ঢাকা ০৯:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে নিষিদ্ধ কীটনাশকের অবাধ বিক্রি, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কৃষকরা

মো: গোলাম কিবরিয়া, রাজশাহী প্রতিনিধি::

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর বিভিন্ন কীটনাশক দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ও মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বালাইনাশক। ফলে কৃষক ও ব্যবহারকারীরা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। অথচ বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের তেমন কার্যকর কোনো নজরদারি নেই-এমন অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট গবেষকদের পক্ষ থেকে।

সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজিনাস নলেজ (বারসিক) পরিচালিত এক অনুসন্ধানী মাঠসমীক্ষায় উঠে এসেছে ভয়াবহ এই চিত্র। “জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব” শীর্ষক এ গবেষণাটি রাজশাহীর আটটি উপজেলার ১৯টি কৃষিপ্রধান গ্রামে পরিচালিত হয়।

সমীক্ষা অনুযায়ী, নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ৬৮ শতাংশ ব্যবহারকারী, অথচ ৯৩ শতাংশের বেশি ব্যবহারকারী জানেনই না যে, তারা নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহার করছেন।

এছাড়া গবেষণায় দেখা যায়, ৯৯ শতাংশ দোকানে নিয়মিত বিক্রি হচ্ছে এ ধরনের কীটনাশক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওষুধের মোড়ক পরিবর্তন করে তা বিক্রি করা হচ্ছে, ফলে সাধারণ ক্রেতা বুঝতেই পারছেন না ওষুধটি নিষিদ্ধ কিনা।

গবেষণায় যেসব কীটনাশকের নাম উঠে এসেছে-জিরো হার্ব-২০ এসএল (প্যারাকোয়াট), ফুরাডান ৫জি (কার্বারাইল), এরোক্সান-২০ এসএল (প্যারাকোয়াট), গ্যাস ট্যাবলেট (অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড), কার্বোফোরান-৩ জিএসআই (কার্বোফোরান), ইঁদুরনাশক (ব্রোডিফ্যাকোয়াম), তালাফ-২০ এসএল (প্যারাকোয়াট)।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবচেয়ে বিপজ্জনক কীটনাশক হলো ‘প্যারাকোয়াট’, যা আগাছা দমনে ব্যবহৃত হলেও শরীরে প্রবেশ করলে কিডনি বিকলসহ শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। এ ওষুধ আত্মহত্যার মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজশাহীর একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়ক শহিদুল ইসলাম বলেন, “এই নিষিদ্ধ ওষুধের ব্যবহার জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকে চরম হুমকির মুখে ফেলছে।”

বারসিকের নির্বাহী পরিচালক পাভেল পার্থ বলেন, “আমি নিজেও রাজশাহীর বাজার থেকে বেশকিছু নিষিদ্ধ কীটনাশক কিনে এনেছি, রসিদও রয়েছে। এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। প্রশাসনের এখনই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।”

তিনি কীটনাশক বিক্রয় ও ব্যবহার সংক্রান্ত আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, কীটনাশকজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি রেজিস্ট্রার চালু এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠনের সুপারিশ করেন।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. আজিজুর রহমান বলেন, “বারসিকের প্রতিবেদনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এটি আমলে নিচ্ছি এবং দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৫:১৬:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫
৫১৮ বার পড়া হয়েছে

রাজশাহীতে নিষিদ্ধ কীটনাশকের অবাধ বিক্রি, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কৃষকরা

আপডেট সময় ০৫:১৬:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫

রাজশাহীর বিভিন্ন কীটনাশক দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ও মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বালাইনাশক। ফলে কৃষক ও ব্যবহারকারীরা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। অথচ বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের তেমন কার্যকর কোনো নজরদারি নেই-এমন অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট গবেষকদের পক্ষ থেকে।

সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজিনাস নলেজ (বারসিক) পরিচালিত এক অনুসন্ধানী মাঠসমীক্ষায় উঠে এসেছে ভয়াবহ এই চিত্র। “জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব” শীর্ষক এ গবেষণাটি রাজশাহীর আটটি উপজেলার ১৯টি কৃষিপ্রধান গ্রামে পরিচালিত হয়।

সমীক্ষা অনুযায়ী, নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ৬৮ শতাংশ ব্যবহারকারী, অথচ ৯৩ শতাংশের বেশি ব্যবহারকারী জানেনই না যে, তারা নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহার করছেন।

এছাড়া গবেষণায় দেখা যায়, ৯৯ শতাংশ দোকানে নিয়মিত বিক্রি হচ্ছে এ ধরনের কীটনাশক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওষুধের মোড়ক পরিবর্তন করে তা বিক্রি করা হচ্ছে, ফলে সাধারণ ক্রেতা বুঝতেই পারছেন না ওষুধটি নিষিদ্ধ কিনা।

গবেষণায় যেসব কীটনাশকের নাম উঠে এসেছে-জিরো হার্ব-২০ এসএল (প্যারাকোয়াট), ফুরাডান ৫জি (কার্বারাইল), এরোক্সান-২০ এসএল (প্যারাকোয়াট), গ্যাস ট্যাবলেট (অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড), কার্বোফোরান-৩ জিএসআই (কার্বোফোরান), ইঁদুরনাশক (ব্রোডিফ্যাকোয়াম), তালাফ-২০ এসএল (প্যারাকোয়াট)।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবচেয়ে বিপজ্জনক কীটনাশক হলো ‘প্যারাকোয়াট’, যা আগাছা দমনে ব্যবহৃত হলেও শরীরে প্রবেশ করলে কিডনি বিকলসহ শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। এ ওষুধ আত্মহত্যার মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজশাহীর একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়ক শহিদুল ইসলাম বলেন, “এই নিষিদ্ধ ওষুধের ব্যবহার জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকে চরম হুমকির মুখে ফেলছে।”

বারসিকের নির্বাহী পরিচালক পাভেল পার্থ বলেন, “আমি নিজেও রাজশাহীর বাজার থেকে বেশকিছু নিষিদ্ধ কীটনাশক কিনে এনেছি, রসিদও রয়েছে। এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। প্রশাসনের এখনই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।”

তিনি কীটনাশক বিক্রয় ও ব্যবহার সংক্রান্ত আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, কীটনাশকজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি রেজিস্ট্রার চালু এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠনের সুপারিশ করেন।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. আজিজুর রহমান বলেন, “বারসিকের প্রতিবেদনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এটি আমলে নিচ্ছি এবং দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”