হমেক ছাত্রদলের কমিটিতে ছাত্রলীগের পুনর্বাসন নিয়ে তোলপাড়
হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত কমিটিতে ছাত্রলীগের এক্টিভ কর্মীদের স্থান দেওয়া নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন তথ্য ও ভিডিওতে দেখা যায়, নবগঠিত কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন এবং ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়েছেন। এতে ছাত্রদলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি মোঃ রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- সভাপতি: মোঃ রিয়েল সরকার, সিনিয়র সহ-সভাপতি: সুপ্রিয় শর্মা, সাধারণ সম্পাদক: এম এম সালেহীন, সাংগঠনিক সম্পাদক: সৌরভ চাকমা জুনান।
এই চারজনকে ‘সুপার কমিটি’ হিসেবে বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু কমিটি ঘোষণার পরপরই বিতর্কের সূত্রপাত হয়, যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ হিসেবে ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়। এসব ভিডিওতে দেখা যায়, সদ্য ঘোষিত কমিটির নেতারা ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন এবং ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়েছেন। এতে ছাত্রদলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।
অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি কি এই নেতাদের রাজনৈতিক অতীত সম্পর্কে জানতেন? নাকি তারা পরিচয় গোপন করে কমিটিতে স্থান পেয়েছেন? বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা আসেনি।
ছাত্রদলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী কর্মীরা এই সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, ছাত্রলীগের কর্মীরা যদি ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসে, তাহলে সংগঠনের আদর্শ ও সাংগঠনিক কাঠামো চরম সংকটে পড়বে। এদিকে, ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এই বিতর্কিত কমিটি পুনর্মূল্যায়নের দাবি তুলেছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হচ্ছে।
সিলেট বিভাগের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের কমিটির প্রধান ওলি উজ্জামান সুহেল এর সাথে ফোনালাপে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এই চারজন ছাত্রলীগের কর্মী বলে জানেন না। তবে, যদি প্রমাণ হয় তারা সাবেক ছাত্রলীগের এক্টিভ কর্মী এবং ৫ আগস্টের পূর্ব মুহূর্তে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে রাজপথে অবস্থানের মিটিং, মিছিল ও স্লোগান দিয়েছেন, তাহলে হমেক কমিটি বাতিল করা হবে বলে তিনি জানান।
অপরদিকে, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
হমেক ছাত্রদলের কমিটিতে ছাত্রলীগের এক্টিভ কর্মীদের স্থান পাওয়ার ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, বিগত ৫ আগস্টের আগ মুহূর্তেও যারা ছাত্রলীগের পক্ষে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে রাজপথে ছিল, তারা কীভাবে হমেক ছাত্রদলের কমিটিতে স্থান পেল?
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ছাত্রদল এক গভীর সংকটে পড়েছে, যা সংগঠনের ভবিষ্যতের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।