লাখাই ধলেশ্বরী নদী কালের বিবর্তনে বিলীন, সরকারী বরাদ্দ ছাড়াই খননের উদ্যোগ
হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার ২নং ধলেশ্বরী নদী কালের বিবর্তনে বিলীন ফলে দেখা দিয়েছে নৌচলাচলে বাধার সম্মুখীন। এ উপজেলার বুক চিরে বয়ে চলেছে অসংখ্য ছোট নদী, খাল, শাখা নদী। খোয়াই (শাখা) সুতাং, ধলেশ্বরী, মনিখাই,সালদিঘার খাল,কলকলিয়া নদী মেঘনা নদীর শাখা (ধলেশ্বরী) এদের মধ্যে অন্যতম। নদী খাল সমুহ বিভিন্ন হাওড় ও বিলের সাথে সংযুক্ত।
বিল সমুহের মধ্যে ফিরানী বিল, সাদালিয়া বিল, বাঘাইয়া বিল, উদাজোর বিল ঘরভাঙা বিল, ঘাগটিয়া বিল, কালীবাড়ী বেড়,গজারিয়া নদী খোফা বিল, কচুয়া বিল, ইত্যাদি। উল্লেখ যোগ্য তিনটি বিভাগের সীমান্তে অবস্থিত এই উপজেলার উত্তরে কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলা ও সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলা দক্ষিণে বি-বাড়ীয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলা ও মাধবপুর, পূর্বে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা, মাধবপুর উপজেলা ও বি-বাড়ীয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলা। পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলা।
তথ্য সুত্রে জানা যায়, এ উপজেলার মোট জনসংখ্যা ১ লাখ, ২০ হাজার ৬৭৭ জন। লাখাই ইউনিয়নের লোক সংখ্যা ২২৫৫৮ জন। লাখাই ইউনিয়নের আয়াতন ১১.৮২৫ একর। এ ইউনিয়নের গ্রাম সংখ্যা ১৫টি। এই ইউনিয়নের পাশ দিয়ে ধলেশ্বরী ও কলকলিয়া ইত্যাদি নদী বহমান।সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে শিবপুর গ্রামের উত্তরে অবস্থিত ২নং ধলেশ্বরী নদীটি কালের বিবর্তনে নদীগর্ভে জেগে উঠেছে বড় চর ও বিভিন্ন গাছগাছালিতে পাহাড়ে পরিনত । এই বর্ষা মৌসুমে যে নদীতে পানি থাকার কথা ৩০ – হাত পানি সেখানে বর্তমানে আছে ৪ হাত পানি। ফলে ঔ নদী দিয়ে কোন প্রকার নৌচলাচল এখন করেনা। এই নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ধান চাষ। বোরোধান চাষাবাদের মৌসুমে শিবপুর, সুজনপুর,লাখাই গ্রামের হাজার হাজার হেক্টর জমি পানির অভাবে আশানুরূপ ফলন থেকে বঞ্চিত হাজার হাজার কৃষক। নদীতে শুকনো মৌসুমে পানি না পাওয়ায় বিকল্প হিসেবে গভীর নলকূপ এর মাধ্যমে চাষাবাদ করতে হয়।
এই ধলেশ্বরী নদীতে ফাল্গন মাসে থাকেনা পানি ফলে নানা সমস্যার ভোগান্তির অন্ত নই কৃষকের। খোঁজ নিয়ে জানা যায় এই ধলেশ্বরী নদী দিয়ে সাড়া বছর বড় বড় স্টিমার লঞ্চ চলাচল করতে দেখা গেলেও বর্তমানে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন আর কোন নৌযান চলাচল করেনা। এ বিষয়ে শিবপুর গ্রামের বর্তমান মেম্বার ফজলু মিয়ার সাথে আলাপ কালে তিনি জানান, আমরা শিবপুর গ্রামবাসী এক ফসলের উপর নির্ভরশীল কিন্তু ধলেশ্বরী নদীতে সময় মত পানি পাওয়ায় চাষাবাদ করতে নানা ভোগান্তি চরমে। এক সময় ঔ নদী দিয়ে বড় বড় লঞ্চ, ইস্টিমার চলাচল করতে দেখেছি কিন্তু এখন নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় কোন ধরনের নৌচলাচল করতে পারছে না। যখন ঔ নদী দিয়ে নৌচলাচল করত তখন অল্প সময়ে অল্প খরচে ভৈরব বাজার যেতে পারতাম কিন্তু নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় ভৈরব যেতে হলে মোড়াকরি থেকে বিশ্বরোড হয়ে ভৈরব বাজারে যেতে হয় এতে করে খরচও বেশি সময়ও লাগে বেশী। তিনি আরো জানান, হেমন্ত মৌসুমে আমার গ্রামে শাকসবজি, বাদাম, মিষ্টি আলু, মুলা চাষ হয়ে থাকে। ঔ ধলেশ্বরী নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় আশানুরূপ ধান উৎপাদন করতে পারছি না। এ বিষয়ে শিবপুর গ্রামের কয়েকজন জেলের সাথে কথা হলে তারা জানান, এই ধলেশ্বরী নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় আমরা মাছ শিকার করতে পারছিনা ফলে আমাদের ছেলে মেয়ে নিয়ে অতিকষ্টে সংসার চলে।
