ঢাকা ০৪:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হবিগঞ্জ হাসপাতালে নোটিশ: ‘৩০ জনের বেশি রোগী নয়’

স্টাফ রিপোর্টার::

হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে সার্জারি বিভাগে একজন চিকিৎসক দায়িত্বরত থাকায় প্রতিনিয়ত রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এরইমধ্যে হাসপাতালের একমাত্র সার্জারি চিকিৎসক জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ অনুজ কান্তি দাশ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি একদিনে ৩০ জনের বেশি রোগী দেখবেন না। বিষয়টি নিয়ে রোগীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৬০০-এর বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এর মধ্যে বড় একটি অংশকে সার্জারি বিভাগে রেফার করা হয়। অথচ সার্জারি বিভাগের ৪টি পদের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছেন কেবল ডাঃ অনুজ দাশ। ফলে রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এবং অনেক রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

সম্প্রতি হাসপাতালের ২১৪ নম্বর কক্ষে ডাঃ অনুজ দাশের চেম্বারের দরজায় দেখা যায় একটি নোটিশ। “৩০ (ত্রিশ) জনের বেশি রোগী দেখা হয় না।” এই লিখিত ঘোষণায় চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রোগীরা।

ভুক্তভোগী আব্দুর রউফ বলেন, “সার্জারি বিভাগের একমাত্র চিকিৎসক যদি মাত্র ৩০ জন রোগী দেখেন, তাহলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের চিকিৎসা কোথায় হবে? বাধ্য হয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।”

মনোহর মিয়া নামে আরেক রোগী বলেন, “একাধিক দিন ধরে হাসপাতালে আসছি, কিন্তু ৩০ জনের বেশি রোগী দেখা না হলে আমরা চিকিৎসা পাব কিভাবে?”

এমন অবস্থায় সচেতন মহল বিষয়টিকে অমানবিক ও অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে অবিলম্বে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আমিনুল হক সরকার বলেন, “সরকারি হাসপাতালে কোনো রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও আমাকে কল দিয়েছেন। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।”

অভিযোগের বিষয়ে ডাঃ অনুজ কান্তি দাশ বলেন, “আমি সার্জারি ওয়ার্ড ও অপারেশন থিয়েটারে একাই কাজ করি। অস্ত্রোপচার করতে হয় নিয়মিত। তাই বহির্বিভাগে সময় দেওয়া কঠিন। পরিস্থিতি বিবেচনায় অন্তত ৩০ জন রোগী দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাই নোটিশ দিয়েছি।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সম্প্রতি হাসপাতালটি পরিদর্শনে গিয়ে চিকিৎসক সংকট নিয়ে কথা বললেও এখনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগ এবং রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৭:৪৬:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫
৫৩০ বার পড়া হয়েছে

হবিগঞ্জ হাসপাতালে নোটিশ: ‘৩০ জনের বেশি রোগী নয়’

আপডেট সময় ০৭:৪৬:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫

হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে সার্জারি বিভাগে একজন চিকিৎসক দায়িত্বরত থাকায় প্রতিনিয়ত রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এরইমধ্যে হাসপাতালের একমাত্র সার্জারি চিকিৎসক জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ অনুজ কান্তি দাশ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি একদিনে ৩০ জনের বেশি রোগী দেখবেন না। বিষয়টি নিয়ে রোগীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৬০০-এর বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এর মধ্যে বড় একটি অংশকে সার্জারি বিভাগে রেফার করা হয়। অথচ সার্জারি বিভাগের ৪টি পদের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছেন কেবল ডাঃ অনুজ দাশ। ফলে রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এবং অনেক রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

সম্প্রতি হাসপাতালের ২১৪ নম্বর কক্ষে ডাঃ অনুজ দাশের চেম্বারের দরজায় দেখা যায় একটি নোটিশ। “৩০ (ত্রিশ) জনের বেশি রোগী দেখা হয় না।” এই লিখিত ঘোষণায় চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রোগীরা।

ভুক্তভোগী আব্দুর রউফ বলেন, “সার্জারি বিভাগের একমাত্র চিকিৎসক যদি মাত্র ৩০ জন রোগী দেখেন, তাহলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের চিকিৎসা কোথায় হবে? বাধ্য হয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।”

মনোহর মিয়া নামে আরেক রোগী বলেন, “একাধিক দিন ধরে হাসপাতালে আসছি, কিন্তু ৩০ জনের বেশি রোগী দেখা না হলে আমরা চিকিৎসা পাব কিভাবে?”

এমন অবস্থায় সচেতন মহল বিষয়টিকে অমানবিক ও অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে অবিলম্বে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আমিনুল হক সরকার বলেন, “সরকারি হাসপাতালে কোনো রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও আমাকে কল দিয়েছেন। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।”

অভিযোগের বিষয়ে ডাঃ অনুজ কান্তি দাশ বলেন, “আমি সার্জারি ওয়ার্ড ও অপারেশন থিয়েটারে একাই কাজ করি। অস্ত্রোপচার করতে হয় নিয়মিত। তাই বহির্বিভাগে সময় দেওয়া কঠিন। পরিস্থিতি বিবেচনায় অন্তত ৩০ জন রোগী দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাই নোটিশ দিয়েছি।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সম্প্রতি হাসপাতালটি পরিদর্শনে গিয়ে চিকিৎসক সংকট নিয়ে কথা বললেও এখনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগ এবং রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।