ঢাকা ১১:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের সেই ঘূর্ণিঝড় আজও ভুলতে পারেননি সাংবাদিক শফিউল আলম

রয়েল দত্ত, রাউজান, চট্টগ্রাম::

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের সেই প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের স্মৃতি আজও গভীর কষ্টে স্মরণ করেন প্রবীণ সাংবাদিক ও রাউজান প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিউল আলম। ওইদিন তিনি হারান তার সাত বছর বয়সী প্রিয় পুত্র মহিউদ্দিনকে। সেই শোক আজও তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়, হয়ে উঠেছে পারিবারিক ইতিহাসের এক করুণ অধ্যায়।

শফিউল আলম জানান, “ঘূর্ণিঝড়ের সেই রাতে আমার পুত্র ঘরের ভেতর ঘুমিয়ে ছিল, আমি ছিলাম বাইরে। হঠাৎ আমার মা দেলোয়ারা খাতুন কান্নারত অবস্থায় এসে আমাকে জানান, আমার একমাত্র ছেলে মহিউদ্দিন আর নেই — ঘরের চাপায় মারা গেছে। সেই মুহূর্তটা আজও আমি ভুলতে পারিনি।”

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল বিকেলে শফিউল আলম তার ছেলে মহিউদ্দিনকে নিয়ে রমজান আলীর হাটে ঘুরতে যান। ঘরে ফিরে তারা একসাথে আসর ও মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। এরপর রাতেই শুরু হয় সেই ভয়াল ঘূর্ণিঝড়। শফিউল আলম ঘর ছেড়ে বাইরে গিয়ে প্রতিবেশীদের ঘর বিধ্বস্ত হওয়ার দৃশ্য দেখছিলেন, আর তখনই ঘটে যায় জীবনের সবচেয়ে করুণ দুর্ঘটনাটি।

রাউজানের মোহাম্মদপুরের বাড়িতে সেই রাতে ঘরের ভিতরে ঘুমিয়ে থাকা পুত্র মহিউদ্দিন ঘরের চাল চাপায় মারা যান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে শফিউল আলম বলেন, “সেই রাতের পর আর কখনো আমি আমার পৈতৃক ঘরে থাকিনি। ছেলে হারানোর বেদনা আমাকে আজীবনের মতো সেই ঘর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।”

ঘূর্ণিঝড়ের পরদিন ৩০ এপ্রিল সকালে আশপাশের বাড়ি ও সড়কগুলো বিধ্বস্ত থাকায় কোথাও যাওয়ার উপায় ছিল না। পরে সকাল ১১টায় রাউজান মুহাম্মদপুরের মহিউল উলুম মাদ্রাসা সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে প্রিয় পুত্র মহিউদ্দিনের দাফন সম্পন্ন হয়।

শফিউল আলম বলেন, “আজ ৩৫ বছর পার হলেও সেই দিনের স্মৃতি আমার হৃদয়ে গেঁথে আছে। ২৯ এপ্রিল এলেই বুকের ভেতর চাপা কান্না ফিরে আসে। এ দিনের কথা মনে পড়লে আমি আর নিজেকে সামলাতে পারি না।”

১৯৯১ সালের এই প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় অঞ্চলজুড়ে প্রায় ১.৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারান, লাখ লাখ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই ভয়াবহতার অংশ হিসেবে রাউজানেও প্রাণ হারান অনেকে, হারিয়ে যায় অসংখ্য ঘরবাড়ি ও স্বপ্ন।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০১:২৭:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
৫৬১ বার পড়া হয়েছে

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের সেই ঘূর্ণিঝড় আজও ভুলতে পারেননি সাংবাদিক শফিউল আলম

আপডেট সময় ০১:২৭:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের সেই প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের স্মৃতি আজও গভীর কষ্টে স্মরণ করেন প্রবীণ সাংবাদিক ও রাউজান প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিউল আলম। ওইদিন তিনি হারান তার সাত বছর বয়সী প্রিয় পুত্র মহিউদ্দিনকে। সেই শোক আজও তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়, হয়ে উঠেছে পারিবারিক ইতিহাসের এক করুণ অধ্যায়।

শফিউল আলম জানান, “ঘূর্ণিঝড়ের সেই রাতে আমার পুত্র ঘরের ভেতর ঘুমিয়ে ছিল, আমি ছিলাম বাইরে। হঠাৎ আমার মা দেলোয়ারা খাতুন কান্নারত অবস্থায় এসে আমাকে জানান, আমার একমাত্র ছেলে মহিউদ্দিন আর নেই — ঘরের চাপায় মারা গেছে। সেই মুহূর্তটা আজও আমি ভুলতে পারিনি।”

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল বিকেলে শফিউল আলম তার ছেলে মহিউদ্দিনকে নিয়ে রমজান আলীর হাটে ঘুরতে যান। ঘরে ফিরে তারা একসাথে আসর ও মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। এরপর রাতেই শুরু হয় সেই ভয়াল ঘূর্ণিঝড়। শফিউল আলম ঘর ছেড়ে বাইরে গিয়ে প্রতিবেশীদের ঘর বিধ্বস্ত হওয়ার দৃশ্য দেখছিলেন, আর তখনই ঘটে যায় জীবনের সবচেয়ে করুণ দুর্ঘটনাটি।

রাউজানের মোহাম্মদপুরের বাড়িতে সেই রাতে ঘরের ভিতরে ঘুমিয়ে থাকা পুত্র মহিউদ্দিন ঘরের চাল চাপায় মারা যান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে শফিউল আলম বলেন, “সেই রাতের পর আর কখনো আমি আমার পৈতৃক ঘরে থাকিনি। ছেলে হারানোর বেদনা আমাকে আজীবনের মতো সেই ঘর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।”

ঘূর্ণিঝড়ের পরদিন ৩০ এপ্রিল সকালে আশপাশের বাড়ি ও সড়কগুলো বিধ্বস্ত থাকায় কোথাও যাওয়ার উপায় ছিল না। পরে সকাল ১১টায় রাউজান মুহাম্মদপুরের মহিউল উলুম মাদ্রাসা সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে প্রিয় পুত্র মহিউদ্দিনের দাফন সম্পন্ন হয়।

শফিউল আলম বলেন, “আজ ৩৫ বছর পার হলেও সেই দিনের স্মৃতি আমার হৃদয়ে গেঁথে আছে। ২৯ এপ্রিল এলেই বুকের ভেতর চাপা কান্না ফিরে আসে। এ দিনের কথা মনে পড়লে আমি আর নিজেকে সামলাতে পারি না।”

১৯৯১ সালের এই প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় অঞ্চলজুড়ে প্রায় ১.৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারান, লাখ লাখ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই ভয়াবহতার অংশ হিসেবে রাউজানেও প্রাণ হারান অনেকে, হারিয়ে যায় অসংখ্য ঘরবাড়ি ও স্বপ্ন।