প্রবাসে বাংলাদেশিদের জীবন: অভাব, সংগ্রাম ও সাফল্য
প্রবাসজীবন মানে শুধু কাজের সন্ধানে বিদেশ যাওয়া নয়-এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্বপ্ন, সংগ্রাম, ত্যাগ এবং সাফল্যের এক দীর্ঘ উপাখ্যান। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা কোটি বাংলাদেশি তাদের কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ় সংকল্প এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য দিয়ে স্বাগতিক দেশগুলোতে যেমন অবদান রাখছেন, তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও রেখে চলেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
প্রবাস জীবনের এক বড় অংশ জুড়ে আছে একাকীত্ব। ঈদের দিন যখন দেশের মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে, তখন অনেক প্রবাসীকে কাটাতে হয় নিঃসঙ্গ চার দেয়ালের মাঝে। তবে তারা নিজেদের মতো করে উৎসব উদযাপনের চেষ্টা করেন—রুমমেটদের সঙ্গে রান্নাবান্না, কুশল বিনিময়, ছোটখাটো আয়োজন—এসবই যেন কিছুটা হলেও দেশের ঘ্রাণ এনে দেয় প্রবাসে।
প্রবাসজীবনে বাংলাদেশিদের প্রতিদিনের সংগ্রাম শুরু হয় নতুন দেশের ভাষা, সংস্কৃতি ও সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া থেকে। যারা স্বাগতিক দেশের ভাষা জানেন না, তাদের জন্য এটি হয় আরও কঠিন।
এছাড়া-যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি না পাওয়া, কম বেতনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য ও হয়রানি, দালালের মাধ্যমে প্রতারণা, আইনি জটিলতা ও অবৈধ অবস্থানজনিত ঝুঁকি।
এসব চ্যালেঞ্জ তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এক বিশাল সহায়ক শক্তি। প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেশে আসে, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ায় এবং জাতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সহায়তা করে।
রেমিট্যান্স শুধু অর্থনীতিই বদলায় না, এটি দেশের গ্রামীণ জীবনেও পরিবর্তন আনে। বহু পরিবার অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়, সন্তানদের পড়াশোনা, স্বাস্থ্যসেবা ও জীবনমানের উন্নয়ন ঘটায়।
বাংলাদেশি প্রবাসীরা বিদেশের মাটিতেও বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি ধরে রেখেছেন। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বাংলা স্কুল, মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশি পণ্য ব্যবহার করে তারা দেশের ঐতিহ্য তুলে ধরছেন। এটি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তুলছে।
চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও প্রবাসীদের সাফল্য এবং অবদান অনস্বীকার্য। তাই তাদের জীবনমান উন্নয়ন, অধিকার রক্ষা এবং আইনগত সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
একইসঙ্গে নতুন প্রজন্মকে প্রবাসজীবনের বাস্তবতা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা সুপরিকল্পিতভাবে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।