধ্য হয়, ট্রেজারি বন্ড বিক্রি হয় ব্যাপক হারে এবং ডলারের মূল্য হ্রাস পায়।

বিশ্লেষকরা বলেন, এই ধরনের শুল্ক আরোপ আমদানি পণ্যের দাম বাড়াবে, যার ফলে সাধারণ আমেরিকানদের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে যাবে। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসা ও বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়বে।

বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো-ট্রাম্পের নীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়মাবলি, বিশেষ করে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO)-এর চেতনার পরিপন্থী। তার সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সম্মিলিত চাপ প্রয়োগের পথই ছিল যৌক্তিক কৌশল, যা ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপের (TPP) মাধ্যমে সম্ভব হতো। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই চুক্তিটি বাতিল করে সেই সম্ভাবনা নষ্ট করেন।

বর্তমানে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হার ১২৫ শতাংশে পৌঁছেছে, অন্যদিকে চীনও ৮৪ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। এই পরিস্থিতি শুধু পণ্য বাণিজ্যকেই নয়, বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিবেশকেও উত্তপ্ত করে তুলেছে।

বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীল কাঠামোর ওপর এই একতরফা আঘাত বহুদিন পর্যন্ত টিকে থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, বাজার হয়তো আপাতত স্থিতিশীল হয়েছে, কিন্তু বিনিয়োগকারীদের আস্থা এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কের যে ক্ষয় হয়েছে, তা পুনর্গঠনে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হবে।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৪:২৪:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
৫১৮ বার পড়া হয়েছে

ট্রাম্পের বেপরোয়া বাণিজ্যনীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা

আপডেট সময় ০৪:২৪:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত ও অস্থির বাণিজ্য নীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে স্থায়ী ক্ষতির পথ তৈরি করেছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। ‘দ্য ইকোনমিস্ট’-এর এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের ঘোষিত সর্বশেষ শুল্ক নীতি বিশ্ববাজারে এক ভয়াবহ অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। যদিও সাময়িকভাবে ৯০ দিনের জন্য ওই নীতি স্থগিত করা হয়েছে, তবে ক্ষয়ক্ষতির দাগ থেকে যাচ্ছে অর্থনৈতিক কাঠামোতে।

৯ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন একপাক্ষিক শুল্ক আরোপের ঘোষণার পরপরই মার্কিন শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতন দেখা দেয়। যদিও পরবর্তীতে শুল্ক স্থগিত হওয়ার খবরে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায় বাজার, তবুও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন-এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব বাণিজ্যের প্রতি আস্থা নষ্ট করেছে।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান বাণিজ্য সংঘাত, বাজারে ভয়াবহ অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগকারীদের দ্বিধা এবং মার্কিন ভোক্তাদের ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা এখন বাস্তব রূপ নিচ্ছে। স্নায়ুযুদ্ধের আমল থেকেও শক্তিশালী বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্কগুলো এখন প্রশ্নবিদ্ধ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প যেভাবে একতরফাভাবে শুল্ক আরোপ করে, সামাজিক মাধ্যমে নীতিনির্ধারণ করেন, এবং উপদেষ্টাদেরও অন্ধকারে রাখেন-তা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নেতৃত্বের ধারণার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।

ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববাজারে মূল্যসূচক ধস নামে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক তাৎক্ষণিকভাবে ১৫ শতাংশ কমে যায়। হেজ ফান্ডগুলো লিভারেজ কমাতে বাধ্য হয়, ট্রেজারি বন্ড বিক্রি হয় ব্যাপক হারে এবং ডলারের মূল্য হ্রাস পায়।

বিশ্লেষকরা বলেন, এই ধরনের শুল্ক আরোপ আমদানি পণ্যের দাম বাড়াবে, যার ফলে সাধারণ আমেরিকানদের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে যাবে। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসা ও বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়বে।

বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো-ট্রাম্পের নীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়মাবলি, বিশেষ করে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO)-এর চেতনার পরিপন্থী। তার সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সম্মিলিত চাপ প্রয়োগের পথই ছিল যৌক্তিক কৌশল, যা ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপের (TPP) মাধ্যমে সম্ভব হতো। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই চুক্তিটি বাতিল করে সেই সম্ভাবনা নষ্ট করেন।

বর্তমানে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হার ১২৫ শতাংশে পৌঁছেছে, অন্যদিকে চীনও ৮৪ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। এই পরিস্থিতি শুধু পণ্য বাণিজ্যকেই নয়, বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিবেশকেও উত্তপ্ত করে তুলেছে।

বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীল কাঠামোর ওপর এই একতরফা আঘাত বহুদিন পর্যন্ত টিকে থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, বাজার হয়তো আপাতত স্থিতিশীল হয়েছে, কিন্তু বিনিয়োগকারীদের আস্থা এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কের যে ক্ষয় হয়েছে, তা পুনর্গঠনে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হবে।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/checkpostcom/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464