ঢাকা ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টিকে থাকার লড়াইয়ে খুলনার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

মোঃ রবিউল হোসেন খান, খুলনা::

ছবি: সংগৃহীত

এক সময় হাটবাজারে মাটির তৈজসপত্রের পসরা ছিল নজরকাড়া। কুমার পাড়ায় সারাদিন গমগম করত কাজের শব্দ। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ টিকে থাকার লড়াই করছে।

খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি দক্ষিণ পালপাড়ার ৭০ বছর বয়সী সমীর চন্দ্র পাল বলেন, “আগে মাটি বিনা পয়সায় আনতাম। এখন এক পিকআপ মাটির দাম ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এক কৌটা রঙের দাম ১৪০ টাকা, কাঠের দামও অস্বাভাবিক। অথচ মাটির জিনিসপত্রের দাম তেমন বাড়েনি। প্লাস্টিকের কারণে আমাদের মাল বিক্রি হচ্ছে না। বাপ-দাদার পেশা ছাড়তেও পারছি না, টিকে থাকাটাই কঠিন হয়ে গেছে।”

তার মতো অনেকেই পৈত্রিক এ পেশা আঁকড়ে ধরে আছেন। সেনহাটি দক্ষিণ পালপাড়ায় ১৫টি পরিবার ও উত্তর পালপাড়ায় প্রায় ২৫টি পরিবার এখনও কোনোমতে এ পেশা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে অনেক পরিবার জীবিকার তাগিদে দেশ-বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।

গোয়ালপাড়া গ্রামের অরুণ পাল জানান, “এখন মাসে ১৪-১৫ হাজার টাকার বেশি বিক্রি হয় না। সংসার চালানো, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করানো খুবই কষ্টসাধ্য। সরকার থেকে যদি একটু আর্থিক সহায়তা পেতাম, তাহলে অন্তত সন্তানদের এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে পারতাম।”

নিতাই চন্দ্র পাল বলেন, “আগে প্রচুর চাহিদা ছিল। এখন সীমিত আকারে ব্যবসা করছি। অনেকে ছেড়ে দিয়েছে। কয়েকটা পরিবার শুধু টিকে আছি। লোন নিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে।”

দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম জানান, “বর্তমানে বিআরডিবি ও যুব উন্নয়ন থেকে ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়। তবে এ খাতের জন্য আলাদা কোনো সরকারি প্রণোদনা নেই। ভবিষ্যতে সরকারের সিদ্ধান্ত হলে প্রণোদনা দেওয়া সম্ভব।”

এক সময়ের কুমার পাড়া আজ নিভু নিভু। প্লাস্টিকের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে এ ঐতিহ্যবাহী শিল্প। সরকারি সহযোগিতা ছাড়া শত বছরের পুরোনো এই পেশা টিকিয়ে রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ১১:৪৪:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
৫২১ বার পড়া হয়েছে

টিকে থাকার লড়াইয়ে খুলনার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

আপডেট সময় ১১:৪৪:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এক সময় হাটবাজারে মাটির তৈজসপত্রের পসরা ছিল নজরকাড়া। কুমার পাড়ায় সারাদিন গমগম করত কাজের শব্দ। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ টিকে থাকার লড়াই করছে।

খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি দক্ষিণ পালপাড়ার ৭০ বছর বয়সী সমীর চন্দ্র পাল বলেন, “আগে মাটি বিনা পয়সায় আনতাম। এখন এক পিকআপ মাটির দাম ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এক কৌটা রঙের দাম ১৪০ টাকা, কাঠের দামও অস্বাভাবিক। অথচ মাটির জিনিসপত্রের দাম তেমন বাড়েনি। প্লাস্টিকের কারণে আমাদের মাল বিক্রি হচ্ছে না। বাপ-দাদার পেশা ছাড়তেও পারছি না, টিকে থাকাটাই কঠিন হয়ে গেছে।”

তার মতো অনেকেই পৈত্রিক এ পেশা আঁকড়ে ধরে আছেন। সেনহাটি দক্ষিণ পালপাড়ায় ১৫টি পরিবার ও উত্তর পালপাড়ায় প্রায় ২৫টি পরিবার এখনও কোনোমতে এ পেশা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে অনেক পরিবার জীবিকার তাগিদে দেশ-বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।

গোয়ালপাড়া গ্রামের অরুণ পাল জানান, “এখন মাসে ১৪-১৫ হাজার টাকার বেশি বিক্রি হয় না। সংসার চালানো, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করানো খুবই কষ্টসাধ্য। সরকার থেকে যদি একটু আর্থিক সহায়তা পেতাম, তাহলে অন্তত সন্তানদের এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে পারতাম।”

নিতাই চন্দ্র পাল বলেন, “আগে প্রচুর চাহিদা ছিল। এখন সীমিত আকারে ব্যবসা করছি। অনেকে ছেড়ে দিয়েছে। কয়েকটা পরিবার শুধু টিকে আছি। লোন নিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে।”

দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম জানান, “বর্তমানে বিআরডিবি ও যুব উন্নয়ন থেকে ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়। তবে এ খাতের জন্য আলাদা কোনো সরকারি প্রণোদনা নেই। ভবিষ্যতে সরকারের সিদ্ধান্ত হলে প্রণোদনা দেওয়া সম্ভব।”

এক সময়ের কুমার পাড়া আজ নিভু নিভু। প্লাস্টিকের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে এ ঐতিহ্যবাহী শিল্প। সরকারি সহযোগিতা ছাড়া শত বছরের পুরোনো এই পেশা টিকিয়ে রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।