ঢাকা ১০:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জয়পুরহাটের অদ্বিতীর মাত্র ২০ বৎসর বয়সেই আকাশ জয়

সুকমল চন্দ্র বর্মন, জয়পুরহাট::

ছবি: চেকপোস্ট

মাত্র ২০ বছর বয়সে আকাশ জয় করেছেন জয়পুরহাটের মেয়ে অদ্বিতী সরকার। কানাডার আকাশে পাইলট হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। জয়পুরহাট সদর উপজেলার পাথুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা অপূর্ব সরকার ও মাহবুবা সরকার দম্পতির তিন কন্যার মধ্যে অদ্বিতী বড়।

প্রাথমিক শিক্ষা জয়পুরহাট শহরের জামান মডেল প্রি-ক্যাডেট স্কুল অ্যান্ড একাডেমিতে সম্পন্ন করার পর অদ্বিতী কার্শিয়াং দার্জিলিংয়ের হিমালী বোর্ডিং ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ৫ম থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর কলকাতার জেমস একাডেমিয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ৯ম ও ১০ম শ্রেণির পাঠ শেষ করে ও লেভেল সম্পন্ন করেন। পরে ঢাকার লালমাটিয়ার লরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও এ লেভেল শেষ করেন।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে তিনি কানাডার ভ্যাঙ্কুভারের প্রিন্সিপাল এয়ার ফ্লাইং স্কুলে পাইলট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পর তিন বছর ওই প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন এবং পরে ফার্স্ট অফিসার হিসেবে বাণিজ্যিক বিমানের পাইলট হিসেবে যোগ দেন।

অদ্বিতীর জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় আসে যখন তার পিতা অপূর্ব সরকার হঠাৎ মারা যান। এ দুঃসংবাদ পাওয়ার পরও তিনি ধৈর্য হারাননি। মা ও পরিবারের উৎসাহে খণ্ডকালীন চাকরি করে বিমান চালনার প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। তিনি তার সাফল্যের জন্য পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

অদ্বিতীর মা মাহবুবা সরকার বলেন, “২০১৯ সালে যখন মেয়ে কানাডায় বিমান চালনার প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল, তখন তার স্বপ্ন দেখানো বাবা তাকে ছেড়ে চলে যান। সে সময় নানা প্রতিকূলতার মাঝেও আমি তার স্বপ্ন পূরণে পিছপা হইনি। আমি সমাজকে বলতে চাই, মেয়েরাও পারে আকাশ জয় করতে। আমার মেয়ে তার প্রমাণ।”

পরিবারের অন্য দুই মেয়েও সাফল্যের পথে এগিয়ে চলেছেন। দ্বিতীয় কন্যা অর্থি জর্জিয়ায় ডাক্তারি পড়ছেন এবং ছোট মেয়ে অর্ণী ভারতের শিলিগুড়িতে এ লেভেলের শিক্ষার্থী। ছোট বোন অর্ণী বলেন, “আমি যদি ভবিষ্যতে কাউকে অনুসরণ করতে চাই, তবে সেটি আমার বোন অদ্বিতী আপুই হবে।”

অদ্বিতীর এমন সাফল্যে গর্বিত তার গ্রামের মানুষ, শিক্ষক এবং জয়পুরহাট জেলার বাসিন্দারা। জামান মডেল স্কুল অ্যান্ড একাডেমির পরিচালক মোছাঃ গুলশান আরা জামান বলেন, “অদ্বিতী ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিল। পাশাপাশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও পারদর্শী ছিল। আমরা তার সাফল্যে গর্বিত।”

জয়পুরহাটের পাথুরিয়া গ্রামের মেয়ে অদ্বিতী সরকার আজ আন্তর্জাতিক আকাশে বিমান উড়িয়ে বাংলাদেশকে গর্বিত করছেন। তার এই সাফল্য অন্যদের জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

 

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৪:১৮:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
৫২১ বার পড়া হয়েছে

জয়পুরহাটের অদ্বিতীর মাত্র ২০ বৎসর বয়সেই আকাশ জয়

আপডেট সময় ০৪:১৮:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মাত্র ২০ বছর বয়সে আকাশ জয় করেছেন জয়পুরহাটের মেয়ে অদ্বিতী সরকার। কানাডার আকাশে পাইলট হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। জয়পুরহাট সদর উপজেলার পাথুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা অপূর্ব সরকার ও মাহবুবা সরকার দম্পতির তিন কন্যার মধ্যে অদ্বিতী বড়।

প্রাথমিক শিক্ষা জয়পুরহাট শহরের জামান মডেল প্রি-ক্যাডেট স্কুল অ্যান্ড একাডেমিতে সম্পন্ন করার পর অদ্বিতী কার্শিয়াং দার্জিলিংয়ের হিমালী বোর্ডিং ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ৫ম থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর কলকাতার জেমস একাডেমিয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ৯ম ও ১০ম শ্রেণির পাঠ শেষ করে ও লেভেল সম্পন্ন করেন। পরে ঢাকার লালমাটিয়ার লরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও এ লেভেল শেষ করেন।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে তিনি কানাডার ভ্যাঙ্কুভারের প্রিন্সিপাল এয়ার ফ্লাইং স্কুলে পাইলট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পর তিন বছর ওই প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন এবং পরে ফার্স্ট অফিসার হিসেবে বাণিজ্যিক বিমানের পাইলট হিসেবে যোগ দেন।

অদ্বিতীর জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় আসে যখন তার পিতা অপূর্ব সরকার হঠাৎ মারা যান। এ দুঃসংবাদ পাওয়ার পরও তিনি ধৈর্য হারাননি। মা ও পরিবারের উৎসাহে খণ্ডকালীন চাকরি করে বিমান চালনার প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। তিনি তার সাফল্যের জন্য পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

অদ্বিতীর মা মাহবুবা সরকার বলেন, “২০১৯ সালে যখন মেয়ে কানাডায় বিমান চালনার প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল, তখন তার স্বপ্ন দেখানো বাবা তাকে ছেড়ে চলে যান। সে সময় নানা প্রতিকূলতার মাঝেও আমি তার স্বপ্ন পূরণে পিছপা হইনি। আমি সমাজকে বলতে চাই, মেয়েরাও পারে আকাশ জয় করতে। আমার মেয়ে তার প্রমাণ।”

পরিবারের অন্য দুই মেয়েও সাফল্যের পথে এগিয়ে চলেছেন। দ্বিতীয় কন্যা অর্থি জর্জিয়ায় ডাক্তারি পড়ছেন এবং ছোট মেয়ে অর্ণী ভারতের শিলিগুড়িতে এ লেভেলের শিক্ষার্থী। ছোট বোন অর্ণী বলেন, “আমি যদি ভবিষ্যতে কাউকে অনুসরণ করতে চাই, তবে সেটি আমার বোন অদ্বিতী আপুই হবে।”

অদ্বিতীর এমন সাফল্যে গর্বিত তার গ্রামের মানুষ, শিক্ষক এবং জয়পুরহাট জেলার বাসিন্দারা। জামান মডেল স্কুল অ্যান্ড একাডেমির পরিচালক মোছাঃ গুলশান আরা জামান বলেন, “অদ্বিতী ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিল। পাশাপাশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও পারদর্শী ছিল। আমরা তার সাফল্যে গর্বিত।”

জয়পুরহাটের পাথুরিয়া গ্রামের মেয়ে অদ্বিতী সরকার আজ আন্তর্জাতিক আকাশে বিমান উড়িয়ে বাংলাদেশকে গর্বিত করছেন। তার এই সাফল্য অন্যদের জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

 


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/checkpostcom/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464