ঢাকা ০৫:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টাকা না পেয়ে রোগীকে চারদিন আটকে রাখার চাঞ্চল্যকর ঘটনা

বাগমারায় সাব্বির ক্লিনিকে অতিরিক্ত বিল নেওয়ার অভিযোগ

মো: গোলাম কিবরিয়া, রাজশাহী প্রতিনিধি::

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরে ‘ডা. সাব্বির ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক’-এ এক রোগীকে অতিরিক্ত বিলের নামে চার দিন আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পর পুলিশের হস্তক্ষেপে গতকাল শুক্রবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় রোগীকে মুক্ত করে বাড়ি নিয়ে যায় তার পরিবার।

ঘটনাটি ঘটে তাহেরপুর পৌরসভার হরিতালা এলাকায়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ৫০ বছর বয়সী রোগী সুশান্ত কুমারের কাছ থেকে দাবি করে ৬৭ হাজার ৭২০ টাকা। অর্থের অভাবে রোগীকে ছাড়পত্র না দিয়ে চারদিন ‘আটকে’ রাখা হয় বলে অভিযোগ করেন স্বজনেরা।

সুশান্ত কুমার দুর্গাপুর উপজেলার কয়ামাজমপুর গ্রামের বাসিন্দা। পারিবারিক বিরোধের জেরে গত ২৬ জুলাই তিনি বিষপান করলে পরিবারের সদস্যরা তাকে তাহেরপুরের ওই ক্লিনিকে ভর্তি করান। সেখানে বিষ ওয়াশ ও পর্যবেক্ষণের পর দুই দিন চিকিৎসা চলে। তবে ২৮ জুলাই রোগীকে বাড়ি নিতে চাইলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ৩০ জুলাই আবার গেলে হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় প্রায় ৬৮ হাজার টাকার বিল এবং জানানো হয়, টাকা না দিলে ছাড়পত্র মিলবে না।

রোগীর ছোট ভাই সঞ্জয় কুমার বলেন, “আমরা তো গরিব মানুষ দাদা, ঠিকমতো খাবারই পাই না। কয়েক দিন ধরে ভাইকে আটকে রেখে ৬৭ হাজার টাকা দাবি করছে। হাতে-পায়ে ধরে পাঁচ হাজার টাকা কমিয়েছে। এত টাকা দিবো কোথা থেকে?”

রোগীর হাতে ধরিয়ে দেওয়া বিলের কপি থেকে দেখা যায়-বিষ ওয়াশ ১৯,০০০ টাকা, চার দিনের ওষুধ ১৯,৮২০ টাকা, অস্ত্রোপচার কক্ষ ব্যবহার ৯,০০০ টাকা, অন্যান্য খাতেও বেশ কিছু ‘অস্বাভাবিক’ অঙ্কে চার্জ বসানো হয়েছে।

তিনজন চিকিৎসক ও চারজন ক্লিনিক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “এই ধরনের রোগীর চিকিৎসায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা নয়।”

ঘটনার প্রতিবাদ করে রোগীর প্রতিবেশী আশরাফুল ইসলাম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। তিনি জানান, “আমি নিজেও রোগী ছাড়াতে গিয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় একটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের হুমকির কারণে আর এগোতে পারিনি।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই ক্লিনিকটির বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বিল আদায়ের অভিযোগ শেয়ার করেছেন এবং শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ক্লিনিক পরিচালক সাব্বির হোসেন-যিনি উপজেলা ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি—তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া দেননি।

তবে ক্লিনিকের চিকিৎসক আবদুস সাত্তার রোগী আটকে রাখার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “বিলটি অস্বাভাবিক ছিল না। আমরা অতিরিক্ত বিল করি না।”

রাজশাহীর সিভিল সার্জন এস আই এম রাজিউল করিম বলেন, “এই বিল অস্বাভাবিক। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।”

ঘটনার পর স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যস্থতায় পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। তাহেরপুর তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা বলেন, “উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে সমাধান করেছি।”

রোগীর প্রতিবেশী আজাদ হোসেন জানান, “রোগী খুবই অসচ্ছল। তাই এলাকার লোকজন টাকা তুলে তাকে ছাড়িয়ে এনেছি।”

ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়দের মতে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। তারা বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতে নিয়মশৃঙ্খলা এবং জবাবদিহিতার দাবি জানিয়েছেন।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৯:২০:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫
৫২৪ বার পড়া হয়েছে

