আমি জুলুমের বিপক্ষে, মাজলুমের পক্ষে আছি এবং থাকবো-হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী
কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা সমালোচনার প্রেক্ষিতে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী।
বৃহস্পতিবার তিনি বলেছেন, আমি নিজ আগ্রহে নির্বাচনে আসিনি বরং আমাকে আসতে বাধ্য করা হয়েছে। আমি একথা শুধু আজ বলছি না বরং বহুবার বলেছি। পূর্বের একাধিক নির্বাচনেও আমাকে চাপ দেওয়া হয়েছিল কিন্তু আমি আসিনি। এমনকি মন্ত্রিত্বের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল, তা গ্রহণ করিনি। সর্বশেষ ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষাসহ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দুর্দশার সময়ে জাতীয় কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে বার বার চাপের কারণে আমি আসতে বাধ্য হয়েছিলাম এবং স্বকীয়তা রক্ষার স্বার্থেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলাম। কেননা আমি দেখেছি বরাবরের মত একটি সংসদ হতে যাচ্ছে কিন্তু সেখানে আলেম উলামাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকছে না। আলেমদের কণ্ঠস্বর হয়ে কথা বলবার জন্যই আমি সংসদে যাই।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমি এজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি যে, আমার উপর থেকে একটি বিরাট চাপ সরে গেল। আমার কাছাকাছি যারা থাকেন তারা জানেন, আমি বারবার বলেছি এই সংসদটা কোনোভাবে ভেঙ্গে গেলে আমি প্রাণে বাঁচি। কারণ, আমি নিজের আগ্রহে নির্বাচনে আসিনি। আমাকে আসতে বাধ্য করা হয়েছে।
‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেকের মতো আমারও মনে হচ্ছে, গত নির্বাচনে আমার অংশগ্রহণ ভুল ছিল। সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাটা সঠিক হয়নি। আমি সবসময় জুলুমের বিপক্ষে, অন্যায়ের বিপক্ষে কথা বলি। কখনো কোনো জুলুমের পক্ষে কথা বলেছি এমনটা কেউ বলতে পারবেন না। আমি মাত্র কয়েক মাস এমপি ছিলাম। এই সময়ে যখনই সুযোগ পেয়েছি সংসদে ইসলামের কথা বলেছি, ইসলামী শিক্ষার কথা, কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের কথা বলেছি, দেশের উন্নয়ন ও আমার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের কথা বলেছি। স্থানীয়ভাবে আমার নিজ এলাকা জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের রাস্তাঘাট, মসজিদ-মাদরাসার উন্নয়নে আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। থানা বা প্রশাসনে মানুষ যাতে অহেতুক হয়রানির শিকার না হয় তার জন্য উভয় উপজেলায় কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি এবং সবসময় তা তদারকি করেছি। কোনো উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমি কোনো এলাকা, মসলক, সংগঠন বা পক্ষ-বিপক্ষ বাছ-বিচার করিনি। দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষের কল্যাণের চেষ্টা করেছি এবং সকলের ভালোবাসা ও সহযোগিতা পেয়েছি। সুতরাং যারা এখন আমার প্রতি জুলুমের অপবাদ দিচ্ছেন, তা দেওয়া উচিত নয়। আমি সর্বদা জুলুমের বিপক্ষে, মাজলুমের পক্ষে আছি এবং থাকবো ইনশাআল্লাহ।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ প্রসঙ্গে বলেন, আমি কখনো কোনো ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের বিপক্ষে নই। ছাত্রদের এ আন্দোলনেরও বিপক্ষে ছিলাম না। এ আন্দোলনের প্রতি আমার নৈতিক সমর্থন শুরু থেকেই ছিল। ফুলতলী মাদরাসার আশুরার মাহফিলে আমি ছাত্রদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে কথা বলেছি। উপস্থিত হাজারো ছাত্র এর সাক্ষী আছে। সম্ভবত ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার এর সংবাদ পত্র-পত্রিকায় যায়নি।
আমাদের সংগঠন আনজুমানে আল ইসলাহ ও তালামীযে ইসলামিয়ার নেতাকর্মীরা এর পক্ষে কথা বলেছেন। শুরু থেকে তালামীযে ইসলামিয়া এ আন্দোলনে শরীক আছে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তালামীযের কর্মীরা আন্দোলনে সক্রিয় থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ মর্মে আমার নির্দেশনায়ও কার্পণ্য ছিল না। আন্দোলনের সময় আমি আমার এলাকায় পুলিশকে সর্বোচ্চ ধৈর্যধারণ করে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার নির্দেশনাও দিয়েছি।