ঢাকা ০৩:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘বিবেকের তাড়নায় ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করলাম’

চেকপোস্ট ডেস্ক::

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা ছাত্রলীগের পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন মো. শরীফ মিয়া। শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

পদত্যাগের কারণ তিনি তার ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছে; যা হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘আমি মো. শরীফ মিয়া। নাসিরনগর উপজেলা ছাত্রলীগ শাখার সহ-সভাপতি পদ থেকে সজ্ঞানে পদত্যাগ করলাম। ২০১২ সালে গোকর্ণ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি পরিচয় লাভ করি! ২০২২ সালে নাসিরনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হই। যেদিন এ পদটা পাই সেদিন শুধু একটা কথাই মনে হলো যে, সৃষ্টিকর্তা আমাকে হয়তো মানুষের সেবা করার আরেকটি সুযোগ আমাকে দিয়েছেন।

২০১২ থেকে ২০২৪ এই এক যুগে আমি ছাত্রনেতা হয়েও বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব এর সুযোগ নিয়ে আমি কখনো কোনো বেনিফিট নিইনি! এই এক যুগে আমি ১০ টাকা কোনো নেতার কাছ থেকে নিয়েছি বা ইনকাম করেছি এমন কেউ বলতে পারবে না।

এমন কি বিভিন্ন নির্বাচনে ছাত্রলীগের যে ওয়ার্ড কেন্দ্রের খরচ দেয় সেই টাকাও আমি হাতে নিইনি! নিজের, নিজের বাবার টাকায় ছাত্র রাজনীতি করেছি। মিটিং, মিছিল, সভা করেছি, নির্বাচন করেছি।

জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়টুকু দিয়েছি। আমার ছাত্র রাজনীতির একমাত্র উদ্দেশ্যই ছিল দেশ ও মানুষের সেবা করা। ন্যায়ের পক্ষে কথা বলা। রাজনীতিতে আমার আদর্শ ছিল শেখ মুজিব। আর মুজিবের আদর্শ দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের হাতে গড়া ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস। এ দেশের প্রতিটি সংগ্রামে ছাত্রলীগের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পেছনে ছাত্রলীগের ভুমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। ছাত্রলীগের মতো একটি মহান সংগঠনের একজন কর্মী হতে পেরে অবশ্যই আমি গর্বিত।

কিন্তু বর্তমানে রাজনীতির প্রেক্ষাপটে আমি অনুভব করি ছাত্রলীগ তার ঐতিহ্য, আদর্শ থেকে সরে এসেছে এবং বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক দলই দেশ এবং দেশের জনগণের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করে না।

এমনকি বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দিনের যে আওয়ামী লীগ ছিল গণমানুষের দল, তাও এখন সুবিধাবাদী চাটুকারদের দখলে। এখন রাজনীতি কেবল ক্ষমতা, পদ-পদবি, টেন্ডারের জন্য। এটা একান্তই আমার ব্যাক্তিগত অভিমত।

এখন আমার ছাত্রত্ব নেই এবং আমি বিবাহিত। একজন ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য যে দায়িত্ব পালন করার কথা আমার মনে হচ্ছে সেটা পালন করতে আমি ব্যর্থ। অন্যায়ের বিপক্ষে কথা বলা, ছাত্রদের অধিকার, সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে কথা বলার জন্য যথেষ্ট প্রাণশক্তি আমি হারিয়ে ফেলেছি।

যে আদর্শ নিয়ে আমি রাজনীতি করতে চেয়েছিলাম, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি সেই আদর্শের প্রতিফলন করতে পারছি না। আমার মনে হয় আমার জায়গায় এমন কেউ আসুক যে কিনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করবে! যে দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হবে।

আমরা প্রায়ই সমালোচনা করি। দেশের ক্রিকেট, ফুটবলের সভাপতি বা বিভিন্ন এমপি, মন্ত্রী ব্যর্থতা নিয়ে পদত্যাগ করে না কেন। এখন আমি আমার ব্যর্থতা নিয়ে পদত্যাগ করছি না কেন সে প্রশ্নও আমি নিজেকেই করেছি।

আমি আমার বিবেকবোধ থেকে, আমার ব্যর্থতা মেনে নিয়ে ছাত্রলীগের পদ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমার এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমার পরিবার, বন্ধুমহলে কোনো যোগসূত্র নেই। এইটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এবং এও বলছি- আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের আদর্শের রাজনীতির বিশ্বাস করি।
তাই অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমি কখনোই সম্পৃক্ত হবো না এইটা শতভাগ নিশ্চিত।

আমি কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বহন করতে চাই না। অন্য ৮-১০ জন সাধারণ মানুষের মতো, সাধারণ মানুষের পরিচয় নিয়ে সবার মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।’

এ বিষয়ে মো. শরীফ মিয়া যুগান্তরকে জানান, আমি আমার বিবেকের তাড়নায় পদত্যাগ করেছি। বিষয়টি এখনো উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতিকে জানাইনি, তবে জানাব।

নাসিরনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এইচএম শুভ সিদ্দিক বলেন, আমিও ফেসবুক পোস্টটি দেখেছি। এভাবে তো পদত্যাগ করা যায় না, পদত্যাগ করতে হলে লিখিতভাবে জেলা ছাত্রলীগকে জানাতে হবে।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ১০:১৮:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ অগাস্ট ২০২৪
৫১৩ বার পড়া হয়েছে

