মুরগি-সবজির বাজারে আগুন, চাপে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা
রাজধানীসহ দেশের বাজারে আবারও নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে সবজি ও মুরগির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদন খরচ ও পরিবহণ ব্যয় বাড়লেও ভোক্তাদের অভিযোগ—বাজারে চলছে অসাধু সিন্ডিকেটের কারসাজি।
শুক্রবার (৯ মে) সকালে রাজধানীর খুচরা বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেশিরভাগ সবজির দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
যেসব সবজি আগে ৫০-৬০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন সেগুলোর দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকায় পৌঁছেছে। বেগুন, করলা, ঢেঁড়স, পটোল, ঝিঙে, শসা, কাঁকরোল, কচুর লতি সবকিছুরই দাম ঊর্ধ্বমুখী।
সবজির বর্তমান বাজারদর (কেজিপ্রতি):
-
করলা: ৭০–৮০ টাকা
-
বেগুন: ৮০–১০০ টাকা
-
বরবটি: ৮০ টাকা
-
চিচিঙ্গা: ৭০–৮০ টাকা
-
কাঁকরোল: ১০০–১৩০ টাকা
-
ঢেঁড়স: ৫০–৭০ টাকা
-
ঝিঙে: ৭০–৮০ টাকা
-
পেঁপে: ৭০ টাকা
-
গাজর: ৪০ টাকা
-
শসা: ৭০–৮০ টাকা
-
পটোল: ৭০–৮০ টাকা
-
সজনে ডাটা: ১২০–১৪০ টাকা
এছাড়া পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দামও ঊর্ধ্বমুখী। দুই সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। আদা ও রসুনের দামেও বাড়তি চাপ লক্ষ করা গেছে।
মুরগির বাজারেও চড়া দাম:
-
ব্রয়লার মুরগি: ১৭০–১৮০ টাকা
-
সোনালি মুরগি: ৩২০ টাকা
-
কক মুরগি: ৩৩০ টাকা
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফিডের দাম ও উৎপাদন খরচ বাড়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে অনেকের মতে, বাজারে একশ্রেণির মজুতদার ইচ্ছাকৃতভাবে সংকট তৈরি করে বাড়তি মুনাফা করছে।
মাংস ও মাছের বাজার:
-
গরুর মাংস: ৭৫০–৮০০ টাকা
-
খাসির মাংস: ১২০০ টাকা
-
ছাগলের মাংস: ১১০০ টাকা
-
রুই: ৩৫০–৪২০ টাকা
-
কাতল: ৩৮০–৪৫০ টাকা
-
মাগুর: ৫০০ টাকা
-
তেলাপিয়া: ১৫০–২২০ টাকা
বাজারে আসা খিলক্ষেতের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম বলেন, “সবজির দাম শুনলেই ভয় লাগে। মুরগি কিনতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। মনে হচ্ছে এবার শুধু ডাল-ভাতেই দিন চালাতে হবে।”
একই ধরনের অভিযোগ চাকরিজীবী দিনেশ কুমারের, “মাসের শুরুতেই বাজার করতে গিয়ে বেতনের অর্ধেক চলে যায়। সরকার কিছু না করলে সামনে বাজারে যেতেই পারব না।”
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে অবিলম্বে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ বাড়ানো, কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি পণ্য সংগ্রহ, বাজার মনিটরিং জোরদার এবং মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
তারা মনে করেন, সরবরাহ চেইনের দুর্বলতা ও ব্যবস্থাপনার অভাবেই বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে কৃষি উৎপাদন ও পরিবহণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ছাড়া এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন।