লাখাইয়ে টিসিবির ডিলারশীপ বাতিলের সুপারিশ পত্র এক বছরেও কার্যকর হয়নি
হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার মেসার্স আমেনা এন্টারপ্রাইজ এর সত্বাধীকারী সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন মান্নার টিসিবির লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ জানিয়ে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মোস্তফা ইকবাল এ এফ ডব্লিউসি,পি এস সি ঢাকা দপ্তরে সুপারিশ পত্র প্রেরন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় লাখাই উপজেলার মেসার্স আমেনা এন্টারপ্রাইজ এর স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন মান্না আওয়ামী লীগের প্রভাব কাটিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে টিসিবির লাইসেন্স। তিনি সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন এবং সাবেক এমপি আবু জাহির এর মদতপোষ্ট ব্যক্তি হিসেবে খ্যাত লাখাই উপজেলা জোরে।
এ সুবাদে বিভিন্ন সময়ে দলের ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন পন্থায় টাকার পাহাড় গড়ে আঙুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন। তার দাপটে উপজেলার নিরীহ লোকদের সহ উপজেলা প্রশাসনে আধিপত্য বিস্তার করে ভাগিয়ে নিয়েছেন ডিলারশিপ।এই ডিলারশিপের অন্তরালে অবৈধ ব্যবসা করে কোটি টাকার মালিক দেলোয়ার হোসেন মান্না। তিনি টিসিবির পণ্য বিতরণে করছেন নয় ছয় পন্থায়। এক পর্যায়ে লাখাই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সহ এলাকার লোকজন ও কার্ডধারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা সুলতানা এর কাছে অভিযোগ করে এবং বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও ফেইসবুক ভিডিও ভাইরালও এর উপর ভিত্তি করে তদন্তে নামে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা সুলতানা।
এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে দেলোয়ার হোসেন মান্না বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য প্রমানিত হওয়ায় তার লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ জানিয়ে পত্র প্রেরন করেন টিসিবির চেয়ারম্যান বরাবর। খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায় যে,দেলোয়ার হোসেন মান্না লাখাই ইউনিয়নের টিসিবির পণ্য বিতরণ টিসিবির পণ্য নীতিমালা বহির্ভূত ও উচ্চ মূল্যে খোলা বাজারে বিক্রি করলে ডিলার দেলোয়ার হোসেন মান্না কে শোকজ করেন ইউএনও নাহিদা সুলতানা। শোকজ এর নোটিশ পেয়ে শোকজ এর জবাব সন্তোষ জনক না হওয়ায় নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা সুলতানা মেসার্স আমেনা এন্টারপ্রাইজ এর স্বত্বাধিকারী ডিলার দেলোয়ার হোসেন মান্নার টিসিবির লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ জানিয়ে বাংলাদেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন এর চেয়ারম্যান বরাবর উপজেলা কার্যালয়ের স্মারক নং ০৫,৪৬,৩৬৬,০০১,০১,০৩২,২০২৩/৬১৭/১ এর মাধ্যমে সুপারিশ পত্র প্রেরন করা হয়। এর পূর্বে ডিলার দেলোয়ার হোসেন মান্না এর ২৭ জুন ২০২৩ ইং তারিখে ১নং লাখাই ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত টাউনশিপ বাজারে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে ক্যালেন্ডার উপেক্ষা করে ট্যাগ অফিসার টিম ব্যতিত নিজের খেয়াল খুশি মত ফ্যামিলি কার্ড ব্যতীত টিসিবির পণ্য মুশুরডাল ছাড়া শুধু মাত্র সয়াবিন তেল প্রতিলিটার ১শত টাকায় না করে ২ লিটার তেলের বোতল ২ শ টাকার স্থলে ৩শত ১০ টাকায় খোলা বাজারে বিক্রি করছেন মর্মে ২৭ জুন ২০২৩ ইং তারিখে পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। পরবর্তীতে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ এর নির্দেশে ৫ নং স্মারকে ৫ ই মে ২০২৪ ইং তারিখে সহকারী কমিশনার মাসুদুর রহমান কে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন কৃষিবিদ মোঃ মাহমুদুল হাসান মিজান, উপ-পরিচালক (চ দা) ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ ক্যাম্প অফিস কুমিল্লা এর ইসমাইল মজুমদার ও উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ শাহজাহান।
তদন্ত কমিটি সরেজমিনে তদন্ত কালে ডিলার দেলোয়ার হোসেন মান্না দাখিলকৃত পণ্য মওজুদের রেজিস্ট্রার পর্যালোচনায় অভিযোগ এর তারিখে লাখাই ইউনিয়নে পণ্য বিতরণের সিডিউল ছিল না এবং তদন্তে দেলোয়ার হোসেন মান্না এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য বলে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন ও যাবতীয় প্রমানাধি সহ মেসার্স আমেনা এন্টারপ্রাইজ এর স্বত্বাধিকারী ডিলার দেলোয়ার হোসেন মান্নার টিসিবির লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ জানিয়ে গত ২৩ মে ২০২৪ ইং তারিখে স্মারক নং ০৫,৪৬,৩৬৬৮,০০১,০১,৩২,৪২৯ এর মাধ্যমে চেয়ারম্যান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ চেয়ারম্যান প্রধান কার্যালয় ঢাকায় প্রেরন করা হলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের চেয়ারম্যান ইচ্ছাকৃত ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ডিলার দেলোয়ার হোসেন মান্না এর লাইসেন্স বাতিলের বিষয়ে কোন প্রকার পদক্ষেপ নেননি। এ ব্যপারে লাখাই উপজেলা জোরে চলছে নানা গুঞ্জন। উপজেলার সুশীল সমাজ মনে করছেন আওয়ামী লীগের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ডিলার দেলোয়ার হোসেন মান্নার লাইসেন্স বাতিলের ফাইল বন্দী করে রেখেছেন। ডিলার দেলোয়ার হোসেন মান্না এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ এর ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া জন্য জোর দাবী জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা সুলতানা এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন দৃষ্টে আমি ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ চেয়ারম্যান এর বরাবর ডিলার দেলোয়ার হোসেন মান্না এর লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ জানিয়ে পত্র দিয়েছি কিন্তু কোন কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বিষয়টি একান্তই ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ চেয়ারম্যান এর এক্তিয়ার।
এ বিষয়ে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ এর সহাকারী পরিচালক আকলিমা আক্তার এর সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করে ডিলারশীপ বাতিলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি অনেক দিন আগের তাই এই মুহুর্তে ফাইল না দেখে বলতে পারব না। অপর দিকে আরো জানান মোবাইল ফোনে সব কিছু বলা সম্ভব নয় বরং আপনি যদি আমাদের দপ্তরে আসেন তা হলে হয়তো ফাইল দেখে বলতে পারব। তিনি আরো জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা নিয়মিত অফিস করতে পারছি না।