ঢাকা ১১:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খুলনায় লক্ষাধিক অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিকশা: নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ প্রশাসন

মোঃ রবিউল হোসেন খান, খুলনা::

ছবি: সংগৃহীত

খুলনা শহর ও জেলার সড়কজুড়ে লক্ষাধিক ব্যাটারি চালিত রিকশা ও ইজিবাইক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সঠিক পরিসংখ্যান কারো কাছে নেই। কেউ বলছেন ৩০ হাজার, কেউ ৫০ হাজার, আবার কেউ কেউ বলছেন সংখ্যা ইতোমধ্যে এক লাখ ছাড়িয়েছে। অথচ খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) কাগজে-কলমে বৈধভাবে নিবন্ধিত রয়েছে মাত্র ১০ হাজার ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা।

বিদ্যুৎখেকো ও ঝুঁকিপূর্ণ এই বাহনের কোনো নীতিমালা নেই, নেই লাইসেন্স বা ট্যাক্স ব্যবস্থা। এদের বেপরোয়া চলাচলে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে যানজট ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট।

গতকাল রবিবার থেকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) অবৈধ অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। তবে অভিযানে ধরা পড়লেও বেশিরভাগ রিকশা জরিমানা দিয়ে আবার রাস্তায় নেমে যাচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ—এই বাহনগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগায়ই অবৈধভাবে চলছে।

দেশের সর্বোচ্চ আদালত ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করলেও খুলনায় এ রিকশার দৌরাত্ম কমেনি। নাগরিক নেতা অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, কেসিসি এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া এই অবৈধ বাহন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।”

কেসিসির সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার মনিরুজ্জামান রহিম জানান, বৈধ রিকশাগুলোর জন্য এককালীন ১০ হাজার টাকা ও বার্ষিক ২ হাজার টাকা নবায়ন ফি ধার্য করা হয়েছে। কেবল অনুমোদিত ১০ হাজার রিকশাকে RFID কার্ড দেওয়া হচ্ছে। তবে এ সংখ্যা ছাড়িয়ে যে বিপুলসংখ্যক অবৈধ ইজিবাইক চলছে, তা নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের সহযোগিতা পাচ্ছে না কেসিসি।

অন্যদিকে জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর কাজী আবু নাঈম বলেন, “আদালতের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে হলে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। পুলিশের একার পক্ষে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।”

ব্যাটারি রিকশা মালিক-চালক সমিতির নেতাদের অভিযোগ, প্রতিদিনই পুলিশের হাতে আটক হয় অসংখ্য রিকশা, পরে সন্ধ্যার পর হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে অবৈধ বাহনটি পুলিশের কাছে চাঁদাবাজির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।

খুলনা শহর ও জেলায় হাজার হাজার চার্জিং পয়েন্টে দিন-রাত রিকশার ব্যাটারি চার্জ হচ্ছে। এর ফলে বিদ্যুতের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়ে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত লোডশেডিংয়ে ভুগছেন।

নাগরিক সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, ব্যাটারি রিকশাকে নীতিমালার আওতায় আনতে হবে। প্রতিটি রিকশার রেজিস্ট্রেশন, ট্যাক্স, চালকের প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করতে হবে। এতে একদিকে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে, অন্যদিকে ঝুঁকিও কমবে।

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৮:৫২:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫
৫১৮ বার পড়া হয়েছে

খুলনায় লক্ষাধিক অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিকশা: নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ প্রশাসন

আপডেট সময় ০৮:৫২:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫

খুলনা শহর ও জেলার সড়কজুড়ে লক্ষাধিক ব্যাটারি চালিত রিকশা ও ইজিবাইক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সঠিক পরিসংখ্যান কারো কাছে নেই। কেউ বলছেন ৩০ হাজার, কেউ ৫০ হাজার, আবার কেউ কেউ বলছেন সংখ্যা ইতোমধ্যে এক লাখ ছাড়িয়েছে। অথচ খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) কাগজে-কলমে বৈধভাবে নিবন্ধিত রয়েছে মাত্র ১০ হাজার ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা।

বিদ্যুৎখেকো ও ঝুঁকিপূর্ণ এই বাহনের কোনো নীতিমালা নেই, নেই লাইসেন্স বা ট্যাক্স ব্যবস্থা। এদের বেপরোয়া চলাচলে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে যানজট ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট।

গতকাল রবিবার থেকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) অবৈধ অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। তবে অভিযানে ধরা পড়লেও বেশিরভাগ রিকশা জরিমানা দিয়ে আবার রাস্তায় নেমে যাচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ—এই বাহনগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগায়ই অবৈধভাবে চলছে।

দেশের সর্বোচ্চ আদালত ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করলেও খুলনায় এ রিকশার দৌরাত্ম কমেনি। নাগরিক নেতা অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, কেসিসি এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া এই অবৈধ বাহন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।”

কেসিসির সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার মনিরুজ্জামান রহিম জানান, বৈধ রিকশাগুলোর জন্য এককালীন ১০ হাজার টাকা ও বার্ষিক ২ হাজার টাকা নবায়ন ফি ধার্য করা হয়েছে। কেবল অনুমোদিত ১০ হাজার রিকশাকে RFID কার্ড দেওয়া হচ্ছে। তবে এ সংখ্যা ছাড়িয়ে যে বিপুলসংখ্যক অবৈধ ইজিবাইক চলছে, তা নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের সহযোগিতা পাচ্ছে না কেসিসি।

অন্যদিকে জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর কাজী আবু নাঈম বলেন, “আদালতের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে হলে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। পুলিশের একার পক্ষে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।”

ব্যাটারি রিকশা মালিক-চালক সমিতির নেতাদের অভিযোগ, প্রতিদিনই পুলিশের হাতে আটক হয় অসংখ্য রিকশা, পরে সন্ধ্যার পর হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে অবৈধ বাহনটি পুলিশের কাছে চাঁদাবাজির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।

খুলনা শহর ও জেলায় হাজার হাজার চার্জিং পয়েন্টে দিন-রাত রিকশার ব্যাটারি চার্জ হচ্ছে। এর ফলে বিদ্যুতের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়ে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত লোডশেডিংয়ে ভুগছেন।

নাগরিক সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, ব্যাটারি রিকশাকে নীতিমালার আওতায় আনতে হবে। প্রতিটি রিকশার রেজিস্ট্রেশন, ট্যাক্স, চালকের প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করতে হবে। এতে একদিকে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে, অন্যদিকে ঝুঁকিও কমবে।