‘বিবেকের তাড়নায় ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করলাম’

আপডেট সময় ১০:১৮:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ অগাস্ট ২০২৪

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা ছাত্রলীগের পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন মো. শরীফ মিয়া। শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

পদত্যাগের কারণ তিনি তার ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছে; যা হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘আমি মো. শরীফ মিয়া। নাসিরনগর উপজেলা ছাত্রলীগ শাখার সহ-সভাপতি পদ থেকে সজ্ঞানে পদত্যাগ করলাম। ২০১২ সালে গোকর্ণ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি পরিচয় লাভ করি! ২০২২ সালে নাসিরনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হই। যেদিন এ পদটা পাই সেদিন শুধু একটা কথাই মনে হলো যে, সৃষ্টিকর্তা আমাকে হয়তো মানুষের সেবা করার আরেকটি সুযোগ আমাকে দিয়েছেন।

২০১২ থেকে ২০২৪ এই এক যুগে আমি ছাত্রনেতা হয়েও বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব এর সুযোগ নিয়ে আমি কখনো কোনো বেনিফিট নিইনি! এই এক যুগে আমি ১০ টাকা কোনো নেতার কাছ থেকে নিয়েছি বা ইনকাম করেছি এমন কেউ বলতে পারবে না।

এমন কি বিভিন্ন নির্বাচনে ছাত্রলীগের যে ওয়ার্ড কেন্দ্রের খরচ দেয় সেই টাকাও আমি হাতে নিইনি! নিজের, নিজের বাবার টাকায় ছাত্র রাজনীতি করেছি। মিটিং, মিছিল, সভা করেছি, নির্বাচন করেছি।

জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়টুকু দিয়েছি। আমার ছাত্র রাজনীতির একমাত্র উদ্দেশ্যই ছিল দেশ ও মানুষের সেবা করা। ন্যায়ের পক্ষে কথা বলা। রাজনীতিতে আমার আদর্শ ছিল শেখ মুজিব। আর মুজিবের আদর্শ দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের হাতে গড়া ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস। এ দেশের প্রতিটি সংগ্রামে ছাত্রলীগের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পেছনে ছাত্রলীগের ভুমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। ছাত্রলীগের মতো একটি মহান সংগঠনের একজন কর্মী হতে পেরে অবশ্যই আমি গর্বিত।

কিন্তু বর্তমানে রাজনীতির প্রেক্ষাপটে আমি অনুভব করি ছাত্রলীগ তার ঐতিহ্য, আদর্শ থেকে সরে এসেছে এবং বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক দলই দেশ এবং দেশের জনগণের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করে না।

এমনকি বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দিনের যে আওয়ামী লীগ ছিল গণমানুষের দল, তাও এখন সুবিধাবাদী চাটুকারদের দখলে। এখন রাজনীতি কেবল ক্ষমতা, পদ-পদবি, টেন্ডারের জন্য। এটা একান্তই আমার ব্যাক্তিগত অভিমত।

এখন আমার ছাত্রত্ব নেই এবং আমি বিবাহিত। একজন ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য যে দায়িত্ব পালন করার কথা আমার মনে হচ্ছে সেটা পালন করতে আমি ব্যর্থ। অন্যায়ের বিপক্ষে কথা বলা, ছাত্রদের অধিকার, সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে কথা বলার জন্য যথেষ্ট প্রাণশক্তি আমি হারিয়ে ফেলেছি।

যে আদর্শ নিয়ে আমি রাজনীতি করতে চেয়েছিলাম, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি সেই আদর্শের প্রতিফলন করতে পারছি না। আমার মনে হয় আমার জায়গায় এমন কেউ আসুক যে কিনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করবে! যে দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হবে।

আমরা প্রায়ই সমালোচনা করি। দেশের ক্রিকেট, ফুটবলের সভাপতি বা বিভিন্ন এমপি, মন্ত্রী ব্যর্থতা নিয়ে পদত্যাগ করে না কেন। এখন আমি আমার ব্যর্থতা নিয়ে পদত্যাগ করছি না কেন সে প্রশ্নও আমি নিজেকেই করেছি।

আমি আমার বিবেকবোধ থেকে, আমার ব্যর্থতা মেনে নিয়ে ছাত্রলীগের পদ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমার এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমার পরিবার, বন্ধুমহলে কোনো যোগসূত্র নেই। এইটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এবং এও বলছি- আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের আদর্শের রাজনীতির বিশ্বাস করি।
তাই অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমি কখনোই সম্পৃক্ত হবো না এইটা শতভাগ নিশ্চিত।

আমি কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বহন করতে চাই না। অন্য ৮-১০ জন সাধারণ মানুষের মতো, সাধারণ মানুষের পরিচয় নিয়ে সবার মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।’

এ বিষয়ে মো. শরীফ মিয়া যুগান্তরকে জানান, আমি আমার বিবেকের তাড়নায় পদত্যাগ করেছি। বিষয়টি এখনো উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতিকে জানাইনি, তবে জানাব।

নাসিরনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এইচএম শুভ সিদ্দিক বলেন, আমিও ফেসবুক পোস্টটি দেখেছি। এভাবে তো পদত্যাগ করা যায় না, পদত্যাগ করতে হলে লিখিতভাবে জেলা ছাত্রলীগকে জানাতে হবে।