রাজশাহী নগরের রাজপাড়া মহল্লার টিনশেড বাড়িতে বাস করেন জান্নাতুল ফারজানা। যদিও ঘর রয়েছে, কিন্তু জমি নেই। তার বাবা, জাহিদ হাসান মুকুল, ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। নুন আনতে পান্তা ফুরায় তাঁদের সংসারে। তবে, মেধাবী ফারজানার জীবন সংগ্রাম তার অদম্য ইচ্ছাশক্তির পরিচায়ক।
ফারজানা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন, কিন্তু তার ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় টাকার অভাব। তবে, তাঁর আশেপাশের প্রতিবেশী ও এলাকাবাসী এগিয়ে আসেন, আর তাদের সহযোগিতায় মেডিকেল কলেজে ভর্তির বন্দোবস্ত হয়। কিন্তু, ভবিষ্যতের পথে অজানা এক ঝুঁকি তাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে রেখেছে।
ফারজানার বাবার কাছ থেকে জানা গেছে, “ভ্যান চালিয়ে আমি কষ্টে সংসার চালাই। তবুও, যেভাবেই পারি, মেয়ে ফারজানার পড়াশোনার জন্য চেষ্টা করি। মেয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে আমার মুখ উজ্জ্বল করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমি তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারব কি না। সমাজের বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসে, তাহলে আমার মেয়েটার স্বপ্ন পূরণ হবে।”
ফারজানা নিজেই বলেন, মেডিকেল কলেজের বইয়ের দাম খুব বেশি। তাছাড়া, কলেজে থাকা, খাওয়া এবং অন্যান্য খরচও খুব বেশি। আমার বাবার পক্ষে এসব খরচ বহন করা সম্ভব নয়। আমি যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, তা কি বাস্তবে পরিণত হবে? যদি সবাই সহযোগিতা করেন, তবে আমি ডাক্তার হয়ে অসহায় মানুষের সেবা করতে পারব। তবে, তা না হলে আমার পড়াশোনা এখানেই থেমে যেতে পারে।
ফারজানা ২০২২ সালে রাজশাহী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন এবং গত বছর সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এবার, ২০২৩ সালে তিনি হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে তার স্বপ্নের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেছেন। ৪ ফেব্রুয়ারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর এখন তার সামনে আরও অনেক কঠিন সংগ্রাম অপেক্ষা করছে।
ফারজানার অবস্থা জানিয়ে তার বাবা বলেন, “মেয়েটার ভবিষ্যতের জন্য আমি খুব দুশ্চিন্তায় আছি। টাকার অভাবে, তার স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা জানি না। তবে, আমি আশাবাদী যদি সমাজের বিত্তবানরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে আমার মেয়ে ডাক্তারের শিক্ষাটা শেষ করতে পারবে।”
ফারজানার মতো অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আছেন, যারা তাদের প্রতিভা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উচ্চতর শিক্ষা লাভের সুযোগ পেয়েও আর্থিক সংকটের কারণে তাদের স্বপ্নকে অসমাপ্ত রেখেছেন। ফারজানার সংগ্রাম তার পরিবারের জন্য শুধু একটি চ্যালেঞ্জই নয়, বরং এটি সমাজের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মতো অনেক মেধাবী ছাত্রীর জন্য যদি যথাযথ সহযোগিতা আসে, তবে তারা দেশ এবং সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
ফারজানার এই সংগ্রাম থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত যে, শুধুমাত্র আর্থিক স্বচ্ছলতার মাধ্যমে মানুষকে মূল্যায়ন করা উচিত নয়। মেধা, পরিশ্রম এবং একাগ্রতা মানুষকে যে কোনো উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে, এবং আমাদের দায়িত্ব হতে পারে সেই মেধাবীদের পাশে দাঁড়ানো।
ফারজানার দৃষ্টিতে, তার স্বপ্নের মঞ্জিল এখনো অনেক দূরে। তবে, তাঁর মধ্যে রয়েছে একটি অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং দৃঢ় মনোবল। আমরা আশা করি, সমাজের বিত্তবানরা তাঁর পাশে এসে দাঁড়ালে, ফারজানার মতো মেধাবী একজন শিক্ষার্থী তার স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হবে এবং একদিন তার হাত দিয়ে অসহায় মানুষের সেবা করতে পারবে।