ঢাকা ০৩:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে বেতনের দাবিতে কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ

গোলাম কিবরিয়া, রাজশাহী

রাজশাহীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে সাবেক এমপি এনামুল হকের কারখানার শ্রমিকেরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরের সোনাদীঘি মোড় এলাকায় সিটি সেন্টারের সামনের রাস্তায় বকেয়া বেতনের দাবিতে সাবেক এমপি এনামুল হকের কারখানার শ্রমিকেরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরের সোনাদীঘি মোড় এলাকায় সিটি সেন্টারের সামনে এই বিক্ষোভ করা হয়।

 

কয়েক মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করছেন রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) এনামুল হকের সোয়েটার কারখানার শ্রমিকেরা। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নগরের সোনাদীঘি মোড় এলাকায় সিটি সেন্টারের সামনে রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান নেন তাঁরা। এ সময় এক পাশের রাস্তা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা পৌনে একটার দিকেও শ্রমিকেরা সেখানে অবস্থান করছিলেন।

 

এর আগে নগরের সপুরা এলাকায় কারখানা থেকে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সিটি সেন্টারের সামনে অবস্থান নেন। শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন ও দ্রুত কারখানা চালু করার দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করছেন। এ সময় তাঁরা ‘এক দফা এক দাবি, বকেয়া বেতন আজকেই দিবি’, ‘আমাদের দাবি মানতে হবে, মালিক পক্ষকে আনতে হবে’, ‘আমার পেটে ভাত নাই, বাঁচার মতো বাঁচতে চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

 

রাজশাহী নগরের বিসিক এলাকায় সাকোয়াটেক্স লিমিটেড নামের এ কারখানার অবস্থান। এটি এনা গ্রুপের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। সাবেক এমপি এনামুল হক এনা গ্রুপের চেয়ারম্যান। তিনি নবম, দশম ও একাদশ সংসদে রাজশাহী-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। সোমবার দুপুরে রাজধানী থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁর দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বাগমারা থানায় একটি মামলাও হয়েছে সম্প্রতি।

 

আজকের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শ্রমিকেরা বলেন, কারখানায় একসময় হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করতেন। এখন কারখানায় প্রায় ৩৫০ জন শ্রমিক আছেন। তাঁদের অনেকের সাত মাস পর্যন্ত বেতন বাকি আছে। আর সবার বেতন বাকি আছে দুই মাস পর্যন্ত। বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করার কারণে কয়েক মাস আগেই কারখানার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরপর গ্যাসে জেনারেটর চালিয়ে কারখানা চালু রাখা হয়েছিল। পরে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে গ্যাসের বিল পরিশোধ না করায় গ্যাসের লাইন বন্ধ করা হয়। এর পর থেকে পুরো বন্ধ হয়ে যায় কারখানাটির উৎপাদন। সেই থেকে শ্রমিকেরা কারখানার ভেতর ও বাইরে বিক্ষোভ করে আসছেন। মঙ্গলবার তাঁরা কারখানার বাইরে এসে বিক্ষোভ করছেন।

 

হাবিবুর রহমান নামের এক শ্রমিক বলেন, কেউ দুই, কেউ তিন, কেউ ছয় মাসের বেতন পাবেন। এটা কয়েক বছর আগে থেকে শুরু হয়েছে। কারখানার মালিক এমপি এনামুল গ্রেপ্তার হওয়ায় তাঁদের বেতন পাওয়া নিয়ে আরও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আগেই বারবার বেতন চেয়ে পাওয়া যায়নি। এখন কার কাছে চাইবেন বেতন। যে পর্যন্ত বেতন না দেবে, তাঁরা এখান থেকে উঠবেন না বলে জানান।

 

সামিয়া খাতুন নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা সিটি সেন্টারের এখানে এসে ঘেরাও করেছি। এটা মালিকের হেড অফিস। এখানেও কেউ নেই। কারখানারও কেউ নেই। আমাদের কেউ এসে বলুক যে বেতন দ্রুতই দিয়ে দেবেন। আমরা চলে যাব। আশ্বাস দেওয়ার কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের কান্না কি কারও কাছে যাচ্ছে না?’

কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থাপক মামুন শ্রমিকদের সঙ্গেই আছেন। তিনি বলেন, গত মাসের ১৬ তারিখে কারখানায় যোগদান করেন তিনি। এরপর ৫ থেকে ৬ দিন কাজ চলেছে। তারপরই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন বন্ধ করা হয়। তিনি কারখানার নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছেন। দ্রুতই বেতন ও কারখানা চালুর ব্যাপারে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। সেই কথা তিনি শ্রমিকদের বলেছেন।

কারখানার নির্বাহী পরিচালক মমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, তাঁরা আগামী ৩০ তারিখের মধ্যেই সবকিছু স্বাভাবিক করতে পারবেন। এই সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ–সংযোগসহ শ্রমিকদের বেতন দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁদের বেশ কয়েকটি শিপমেন্ট আছে। সেগুলো ছেড়ে দিতে হবে। এগুলো ছেড়ে দিতে পারলে বেশ কিছু ডলার পাওয়া যাবে। কিন্তু শ্রমিকেরা যেভাবে আন্দোলন করছেন, এতে তাঁদের বায়াররা সেখানে যেতে পারছেন না। শ্রমিকেরা একটু ধৈর্য ধরলে সবকিছু ধীরে ধীরে পাবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ১১:০৩:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৫০৬ বার পড়া হয়েছে

