এমডির দুর্নীতি এবং অদক্ষতায় স্মরণকালের ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে জনতা ব্যাংক
গত অর্থবছরে জনতা ব্যাংক লস করেছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। যা ছিল জনতা ব্যাংকের ইতিহাসে ভয়াবহ বিপর্যয়। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, জনতা ব্যাংকের ২০২৪ সালের লোকসানের পরিমাণ ৩০৬৬ কোটি টাকা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণে ধারণা করা হচ্ছে, এই লসের পরিমাণ আগামীতে চার হাজার কোটিতে গিয়ে ঠেকতে পারে।
এই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ এমডি মজিবুর রহমানের অদক্ষতা এবং লাগামহীন দুর্নীতি ও বদলি বাণিজ্য। ঘুষের আশায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নীতি সহায়তা প্রাপ্ত গ্রাহকদের পনু : তফশিল দিতে গড়িমসি।
এদিকে, উচ্চ সুদে আমানত এনে, মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিয়ে এবং ভুল তথ্য দিয়ে নিজের ব্যক্তি ইমেজ গড়ায় সর্বশক্তি নিয়োগ করছেন মজিবুর রহমান। জনতা ব্যাংকের পয়সায় এই আমানত আনার শিশুসুলভ বিজ্ঞাপনে দেশের সবগুলো দৈনিকের পাতা এখন মজিবুরের ছবিতে ভর্তি।
ব্যাংক পাড়ায় গুঞ্জন রয়েছে, নানা সূত্রে ৪৭ কোটি টাকা ঘুষের কন্টাক্টে মজিবুর জনতা ব্যাংকের এমডি পদ হাসিল করেছেন। এই টাকা লাভসহ তোলার জন্য মুখিয়ে আছেন মজিবুর। ফলে সব রকম খাত থেকেই তিনি লাভ তুলতে মরিয়া। উদাহরণ হিসেবে, সম্প্রতি ২ কোটি ৪১ লক্ষ টাকার ওরিয়ান ফার্মার একটি প্রজেক্টের ফায়ার ইনসিওরেন্স তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ইউনিয়ন ইনসুরেন্সকে দিতে বাধ্য করেন মজিবুর। জানা গেছ, মজিবুর একাই এখান থেকে কমিশন নিয়েছেন ১ কোটি ৯ লাখ টাকা। বাকি কমিশন ৪৮ মতিঝিল শাখার দুর্নীতিগ্রস্ত ডিজিএম সোবাহান এবং এমডির আত্মীয় ভাগ করে নেন। যা সবসময়ই অপ্রদর্শিত আয় হিসেবে তাদের কুক্ষিগত হয়। জানা গেছে- অরিয়ন অনিচ্ছা সত্ত্বেও এমডির হুমকিতে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ডেভিটের চিঠি দিতে বাধ্য হয়।
এমন হাজার অনিয়ম দুর্নীতির কবলে পড়ে ব্যাহত হচ্ছে ব্যাংকের লাভজনক স্বাভাবিক কার্যক্রম। দক্ষ কর্মকর্তা কর্মচারীদের যখন তখন যেখানে সেখানে বদলি করার ফলে মুখ থুবড়ে পড়ছে জনতা ব্যাংকের অগ্রগতি। হয়রানিমূলক বদলির হাত থেকে বাঁচতে অনেকেই ঘুস দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। জানা গেছে, এই বদলি বাণিজ্য দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন যে কর্মকর্তা, তিনি আবার এমডি মজিবুরের ভায়রাভাই।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে উচ্চপদস্থ এক ব্যাংকার বলেন যে, জনতা ব্যাংক বর্তমানে খেলাপি ঋণে জর্জরিত। এখন দরকার পুনঃ :তফশিল এবং সুদ মওকুফের মাধ্যমে অতিদ্রুত উল্লেখযোগ্য অঙ্কের খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা, নতুন সিকিউরড ঋণ সৃষ্টি। বর্তমান এমডি খেলাপি ঋণ কমানোর কোনো চেষ্টাই করছেন না। বরং অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নীতি সহায়তা প্রাপ্ত গ্রাহকদের পনু :তফশিল দিতে গড়িমসি করছেন। ফলে ব্যাংকটির শ্রেণিকৃত ঋণের হার কেবল বাড়ছে। এদিকে উচ্চ সুদে আমানত এনে, মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিয়ে নিজের ব্যক্তি ইমেজ গড়ায় সর্বশক্তি নিয়োগ করছেন মজিবুর রহমান।
জনতা ব্যাংক বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরকারি ব্যাংক। দেশের ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অবদান এই ব্যাংকটির। এমন প্রেক্ষিতে এই ব্যাংকের বিপর্যয় জাতীয় অর্থনীতিতে একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখা উচিত।












