সুনামগঞ্জে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ
সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলায় ফসল রক্ষা বাঁধগুলোর কাজ সময়মতো শেষ করতে পারেনি পিআইসি কমিটি। হাওড় রক্ষা বাঁধ নির্মাণের নামে হয়েছে অনিয়ম, দুর্নীতি ও টাকার বাণিজ্য। উপজেলায় ২৮টি প্রকল্পের অধিকাংশ বাঁধ নির্মাণের ৬০-৭০ ভাগ কাজও শেষ করতে পারেনি পিআইসি কমিটির সদস্যরা। ২৮টি পিআইসির মধ্যে ২০ নম্বর প্রকল্পের পিআইসি কমিটির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন হাওরবাসীর পক্ষে এক কৃষক। এই অভিযোগ নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ২০ নম্বর পিআইসি কমিটির সভাপতি রোয়াব আলী, সদস্য সচিব আব্দুল মছবির, এসও মাসুম চৌধুরী ও মাঠকর্মী ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়ম ও কাজ না করেই বিল উত্তোলনের অভিযোগ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম সংবাদ পেয়ে অনিয়মকৃত পিআইসির বরাদ্দকৃত টাকাগুলো আটকিয়ে দেওয়ার কথা জানান।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে ২০ নম্বর পিআইসি কমিটির সভাপতি রোয়াব আলীর বাঁধ নির্মাণ কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য পাওয়া যায়। প্রায় শতাধিক কৃষক অভিযোগ করেন, বাঁধে ঠিকমতো মাটি ফেলা হয়নি, দুই পাশে ফাটল ধরেছে, পুরনো মাটি কেটে নতুনের চিত্র দেখিয়ে বিল উত্তোলনের পাঁয়তারা চলছে।
হাওর তীরবর্তী নোয়াগাঁও গ্রামের মনাফ আলীর ছেলে আলী হোসেন বলেন, “বাঁধে ২০ হাজার টাকার কাজও হয়নি। পুরোনো মাটি কেটে সাজিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে মানুষ কিছু বুঝতে না পারে। আমরা বাস্তবে দেখেছি, কাজ একেবারেই হয়নি।”
একই এলাকার কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, “গত বছরের মাটি এস্কেভেটর দিয়ে কেটে উর্বর করেছে। এরপর সেই মাটিই চারদিকে বসিয়ে বাঁধের কাজ দেখানো হয়েছে। কিন্তু বাঁধ উঁচু করা হয়নি। আমরা হাওরবাসী শঙ্কায় আছি, সামান্য বৃষ্টি হলেই বাঁধ ভেঙে যাবে।”
কৃষক মাজন আলী বলেন, “পুরনো মাটি কেটে কাজ হয়েছে বলে দেখানো হচ্ছে। সরকারী টাকা লুটপাটের পাঁয়তারা চলছে। আমরা হাওরবাসী ঝুঁকিতে আছি। হাওরে যেকোনো সময় পানি ঢুকে পড়বে, ফসল রক্ষা করা যাবে না।”
কৃষক আব্দুল মতলিব বলেন, “আমাদের গ্রামের পক্ষ থেকে এই বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অন্য বাঁধগুলো ঠিক থাকলেও, এই বাঁধে অনিয়ম হয়েছে।”
স্থানীয় আনহার আলী বলেন, “মেয়রেরা যেভাবে ঘর লেপে, ঠিক সেভাবেই পুরনো মাটি কেটে বাঁধে লেপ দেওয়া হয়েছে। কোনো কাজই হয়নি। কার যোগসাজশে এই লুটপাট চলছে, তা তদন্ত করা দরকার।”
এ ঘটনায় দুর্নীতিবাজ পিআইসি কমিটির সভাপতি রোয়াব আলী ও এসও মাসুম চৌধুরী চরম বিপাকে আছেন। পিআইসি কমিটির সভাপতি রোয়াব আলীকে কল দিয়ে পাওয়া যায়নি। এসও মাসুম চৌধুরীকেও একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।
গত ১৯ মার্চ দক্ষিণ খুরমা ইউপির নোয়াগাঁও গ্রামের তৈমুছ আলীর ছেলে আব্দুল মতিন বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। জানা যায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের উপজেলাধীন জাউয়াবাজার ও দক্ষিণ খুরমা ইউপির আসলামপুরের পূর্ব অংশে প্রায় ৭৯৫ মিটার ডুবন্ত বাঁধ ও ভাঙন রোধের কাজের অনুমোদন পায়। ২০ নম্বর পিআইসি সরকারি বরাদ্দের ১৯ লাখ ৭ হাজার টাকা পেলেও, প্রকল্পের কাজ ফসল রক্ষায় কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখবে না বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন। পুরনো বাঁধের মাটি কোড়ে নতুন প্রলেপ দেওয়া হয়েছে মাত্র। উল্লেখ্য, বন লাগানো, দরমুজসহ সম্পূর্ণ কাজ এখনো শেষ হয়নি।
গত মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) শত চেষ্টা করেও এসও মাসুম চৌধুরীকে পাওয়া যায়নি। একাধিকবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি। পরদিন (২৬ মার্চ) কল দিয়ে কথা হলে তিনি অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।