সারাদিন মাছ শিকার করে বাজারে মাছ বিক্রি করে সংসার চলতো। বিশেষ করে শিবপুর গ্রামবাসীর লোকজন এর দাবী জরুরী ভিত্তিতে ঔ নদীটি খনন করার দাবী জানান সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ সুলতানা এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি এই উপকেলায় যোগদান করার পর জানতে পেরেছি ২নং ধলেশ্বরী নদী ভরাট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক এর সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আলোচনা করার পর তিনি আমাকে ঔ ধলেশ্বরী নদী খনন সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি আরো জানান, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঔ নদীটি খনন করতে হলে সরকারের প্রায় ৮২ কোটি টাকা ব্যয় করতে হতো কিন্তু জেলা প্রশাসক মহোদয়ের দিকনির্দেশনায় সরকারী বরাদ্দ ছাড়াই ঔ নদীটি খনন করার জন্য উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। ঔ নদীটি খনন করলে সরকারের রাজস্ব খাতে আয় হবে অনেক টাকা। জেলা প্রশাসক এর দিকনির্দেশনা মোতাবেক আমি ও সহকারী কমিশনার ভুমি মাসুদুর রহমান, হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি ও ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার সহ ২নং ধলেশ্বরী নদী সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি এবং ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে বিস্তারিত অনুসন্ধান করেছি। এই ২নং ধলেশ্বরী নদী খনন করতে সরকারের কত কোটি টাকা খরচ হতে পারে জানতে চাইলে তিনি জানান, ৮২ কোটি টাকা ব্যয় হতো।
হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মহোদয় এর সাথে আলাপ আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সরকারের অর্থ ছাড়াই এই ধলেশ্বরী নদী খনন করা হবে এতে সরকারের কোন অর্থ ব্যয় করতে হবেনা বরং সরকারের রাজস্ব খাতে কোটি কোটি টাকা আয় হবে। এ বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোছাঃ জিলুফা সুলতানা ৯ জুলাই লাখাই উপজেলা অডিটোরিয়াম হলে এক মতবিনিময় সভায় ধলেশ্বরী নদী খনন সংক্রান্ত বিষয়ে বলেন আপনার শুনে খুশি হবেন ধলেশ্বরী নদী খনন করতে বাংলাদেশ সরকারের কোন প্রকার অর্থ ছাড়াই ধলেশ্বরী নদী খনন করা হবে এবং সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব খাতে আয় হবে। ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী খনন করা হবে আর এই খনন করা বালু বিক্রি করে সরকারের রাজস্ব আয় হবে।
তিনি আরো জানান, এই ধলেশ্বরী নদী খনন এর বিষয়টি উপজেলা পরিষদ এর চেয়ারম্যান এডভোকেট মুশফিউল আলম আজাদ জেলা সমন্বয় সভায় উপস্থাপন করায় বিষয়টি আমার নজরে আসে এবং ধলেশ্বরী নদী খনন এর উদ্যোগ গ্রহন করি এ জন্য উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুশফিউল আলম আজাদ কে ধন্যবাদ জানাই। তিনি আরো জানান এই ধলেশ্বরী নদী খনন করার জন্য সার্বিক ভাবে আমাকে সহযোগীতা করে যাচ্ছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা সুলতানা।
এই ধলেশ্বরী নদী খনন এর জন্য উদ্যোগ নেয়ার জন্য হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোছাঃ জিলুফা সুলতানা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা সুলতানা এবং উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট মুশফিউল আলম আজাদ এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন লাখাই উপজেলাবাসী।