বৈসাবিতে পাহাড়জুড়ে আনন্দের জোয়ার, কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসিয়ে শুরু নববর্ষ উদযাপন
আলোকিত আকাশ, পিনন-হাদির ঐতিহ্য আর গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে পাহাড়ে শুরু হয়েছে বর্ষবরণের সবচেয়ে রঙিন আয়োজন-বৈসাবি উৎসব। রাঙ্গামাটির কেরানী পাহাড়ের কাপ্তাই হ্রদের পাড়ে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই শত শত পাহাড়ি তরুণ-তরুণী জড়ো হন ফুলবিজুর আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিতে।
চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরাসহ ১১টি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব বৈসাবি মূলত তিন দিনের আয়োজন হলেও, এর রেশ থাকে প্রায় পুরো এপ্রিলজুড়ে। ভোরের নরম রোদে যখন তরুণীরা পিনন-হাদি আর তরুণরা ধুতি-পাঞ্জাবিতে কাপ্তাই হ্রদের জলে বিজুর ফুল ভাসিয়ে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে প্রার্থনায় রত, তখন পাহাড়ে যেন নেমে আসে ভিন্ন এক সৌন্দর্যের ছটা।
শুধু রাঙ্গামাটির কেরানী পাহাড় নয়, জেলার বিভিন্ন প্রান্তেও একইভাবে ফুল ভাসিয়ে বৈসাবির শুভ সূচনা করেন পাহাড়িরা। তাদের বিশ্বাস, পুরনো বছরের দুঃখ, ক্লেশ, ভুল-ভ্রান্তিগুলো গঙ্গা দেবীর কাছে সঁপে দিয়ে নতুন বছরের জন্য প্রার্থনা করলে তা শান্তিময় ও সমৃদ্ধ হবে।
স্থানীয় যুবক সিদ্ধার্থ চাকমা বলেন, “অতীতের ভুলভ্রান্তির জন্য জলবুদ্ধর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছি। আগামী বছর যেন সুখে-শান্তিতে কাটে, সে কামনাতেই এই আয়োজন।”
বৈসাবির পরবর্তী দিনে চৈত্র সংক্রান্তিতে পাহাড়ি পরিবারগুলো আয়োজন করে পাঁজন বা বৈসাবি আতিথেয়তা। পুরনো বছরের শেষ দিনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রিয়জনদের আমন্ত্রণ, পিঠা-পায়েস খাওয়া আর আনন্দ ভাগাভাগির মধ্য দিয়ে চলে পরম্পরা রক্ষার আয়োজন। এরপর নতুন বছরের প্রথম দিন বিহারে প্রার্থনা এবং মারমাদের ‘সাংগ্রাই জলকেলি’ বৈসাবিকে পরিপূর্ণ করে তোলে।
সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, “বৈসাবিকে ঘিরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ঐতিহ্যবাহী খেলা, মেলা ও গ্রামীণ প্রতিযোগিতা নিয়ে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।”
বৈসাবি কেবল পাহাড়িদের উৎসব নয়-এটি একটি সম্প্রীতির বার্তা। ভিন্ন ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষ একত্র হয়ে বৈসাবির মাধ্যমে সৌহার্দ্য ও শান্তির আকাঙ্ক্ষায় মেতে ওঠে। এই উৎসব পাহাড়ের সংস্কৃতি-পরিচয়কে যেমন জাগ্রত করে, তেমনি সমগ্র দেশের কাছে তা তুলে ধরে একটি মানবিক বার্তা।