ঢাকা ০১:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নদী খনন ও হাওরের ফসল রক্ষায় দাবিতে সুনামগঞ্জে জনউদ্যোগের সংবাদ সম্মেলন

মোশফিকুর রহমান স্বপন, সুনামগঞ্জ::

সুনামগঞ্জের সচেতন নাগরিকদের সংগঠন ‘জনউদ্যোগ’ নদী খনন ও হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় বিভিন্ন দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে। রবিবার (২৭ এপ্রিল) বেলা ১১টায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা লিখিত বক্তব্যে তাঁদের দাবি তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলন শেষে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি জেলার মানুষের জীবন-জীবিকা হাওরের বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। প্রতি বছরই পাহাড়ি ঢল ও অকাল বন্যার ঝুঁকিতে ফসল হারানোর আতঙ্কে থাকেন কৃষকরা। স্বাধীনতার আগে স্থানীয় ইউনিয়ন ও থানা পরিষদের উদ্যোগে ফসল রক্ষার চেষ্টা করা হলেও, স্বাধীনতার পর থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ঠিকাদার প্রথায় বাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও কাজের দায়সারা মনোভাব ফসল রক্ষায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

২০১৭ সালে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের দাবিতে ঠিকাদার প্রথা বাতিল করে পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়। তবে যথাযথ নীতিমালা অনুসরণ না করায় এখনো অনিয়ম অব্যাহত রয়েছে, ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে এবং কৃষকের দুর্ভোগ কমছে না।

সংগঠনের দাবিগুলো হলো প্রতিবছর নির্ধারিত সময়ে পিআইসি গঠন ও কাজ শুরু এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা (৩০ নভেম্বরের মধ্যে পিআইসি গঠন, ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু এবং ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ সম্পন্ন)। স্থানীয় কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত করে গণশুনানির মাধ্যমে পিআইসি গঠন। সব গুরুত্বপূর্ণ ক্লোজারে কজওয়ে নির্মাণ ও সুইস গেটসমূহ সংস্কার। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিল করা ও দুর্নীতিপরায়ণ পিআইসির সদস্যদের বাদ দেওয়া। পিআইসি এবং সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ।

হাওর ও নদী সংক্রান্ত অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- নদী খনন করে পানি নিষ্কাশনের পথ সুগম করা। হাওরের নালা, দাইড় ও বিল খনন করে মাটি ব্যবহার করে বাঁধ নির্মাণ। সেচের পানি সংরক্ষণ এবং মাছের প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। অবৈধ জাল ও যন্ত্র দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করা এবং মা মাছ ও পোনা মাছ রক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণ। হাওরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জলাবনসমূহ সংরক্ষিত এলাকা বা বিশেষ জীববৈচিত্র্য এলাকা হিসেবে ঘোষণা। মৎস্যজীবীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে জলমহাল ব্যবস্থাপনায় নীতিমালা বাস্তবায়ন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জনউদ্যোগের আহ্বায়ক রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু, সদস্য সুকেন্দু সেন, অ্যাডভোকেট খলিল রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, পাঞ্চালী চৌধুরী, জেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর হক মিলন, উন্নয়নকর্মী শাহ কামাল ও গণমাধ্যমকর্মী কুলেন্দু শেখর দাস।

সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সদস্য সচিব সাইদুর রহমান আসাদ। পরে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার সঙ্গে সংগঠনের নেতৃবৃন্দের বৈঠকে হাওরের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জনউদ্যোগের সদস্য অ্যাডভোকেট মতিয়া বেগম ও অ্যাডভোকেট মাহবুবুল হাসান শাহীন।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ১১:৩৩:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
৫৩৯ বার পড়া হয়েছে

নদী খনন ও হাওরের ফসল রক্ষায় দাবিতে সুনামগঞ্জে জনউদ্যোগের সংবাদ সম্মেলন

আপডেট সময় ১১:৩৩:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

সুনামগঞ্জের সচেতন নাগরিকদের সংগঠন ‘জনউদ্যোগ’ নদী খনন ও হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় বিভিন্ন দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে। রবিবার (২৭ এপ্রিল) বেলা ১১টায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা লিখিত বক্তব্যে তাঁদের দাবি তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলন শেষে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি জেলার মানুষের জীবন-জীবিকা হাওরের বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। প্রতি বছরই পাহাড়ি ঢল ও অকাল বন্যার ঝুঁকিতে ফসল হারানোর আতঙ্কে থাকেন কৃষকরা। স্বাধীনতার আগে স্থানীয় ইউনিয়ন ও থানা পরিষদের উদ্যোগে ফসল রক্ষার চেষ্টা করা হলেও, স্বাধীনতার পর থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ঠিকাদার প্রথায় বাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও কাজের দায়সারা মনোভাব ফসল রক্ষায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

২০১৭ সালে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের দাবিতে ঠিকাদার প্রথা বাতিল করে পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়। তবে যথাযথ নীতিমালা অনুসরণ না করায় এখনো অনিয়ম অব্যাহত রয়েছে, ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে এবং কৃষকের দুর্ভোগ কমছে না।

সংগঠনের দাবিগুলো হলো প্রতিবছর নির্ধারিত সময়ে পিআইসি গঠন ও কাজ শুরু এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা (৩০ নভেম্বরের মধ্যে পিআইসি গঠন, ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু এবং ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ সম্পন্ন)। স্থানীয় কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত করে গণশুনানির মাধ্যমে পিআইসি গঠন। সব গুরুত্বপূর্ণ ক্লোজারে কজওয়ে নির্মাণ ও সুইস গেটসমূহ সংস্কার। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিল করা ও দুর্নীতিপরায়ণ পিআইসির সদস্যদের বাদ দেওয়া। পিআইসি এবং সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ।

হাওর ও নদী সংক্রান্ত অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- নদী খনন করে পানি নিষ্কাশনের পথ সুগম করা। হাওরের নালা, দাইড় ও বিল খনন করে মাটি ব্যবহার করে বাঁধ নির্মাণ। সেচের পানি সংরক্ষণ এবং মাছের প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। অবৈধ জাল ও যন্ত্র দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করা এবং মা মাছ ও পোনা মাছ রক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণ। হাওরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জলাবনসমূহ সংরক্ষিত এলাকা বা বিশেষ জীববৈচিত্র্য এলাকা হিসেবে ঘোষণা। মৎস্যজীবীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে জলমহাল ব্যবস্থাপনায় নীতিমালা বাস্তবায়ন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জনউদ্যোগের আহ্বায়ক রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু, সদস্য সুকেন্দু সেন, অ্যাডভোকেট খলিল রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, পাঞ্চালী চৌধুরী, জেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর হক মিলন, উন্নয়নকর্মী শাহ কামাল ও গণমাধ্যমকর্মী কুলেন্দু শেখর দাস।

সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সদস্য সচিব সাইদুর রহমান আসাদ। পরে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার সঙ্গে সংগঠনের নেতৃবৃন্দের বৈঠকে হাওরের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জনউদ্যোগের সদস্য অ্যাডভোকেট মতিয়া বেগম ও অ্যাডভোকেট মাহবুবুল হাসান শাহীন।