ঢাকা ১০:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বেরিয়ে আসছে দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য!

তুচ্ছ কারণে ৫ শিক্ষককে শোকজ করে বিপাকে এটিও কবির

স্টাফ রিপোর্টার::

হবিগঞ্জের মাধবপুরে হাজী মিয়া চাঁন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাসহ পাঁচ শিক্ষককে তুচ্ছ কারণে শোকজ করে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও) কবির হোসেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উঠে আসছে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির একের পর এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ।

সূত্র জানায়, ৯ এপ্রিল ঈদ ও রমজানের ছুটির পর স্কুল খোলার দ্বিতীয় দিনেই আন্দিউড়া ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের হাজী মিয়া চাঁন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে যান এটিও কবির হোসেন। সেখানে শিক্ষকদের অনুপস্থিতি, ছাত্রসংখ্যা কম, প্রধান শিক্ষিকার ‘অদক্ষতা’সহ নানা অভিযোগ এনে পাঁচজন শিক্ষককে শোকজ করেন। কোনো প্রকার মৌখিক বা লিখিত সতর্কতা ছাড়াই সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন তিনি।

তবে এই শোকজের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উঠছে নানা অভিযোগ। শিক্ষকরা বলছেন, শোকজপত্র অফিসিয়াল নথি হওয়া সত্ত্বেও সেটি ফেসবুক গ্রুপে প্রকাশ করে অফিসিয়াল গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেছেন ওই কর্মকর্তা। এতে করে শিক্ষক সমাজে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়ে।

এটিও কবির হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, অতীতে বিভিন্ন সময়ে শোকজের ভয় দেখিয়ে বহু শিক্ষক থেকে ঘুষ আদায় করেছেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক নেতা জানান, এসিআর স্বাক্ষর, মেডিকেল ছুটি অনুমোদন, মাতৃত্ব ছুটি কিংবা বদলির ক্ষেত্রে নিয়মিতই ঘুষ দিতে বাধ্য হন শিক্ষকরা।

এক শিক্ষক জানান, বরতল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমেনা বেগম মাতৃত্বকালীন ছুটির জন্য ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হন। অথচ তার সিজার হয়েছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি, কিন্তু ছুটি অনুমোদন দেখানো হয় ৮ মার্চ থেকে। অন্যদিকে লেবামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রভাত পালকে ১৫ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে অনলাইনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বদলি করে নীতিমালা ভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়াও ডিপিএড তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি কিংবা বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রেও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। শিক্ষক নেতাদের দাবি, কবির হোসেনের কারণে মাধবপুর উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষায় অনিয়ম ও দুর্নীতি বেড়েই চলেছে। নিরীহ শিক্ষকরা নিয়মিত ব্ল্যাকমেইল ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

তবে শোকজের সাতদিন অতিবাহিত হলেও শিক্ষকরা কোনো লিখিত জবাব দেননি। বিদ্যালয়ের পরিদর্শন খাতায় এটিওর মন্তব্যও এখনো রয়ে গেছে আগের অবস্থায়। শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, পুরো প্রক্রিয়াটিই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং হয়রানিমূলক।

এ বিষয়ে মাধবপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস.এম. জাকিরুল হাসান বলেন, “বিষয়টি আমরা সমাধান করেছি। প্রাথমিক শিক্ষকদের শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা সর্বদা সচেষ্ট।”

অন্যদিকে অভিযুক্ত এটিও কবির হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি ছুটিতে আছি, এই বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। অফিসে এসে কথা বলব।”

হবিগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, “আমি ওই দিন মাধবপুরে পরিদর্শনে ছিলাম। এই বিষয়ে কিছু শুনিনি, তবে অভিযোগ যদি সত্য হয়, তাহলে তা অবশ্যই গুরুতর। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ১১:০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
৫২৬ বার পড়া হয়েছে

বেরিয়ে আসছে দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য!

তুচ্ছ কারণে ৫ শিক্ষককে শোকজ করে বিপাকে এটিও কবির

আপডেট সময় ১১:০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

হবিগঞ্জের মাধবপুরে হাজী মিয়া চাঁন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাসহ পাঁচ শিক্ষককে তুচ্ছ কারণে শোকজ করে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও) কবির হোসেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উঠে আসছে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির একের পর এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ।

সূত্র জানায়, ৯ এপ্রিল ঈদ ও রমজানের ছুটির পর স্কুল খোলার দ্বিতীয় দিনেই আন্দিউড়া ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের হাজী মিয়া চাঁন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে যান এটিও কবির হোসেন। সেখানে শিক্ষকদের অনুপস্থিতি, ছাত্রসংখ্যা কম, প্রধান শিক্ষিকার ‘অদক্ষতা’সহ নানা অভিযোগ এনে পাঁচজন শিক্ষককে শোকজ করেন। কোনো প্রকার মৌখিক বা লিখিত সতর্কতা ছাড়াই সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন তিনি।

তবে এই শোকজের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উঠছে নানা অভিযোগ। শিক্ষকরা বলছেন, শোকজপত্র অফিসিয়াল নথি হওয়া সত্ত্বেও সেটি ফেসবুক গ্রুপে প্রকাশ করে অফিসিয়াল গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেছেন ওই কর্মকর্তা। এতে করে শিক্ষক সমাজে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়ে।

এটিও কবির হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, অতীতে বিভিন্ন সময়ে শোকজের ভয় দেখিয়ে বহু শিক্ষক থেকে ঘুষ আদায় করেছেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক নেতা জানান, এসিআর স্বাক্ষর, মেডিকেল ছুটি অনুমোদন, মাতৃত্ব ছুটি কিংবা বদলির ক্ষেত্রে নিয়মিতই ঘুষ দিতে বাধ্য হন শিক্ষকরা।

এক শিক্ষক জানান, বরতল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমেনা বেগম মাতৃত্বকালীন ছুটির জন্য ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হন। অথচ তার সিজার হয়েছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি, কিন্তু ছুটি অনুমোদন দেখানো হয় ৮ মার্চ থেকে। অন্যদিকে লেবামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রভাত পালকে ১৫ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে অনলাইনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বদলি করে নীতিমালা ভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়াও ডিপিএড তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি কিংবা বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রেও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। শিক্ষক নেতাদের দাবি, কবির হোসেনের কারণে মাধবপুর উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষায় অনিয়ম ও দুর্নীতি বেড়েই চলেছে। নিরীহ শিক্ষকরা নিয়মিত ব্ল্যাকমেইল ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

তবে শোকজের সাতদিন অতিবাহিত হলেও শিক্ষকরা কোনো লিখিত জবাব দেননি। বিদ্যালয়ের পরিদর্শন খাতায় এটিওর মন্তব্যও এখনো রয়ে গেছে আগের অবস্থায়। শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, পুরো প্রক্রিয়াটিই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং হয়রানিমূলক।

এ বিষয়ে মাধবপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস.এম. জাকিরুল হাসান বলেন, “বিষয়টি আমরা সমাধান করেছি। প্রাথমিক শিক্ষকদের শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা সর্বদা সচেষ্ট।”

অন্যদিকে অভিযুক্ত এটিও কবির হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি ছুটিতে আছি, এই বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। অফিসে এসে কথা বলব।”

হবিগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, “আমি ওই দিন মাধবপুরে পরিদর্শনে ছিলাম। এই বিষয়ে কিছু শুনিনি, তবে অভিযোগ যদি সত্য হয়, তাহলে তা অবশ্যই গুরুতর। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”