রাজশাহীতে বেতনের দাবিতে কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ

আপডেট সময় ১১:০৩:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রাজশাহীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে সাবেক এমপি এনামুল হকের কারখানার শ্রমিকেরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরের সোনাদীঘি মোড় এলাকায় সিটি সেন্টারের সামনের রাস্তায় বকেয়া বেতনের দাবিতে সাবেক এমপি এনামুল হকের কারখানার শ্রমিকেরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরের সোনাদীঘি মোড় এলাকায় সিটি সেন্টারের সামনে এই বিক্ষোভ করা হয়।

 

কয়েক মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করছেন রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) এনামুল হকের সোয়েটার কারখানার শ্রমিকেরা। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নগরের সোনাদীঘি মোড় এলাকায় সিটি সেন্টারের সামনে রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান নেন তাঁরা। এ সময় এক পাশের রাস্তা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা পৌনে একটার দিকেও শ্রমিকেরা সেখানে অবস্থান করছিলেন।

 

এর আগে নগরের সপুরা এলাকায় কারখানা থেকে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সিটি সেন্টারের সামনে অবস্থান নেন। শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন ও দ্রুত কারখানা চালু করার দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করছেন। এ সময় তাঁরা ‘এক দফা এক দাবি, বকেয়া বেতন আজকেই দিবি’, ‘আমাদের দাবি মানতে হবে, মালিক পক্ষকে আনতে হবে’, ‘আমার পেটে ভাত নাই, বাঁচার মতো বাঁচতে চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

 

রাজশাহী নগরের বিসিক এলাকায় সাকোয়াটেক্স লিমিটেড নামের এ কারখানার অবস্থান। এটি এনা গ্রুপের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। সাবেক এমপি এনামুল হক এনা গ্রুপের চেয়ারম্যান। তিনি নবম, দশম ও একাদশ সংসদে রাজশাহী-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। সোমবার দুপুরে রাজধানী থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁর দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বাগমারা থানায় একটি মামলাও হয়েছে সম্প্রতি।

 

আজকের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শ্রমিকেরা বলেন, কারখানায় একসময় হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করতেন। এখন কারখানায় প্রায় ৩৫০ জন শ্রমিক আছেন। তাঁদের অনেকের সাত মাস পর্যন্ত বেতন বাকি আছে। আর সবার বেতন বাকি আছে দুই মাস পর্যন্ত। বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করার কারণে কয়েক মাস আগেই কারখানার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরপর গ্যাসে জেনারেটর চালিয়ে কারখানা চালু রাখা হয়েছিল। পরে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে গ্যাসের বিল পরিশোধ না করায় গ্যাসের লাইন বন্ধ করা হয়। এর পর থেকে পুরো বন্ধ হয়ে যায় কারখানাটির উৎপাদন। সেই থেকে শ্রমিকেরা কারখানার ভেতর ও বাইরে বিক্ষোভ করে আসছেন। মঙ্গলবার তাঁরা কারখানার বাইরে এসে বিক্ষোভ করছেন।

 

হাবিবুর রহমান নামের এক শ্রমিক বলেন, কেউ দুই, কেউ তিন, কেউ ছয় মাসের বেতন পাবেন। এটা কয়েক বছর আগে থেকে শুরু হয়েছে। কারখানার মালিক এমপি এনামুল গ্রেপ্তার হওয়ায় তাঁদের বেতন পাওয়া নিয়ে আরও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আগেই বারবার বেতন চেয়ে পাওয়া যায়নি। এখন কার কাছে চাইবেন বেতন। যে পর্যন্ত বেতন না দেবে, তাঁরা এখান থেকে উঠবেন না বলে জানান।

 

সামিয়া খাতুন নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা সিটি সেন্টারের এখানে এসে ঘেরাও করেছি। এটা মালিকের হেড অফিস। এখানেও কেউ নেই। কারখানারও কেউ নেই। আমাদের কেউ এসে বলুক যে বেতন দ্রুতই দিয়ে দেবেন। আমরা চলে যাব। আশ্বাস দেওয়ার কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের কান্না কি কারও কাছে যাচ্ছে না?’

কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থাপক মামুন শ্রমিকদের সঙ্গেই আছেন। তিনি বলেন, গত মাসের ১৬ তারিখে কারখানায় যোগদান করেন তিনি। এরপর ৫ থেকে ৬ দিন কাজ চলেছে। তারপরই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন বন্ধ করা হয়। তিনি কারখানার নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছেন। দ্রুতই বেতন ও কারখানা চালুর ব্যাপারে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। সেই কথা তিনি শ্রমিকদের বলেছেন।

কারখানার নির্বাহী পরিচালক মমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, তাঁরা আগামী ৩০ তারিখের মধ্যেই সবকিছু স্বাভাবিক করতে পারবেন। এই সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ–সংযোগসহ শ্রমিকদের বেতন দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁদের বেশ কয়েকটি শিপমেন্ট আছে। সেগুলো ছেড়ে দিতে হবে। এগুলো ছেড়ে দিতে পারলে বেশ কিছু ডলার পাওয়া যাবে। কিন্তু শ্রমিকেরা যেভাবে আন্দোলন করছেন, এতে তাঁদের বায়াররা সেখানে যেতে পারছেন না। শ্রমিকেরা একটু ধৈর্য ধরলে সবকিছু ধীরে ধীরে পাবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।