ঢাকা ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশেই ছিল ভয়ঙ্কর গোপন বন্দিশালা: বিবিসির প্রতিবেদন

চেকপোস্ট ডেস্ক::

আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশেই ছিল ভয়ঙ্কর গোপন বন্দিশালা: বিবিসির প্রতিবেদন

ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কিছুই গজ দূরে একটি সামরিক ঘাঁটিতে একাধিক গোপন জেলখানার খোঁজ পাওয়া গেছে। বিবিসি-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, তদন্তকারীরা একটি তড়িঘড়ি করে গাঁথা দেয়াল ভেঙে ওই গোপন বন্দিশালার সন্ধান পান। এটি ছিল ছোট ছোট কক্ষ, যেগুলোর জানালা ছিল না এবং এগুলোর মধ্যে ঘন অন্ধকার বিরাজ করছিল।

মীর আহমদ বিন কাসেম, যিনি সরকারের সমালোচক ছিলেন, আট বছর ধরে এখানে বন্দি ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বন্দি, যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় রাখা হতো এবং বিমানবন্দরের অবতরণের শব্দ শুনে বুঝতে পারতেন যে এটি ঢাকার কাছাকাছি। তদন্তকারীরা এই বন্দিশালাটি অনুসন্ধান করে সামরিক ঘাঁটিতে পৌঁছান, যেখানে একটি ছোট, পাকা, এবং প্রহরায় ঘেরা ভবনে গোপন জেলটি ছিল।

মীর আহমেদ বিন কাসেমসহ আরো অনেক ভুক্তভোগী এই গোপন বন্দিশালায় বন্দি ছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গত আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর, তদন্তকারীরা শতাধিক গুম হওয়া ব্যক্তির সাথে কথা বলেন এবং ধারণা করা হচ্ছে যে, তাদের অবৈধভাবে হত্যা করা হয়েছে।

তদন্তে জানা যায়, এই গোপন জেল পরিচালনা করছিল র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যা ব), যারা সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কাজ করত। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিবিসিকে জানান, “সব গুমের ঘটনা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনে ঘটেছিল।” তবে শেখ হাসিনার দল দাবি করেছে যে, এসব কর্মকাণ্ড তাদের অজান্তে ঘটেছে এবং সেনাবাহিনী এককভাবে এসব পরিচালনা করেছে। সেনাবাহিনী এই দাবিকে অস্বীকার করেছে।

মীর আহমেদ বিন কাসেম, যিনি আট বছর ধরে এই গোপন কারাগারে বন্দি ছিলেন, জীবন্ত কবরের মতো অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন, “এটা ছিল মৃত্যুর চেয়েও খারাপ। বাইরের পৃথিবী থেকে একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে হয়েছিল।” কক্ষটি ছিল এতটাই ছোট যে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব ছিল না। ঘরের দেয়ালগুলো ভাঙা ছিল এবং দুর্গন্ধে ভরা ছিল।

ব্যারিস্টার আরমান, যিনি জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে, সেই কক্ষে আটকা পড়ার সময়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি বলেন, “গ্রীষ্মকালে এখানকার গরম ছিল অসহনীয়। দরজার নিচে মুখ দিয়ে বাতাস নিতে চেষ্টা করতাম।” তিনি আরও জানান, “বিশ্ববাসী যেন এই নির্যাতনের বাস্তবতা জানতে পারে এবং যারা ফেরেনি তাদের জন্য ন্যায্য বিচার হয়।”

মীর কাসেম জানান, তার বন্দিত্বের প্রথম ১৬ দিন ছিল ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে, পরে তাকে র্যা ব-এর কাছে রাখা হয়। তিনি মনে করেন, তার পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তাকে গুম করা হয়।

এটি একটি গোপন, পরিকল্পিত, এবং পদ্ধতিগত বন্দিশালা নেটওয়ার্ক ছিল, যা র্যা ব ও সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পরিচালিত হতো।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ১১:২৮:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
৫২২ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশেই ছিল ভয়ঙ্কর গোপন বন্দিশালা: বিবিসির প্রতিবেদন

আপডেট সময় ১১:২৮:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কিছুই গজ দূরে একটি সামরিক ঘাঁটিতে একাধিক গোপন জেলখানার খোঁজ পাওয়া গেছে। বিবিসি-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, তদন্তকারীরা একটি তড়িঘড়ি করে গাঁথা দেয়াল ভেঙে ওই গোপন বন্দিশালার সন্ধান পান। এটি ছিল ছোট ছোট কক্ষ, যেগুলোর জানালা ছিল না এবং এগুলোর মধ্যে ঘন অন্ধকার বিরাজ করছিল।

মীর আহমদ বিন কাসেম, যিনি সরকারের সমালোচক ছিলেন, আট বছর ধরে এখানে বন্দি ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বন্দি, যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় রাখা হতো এবং বিমানবন্দরের অবতরণের শব্দ শুনে বুঝতে পারতেন যে এটি ঢাকার কাছাকাছি। তদন্তকারীরা এই বন্দিশালাটি অনুসন্ধান করে সামরিক ঘাঁটিতে পৌঁছান, যেখানে একটি ছোট, পাকা, এবং প্রহরায় ঘেরা ভবনে গোপন জেলটি ছিল।

মীর আহমেদ বিন কাসেমসহ আরো অনেক ভুক্তভোগী এই গোপন বন্দিশালায় বন্দি ছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গত আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর, তদন্তকারীরা শতাধিক গুম হওয়া ব্যক্তির সাথে কথা বলেন এবং ধারণা করা হচ্ছে যে, তাদের অবৈধভাবে হত্যা করা হয়েছে।

তদন্তে জানা যায়, এই গোপন জেল পরিচালনা করছিল র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যা ব), যারা সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কাজ করত। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিবিসিকে জানান, “সব গুমের ঘটনা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনে ঘটেছিল।” তবে শেখ হাসিনার দল দাবি করেছে যে, এসব কর্মকাণ্ড তাদের অজান্তে ঘটেছে এবং সেনাবাহিনী এককভাবে এসব পরিচালনা করেছে। সেনাবাহিনী এই দাবিকে অস্বীকার করেছে।

মীর আহমেদ বিন কাসেম, যিনি আট বছর ধরে এই গোপন কারাগারে বন্দি ছিলেন, জীবন্ত কবরের মতো অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন, “এটা ছিল মৃত্যুর চেয়েও খারাপ। বাইরের পৃথিবী থেকে একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে হয়েছিল।” কক্ষটি ছিল এতটাই ছোট যে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব ছিল না। ঘরের দেয়ালগুলো ভাঙা ছিল এবং দুর্গন্ধে ভরা ছিল।

ব্যারিস্টার আরমান, যিনি জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে, সেই কক্ষে আটকা পড়ার সময়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি বলেন, “গ্রীষ্মকালে এখানকার গরম ছিল অসহনীয়। দরজার নিচে মুখ দিয়ে বাতাস নিতে চেষ্টা করতাম।” তিনি আরও জানান, “বিশ্ববাসী যেন এই নির্যাতনের বাস্তবতা জানতে পারে এবং যারা ফেরেনি তাদের জন্য ন্যায্য বিচার হয়।”

মীর কাসেম জানান, তার বন্দিত্বের প্রথম ১৬ দিন ছিল ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে, পরে তাকে র্যা ব-এর কাছে রাখা হয়। তিনি মনে করেন, তার পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তাকে গুম করা হয়।

এটি একটি গোপন, পরিকল্পিত, এবং পদ্ধতিগত বন্দিশালা নেটওয়ার্ক ছিল, যা র্যা ব ও সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পরিচালিত হতো।