টাকা না পেয়ে রোগীকে চারদিন আটকে রাখার চাঞ্চল্যকর ঘটনা

বাগমারায় সাব্বির ক্লিনিকে অতিরিক্ত বিল নেওয়ার অভিযোগ

আপডেট সময় ০৯:২০:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরে ‘ডা. সাব্বির ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক’-এ এক রোগীকে অতিরিক্ত বিলের নামে চার দিন আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পর পুলিশের হস্তক্ষেপে গতকাল শুক্রবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় রোগীকে মুক্ত করে বাড়ি নিয়ে যায় তার পরিবার।

ঘটনাটি ঘটে তাহেরপুর পৌরসভার হরিতালা এলাকায়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ৫০ বছর বয়সী রোগী সুশান্ত কুমারের কাছ থেকে দাবি করে ৬৭ হাজার ৭২০ টাকা। অর্থের অভাবে রোগীকে ছাড়পত্র না দিয়ে চারদিন ‘আটকে’ রাখা হয় বলে অভিযোগ করেন স্বজনেরা।

সুশান্ত কুমার দুর্গাপুর উপজেলার কয়ামাজমপুর গ্রামের বাসিন্দা। পারিবারিক বিরোধের জেরে গত ২৬ জুলাই তিনি বিষপান করলে পরিবারের সদস্যরা তাকে তাহেরপুরের ওই ক্লিনিকে ভর্তি করান। সেখানে বিষ ওয়াশ ও পর্যবেক্ষণের পর দুই দিন চিকিৎসা চলে। তবে ২৮ জুলাই রোগীকে বাড়ি নিতে চাইলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ৩০ জুলাই আবার গেলে হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় প্রায় ৬৮ হাজার টাকার বিল এবং জানানো হয়, টাকা না দিলে ছাড়পত্র মিলবে না।

রোগীর ছোট ভাই সঞ্জয় কুমার বলেন, “আমরা তো গরিব মানুষ দাদা, ঠিকমতো খাবারই পাই না। কয়েক দিন ধরে ভাইকে আটকে রেখে ৬৭ হাজার টাকা দাবি করছে। হাতে-পায়ে ধরে পাঁচ হাজার টাকা কমিয়েছে। এত টাকা দিবো কোথা থেকে?”

রোগীর হাতে ধরিয়ে দেওয়া বিলের কপি থেকে দেখা যায়-বিষ ওয়াশ ১৯,০০০ টাকা, চার দিনের ওষুধ ১৯,৮২০ টাকা, অস্ত্রোপচার কক্ষ ব্যবহার ৯,০০০ টাকা, অন্যান্য খাতেও বেশ কিছু ‘অস্বাভাবিক’ অঙ্কে চার্জ বসানো হয়েছে।

তিনজন চিকিৎসক ও চারজন ক্লিনিক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “এই ধরনের রোগীর চিকিৎসায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা নয়।”

ঘটনার প্রতিবাদ করে রোগীর প্রতিবেশী আশরাফুল ইসলাম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। তিনি জানান, “আমি নিজেও রোগী ছাড়াতে গিয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় একটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের হুমকির কারণে আর এগোতে পারিনি।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই ক্লিনিকটির বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বিল আদায়ের অভিযোগ শেয়ার করেছেন এবং শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ক্লিনিক পরিচালক সাব্বির হোসেন-যিনি উপজেলা ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি—তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া দেননি।

তবে ক্লিনিকের চিকিৎসক আবদুস সাত্তার রোগী আটকে রাখার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “বিলটি অস্বাভাবিক ছিল না। আমরা অতিরিক্ত বিল করি না।”

রাজশাহীর সিভিল সার্জন এস আই এম রাজিউল করিম বলেন, “এই বিল অস্বাভাবিক। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।”

ঘটনার পর স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যস্থতায় পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। তাহেরপুর তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা বলেন, “উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে সমাধান করেছি।”

রোগীর প্রতিবেশী আজাদ হোসেন জানান, “রোগী খুবই অসচ্ছল। তাই এলাকার লোকজন টাকা তুলে তাকে ছাড়িয়ে এনেছি।”

ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়দের মতে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। তারা বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতে নিয়মশৃঙ্খলা এবং জবাবদিহিতার দাবি জানিয়েছেন।