লাখাইয়ে সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ও দলিল দাতা-গ্রহীতার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ, তদন্ত শেষে মামলা
হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার বামৈ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ও এক দলিল দাতা-গ্রহীতার বিরুদ্ধে জাল দলিলের মাধ্যমে নামজারির চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে মামলার নথি হবিগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার বামৈ ইউনিয়নের কাঠিহারা গ্রামের মো. শেখ আ. বাছিরের ছেলে আব্দুর রহমান অনলাইনে ৩০২৫৩৬৩ নম্বর আবেদনপত্রের মাধ্যমে নিজের নামে নামজারির আবেদন করেন। আবেদনপত্রের সঙ্গে তিনি ১৯৭০ সালের ৬৫২০ নম্বর ও ১৯৮৬ সালের ৩৭১/৮৬ নম্বর দলিল, লখনাউক মৌজার খতিয়ান এবং অনলাইন পরচা দাখিল করেন।
ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা কৃপেশ চন্দ্র গোপ ২৭ জুলাই ২০২৪ তারিখে প্রস্তাবপত্র ও খসড়া খতিয়ান তৈরি করে আবেদনকারীর পক্ষে নামজারির সুপারিশ করেন। এরপর নামজারির প্রক্রিয়ায় যাচাইয়ের জন্য সার্ভেয়ার ও ভারপ্রাপ্ত কানুনগো মানিক মিয়াকে আদেশ প্রদান করা হয়।
সার্ভেয়ার পর্যালোচনা শেষে মতামতে জানান, দাখিলকৃত ৬৫২০ নম্বর দলিলটি সন্দেহজনক এবং তা বাহুবল উপজেলার দৌলতপুর মৌজার অন্তর্গত বলে বালাম বহিতে প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা কাঠিহারা গ্রামের দাবি করা জমির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তদন্ত প্রতিবেদনে দাতা-গ্রহীতা ও ভূমির বিবরণে গরমিল ধরা পড়ে।
এর প্রেক্ষিতে, ১৮ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে নামজারির আবেদন বাতিলসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। ২৮ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে আবেদনকারী আব্দুর রহমানকে ব্যাখ্যা দাখিলের জন্য ৬৬৯/৩ নম্বর স্মারকে নোটিশ প্রদান করা হয়, কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বামৈ ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা কৃপেশ চন্দ্র গোপ বলেন, “সব কিছু দেখে রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব নয়, দলিল যাচাই-বাছাই আমার কাজ নয়।” অন্যদিকে উপজেলা সার্ভেয়ার ও ভারপ্রাপ্ত কানুনগো মানিক মিয়া জানান, “ইউএনও নাহিদা সুলতানা মহোদয়ের নির্দেশে তদন্ত প্রতিবেদন, জাল দলিলের ছায়ালিপি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ঘটনায় ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিধিমালা, ২০২৩’-এর ৪(২) ধারা অনুসারে জালিয়াতি ও প্রতারণার দণ্ডযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
এ বিষয়ে লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা সুলতানার মন্তব্য পাওয়ার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোনে সংযুক্ত হননি।