লাখাইয়ে শিক্ষক সংকটে ব্যাহত পাঠদান, বিদ্যালয়ে অনিয়ম ও জনবল সংকট প্রকট
হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে চরম শিক্ষক সংকট, জনবল স্বল্পতা ও নানাবিধ অনিয়মে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যেমন বঞ্চিত হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ থেকে, তেমনি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন অভিভাবকরাও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে মোট ৭২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে অনুমোদিত শিক্ষক-পদসংখ্যা ৪৫৫টি। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের ৭২টি পদের মধ্যে ১৮টি এবং সহকারী শিক্ষকের ৩৮৩টি পদের মধ্যে ২৬টি শূন্য রয়েছে। এছাড়াও ৬টি প্রধান শিক্ষক পদের বিষয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।
জানা যায়, মামলার আওতায় থাকা বিদ্যালয়গুলো হলো: আব্দুর রহিম, কালাউক বাজার, হেলারকান্দী, চান্দপুর, চরগাঁও ও দক্ষিণ করাব পৃথভোষন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই ৭২টি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৯,৮৫০ জন। তবে শিক্ষক সংকটের কারণে যথাযথভাবে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক হবিগঞ্জ শহরে বসবাস করায় তারা সময়মতো বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন না বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই ইচ্ছেমতো এসে হাজিরা দিয়ে থাকেন, যা নিয়মানুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, শিক্ষক সংকটের পাশাপাশি নিয়মিত অনুপস্থিতির কারণে শিক্ষার পরিবেশ ভেঙে পড়েছে। অনেক বিদ্যালয়ে নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে পাঠদান হয় না।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জামাল উদ্দিন বলেন, “আমার দপ্তরে ৫টি অনুমোদিত পদ থাকলেও সবগুলো শূন্য। সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার তিনটি পদের মধ্যে মাত্র একজন রয়েছেন। এই জনবল সংকটে আমি নিজেই নিয়মিত পরিদর্শনে যেতে পারছি না। অফিস চালাতে বাধ্য হয়ে একটি বিদ্যালয় থেকে একজন শিক্ষক এনে অস্থায়ীভাবে কাজ করাতে হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষকদের সময়মতো উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হলে প্রযুক্তির সহায়তায় গুগল অ্যাপস ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে।”
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, “শূন্য পদ পূরণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই পদগুলো পূরণ হবে। এছাড়া, শিক্ষকদের উপস্থিতি নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়রা বলছেন, শিক্ষক ও জনবল সংকট নিরসন এবং সময়মতো বিদ্যালয়ে উপস্থিতি নিশ্চিত না হলে শিক্ষার মান আরও নীচে নেমে যাবে। এতে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ চরম হুমকির মুখে পড়বে বলেও তারা শঙ্কা প্রকাশ করেন।