ঢাকা ০৯:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

“এনসিপির দুই উপদেষ্টা পদত্যাগ না করলে বিদায় করুন”-ড. ইউনুসকে সালাউদ্দিন আহমেদ

মোঃ রবিউল হোসেন খান, খুলনা::

জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ড. ইউনুস সরকারের দুই উপদেষ্টাকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ।

শনিবার (১৭ মে) বিকাল ৩টায় খুলনার সার্কিট হাউজ মাঠে অনুষ্ঠিত “তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে” প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “এই সরকারের একমাত্র ম্যান্ডেট হলো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। আমরা আগেই বলেছি, নির্বাচনমুখী জরুরি সংস্কার করে ডিসেম্বরেই ভোট দিতে হবে। কিন্তু এখন সরকার নিজের ক্ষমতা ছাড়তে চায় না।”

তিনি ড. ইউনুসকে উদ্দেশ করে বলেন, “মানুষ এখন বলছে—আপনার সরকার এনসিপি মার্কা সরকার। আপনার সরকারের দুই উপদেষ্টা এনসিপি’র সঙ্গে জড়িত। যদিও তারা অফিসিয়ালি সংগঠনের নেতৃত্বে নেই, তবে তারা জড়িত—এটা ওপেন সিক্রেট। আপনি যদি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান, তাহলে তাদের পদত্যাগ করতে বলুন, না হলে আপনি নিজেই বিদায় করুন।”

সালাউদ্দিন আহমেদ আরও অভিযোগ করেন, “আপনার সরকারে একজন বিদেশি নাগরিককে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করা হয়েছে। এই দেশের সেনাবাহিনী তার কাছে নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেবে—এটা কেমন কথা? তিনি মানবিক করিডোরের নামে রোহিঙ্গা ইস্যুকে পুঁজি করে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চাচ্ছেন। আমরা এটা হতে দেব না।”

তিনি স্পষ্টভাবে জানান, “এই দেশের নিরাপত্তা বিষয়ে কোনো দায়িত্ব বিদেশি নাগরিকের হাতে থাকতে পারে না। সেই উপদেষ্টা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তাই তাকে অপসারণ করুন।”

ড. ইউনুসের উদ্দেশে সালাউদ্দিন বলেন, “আপনার একমাত্র কাজ হচ্ছে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। আপনি যদি চুক্তি করে এসেছেন দেশের সমুদ্র বন্দর, নদী বন্দর, করিডোর বিদেশিদের হাতে তুলে দেবেন—তা হলে সেটাও জাতিকে জানান।”

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “নির্বাচনের দাবিতে একদিন হয়তো এই সরকারকেই ঘেরাও করতে হবে। তখন যদি জাতি যমুনা মুখী লংমার্চে নামে, সেটা দুর্ভাগ্যজনক হবে।”

সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না। বিশেষ বক্তা ছিলেন সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস. এম. জিলানী এবং যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন। সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সঞ্চালনা করেন সেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাকিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাছির।

মাঠজুড়ে ছিল হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ১৮টি জেলার ছাত্রদল, যুবদল ও সেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন সমাবেশে। তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করে আশপাশের গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিয়েও মাঠে ছিলেন নেতাকর্মীরা।
৬০ ফুট প্রশস্ত ও ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের মঞ্চে আয়োজন করা হয় সমাবেশটি। আশপাশে স্থাপন করা হয় ১৫০টি মাইক, ৪টি সেটআপ লাইনারি এবং ৩০ জোড়া সাউন্ড সিস্টেম। মাঠে ছিল মেডিকেল ক্যাম্প ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা।

উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা—ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা মহানগর সভাপতি এস. এম. শফিকুল আলম মনা, জেলা আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, সাধারণ সম্পাদক এস. এম. শফিকুলআলম তুহিন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম প্রমুখ।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ১১:৪৬:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
৫৩৩ বার পড়া হয়েছে

“এনসিপির দুই উপদেষ্টা পদত্যাগ না করলে বিদায় করুন”-ড. ইউনুসকে সালাউদ্দিন আহমেদ

আপডেট সময় ১১:৪৬:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫

জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ড. ইউনুস সরকারের দুই উপদেষ্টাকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ।

শনিবার (১৭ মে) বিকাল ৩টায় খুলনার সার্কিট হাউজ মাঠে অনুষ্ঠিত “তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে” প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “এই সরকারের একমাত্র ম্যান্ডেট হলো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। আমরা আগেই বলেছি, নির্বাচনমুখী জরুরি সংস্কার করে ডিসেম্বরেই ভোট দিতে হবে। কিন্তু এখন সরকার নিজের ক্ষমতা ছাড়তে চায় না।”

তিনি ড. ইউনুসকে উদ্দেশ করে বলেন, “মানুষ এখন বলছে—আপনার সরকার এনসিপি মার্কা সরকার। আপনার সরকারের দুই উপদেষ্টা এনসিপি’র সঙ্গে জড়িত। যদিও তারা অফিসিয়ালি সংগঠনের নেতৃত্বে নেই, তবে তারা জড়িত—এটা ওপেন সিক্রেট। আপনি যদি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান, তাহলে তাদের পদত্যাগ করতে বলুন, না হলে আপনি নিজেই বিদায় করুন।”

সালাউদ্দিন আহমেদ আরও অভিযোগ করেন, “আপনার সরকারে একজন বিদেশি নাগরিককে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করা হয়েছে। এই দেশের সেনাবাহিনী তার কাছে নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেবে—এটা কেমন কথা? তিনি মানবিক করিডোরের নামে রোহিঙ্গা ইস্যুকে পুঁজি করে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চাচ্ছেন। আমরা এটা হতে দেব না।”

তিনি স্পষ্টভাবে জানান, “এই দেশের নিরাপত্তা বিষয়ে কোনো দায়িত্ব বিদেশি নাগরিকের হাতে থাকতে পারে না। সেই উপদেষ্টা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তাই তাকে অপসারণ করুন।”

ড. ইউনুসের উদ্দেশে সালাউদ্দিন বলেন, “আপনার একমাত্র কাজ হচ্ছে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। আপনি যদি চুক্তি করে এসেছেন দেশের সমুদ্র বন্দর, নদী বন্দর, করিডোর বিদেশিদের হাতে তুলে দেবেন—তা হলে সেটাও জাতিকে জানান।”

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “নির্বাচনের দাবিতে একদিন হয়তো এই সরকারকেই ঘেরাও করতে হবে। তখন যদি জাতি যমুনা মুখী লংমার্চে নামে, সেটা দুর্ভাগ্যজনক হবে।”

সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না। বিশেষ বক্তা ছিলেন সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস. এম. জিলানী এবং যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন। সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সঞ্চালনা করেন সেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাকিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাছির।

মাঠজুড়ে ছিল হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ১৮টি জেলার ছাত্রদল, যুবদল ও সেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন সমাবেশে। তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করে আশপাশের গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিয়েও মাঠে ছিলেন নেতাকর্মীরা।
৬০ ফুট প্রশস্ত ও ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের মঞ্চে আয়োজন করা হয় সমাবেশটি। আশপাশে স্থাপন করা হয় ১৫০টি মাইক, ৪টি সেটআপ লাইনারি এবং ৩০ জোড়া সাউন্ড সিস্টেম। মাঠে ছিল মেডিকেল ক্যাম্প ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা।

উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা—ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা মহানগর সভাপতি এস. এম. শফিকুল আলম মনা, জেলা আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, সাধারণ সম্পাদক এস. এম. শফিকুলআলম তুহিন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম প্রমুখ।