ঢাকা ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জয়পুরহাটে পেঁয়াজের দামে ধস, লোকসানে দিশাহারা কৃষক

সুকমল চন্দ্র বর্মন, কালাই, জয়পুরহাট::

ছবি: চেকপোস্ট

জয়পুরহাটের বিভিন্ন হাটবাজারে ব্যাপকভাবে কমে গেছে পেঁয়াজের দাম, যার ফলে ভয়াবহ লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়, যা উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক কম।

নতুনহাটের পেঁয়াজ বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন জানান, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম একেবারে কমে গেছে। ২০ দিন আগেও প্রতি কেজি ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ২০-২৫ টাকায় নেমে এসেছে।

ক্ষেতলাল উপজেলার মহব্বতপুর গ্রামের কৃষক কাজী হারুন রশিদ জানান, তিনি ৪০০ টাকা মণ দরে জামালগঞ্জ চারমাথা হাটে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। বিঘাপ্রতি ২০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে তার।

এ বছর পেঁয়াজের বীজ ১৪ হাজার টাকা মণ দরে কিনতে হয়েছে, যেখানে এক বিঘা জমিতে চার মণ বীজ প্রয়োজন। ফলে শুধু বীজের খরচেই ৫৬ হাজার টাকা লেগেছে। সার ও শ্রমিক খরচসহ ১ বিঘা জমিতে ৬৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, কিন্তু বিক্রির পরও সে খরচ উঠে আসেনি।

একই গ্রামের ওমর আলী জানান, দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করে ৪০-৫০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।

বর্গাচাষি আফজল হোসেন বলেন, তিনি ২০ দিন আগে ১ হাজার টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। এতেও তিনি কোনো লাভ করতে পারেননি।

জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৮৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে, যা গত মৌসুমের তুলনায় ৫০ হেক্টর বেশি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, “এ মৌসুমে পেঁয়াজ বীজের দাম বেশি থাকায় কৃষকের উৎপাদন খরচও বেশি হয়েছে। এক মাস আগেও পেঁয়াজের দাম ভালো ছিল, কিন্তু রাজশাহী ও নওগাঁ থেকে পেঁয়াজ আসার কারণে জয়পুরহাটের বাজারে দাম কমে গেছে। ফলে কৃষকরা কিছুটা লোকসানের মুখে পড়েছেন।”

পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ায় জয়পুরহাটের কৃষকদের চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় বেশিরভাগ কৃষকই লাভের মুখ দেখেননি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি উৎপাদন খরচ কমানো ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে কৃষকদের এমন লোকসানের মুখে পড়তে হবে না।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ১২:৩৭:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
৫৩৮ বার পড়া হয়েছে

জয়পুরহাটে পেঁয়াজের দামে ধস, লোকসানে দিশাহারা কৃষক

আপডেট সময় ১২:৩৭:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

জয়পুরহাটের বিভিন্ন হাটবাজারে ব্যাপকভাবে কমে গেছে পেঁয়াজের দাম, যার ফলে ভয়াবহ লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়, যা উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক কম।

নতুনহাটের পেঁয়াজ বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন জানান, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম একেবারে কমে গেছে। ২০ দিন আগেও প্রতি কেজি ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ২০-২৫ টাকায় নেমে এসেছে।

ক্ষেতলাল উপজেলার মহব্বতপুর গ্রামের কৃষক কাজী হারুন রশিদ জানান, তিনি ৪০০ টাকা মণ দরে জামালগঞ্জ চারমাথা হাটে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। বিঘাপ্রতি ২০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে তার।

এ বছর পেঁয়াজের বীজ ১৪ হাজার টাকা মণ দরে কিনতে হয়েছে, যেখানে এক বিঘা জমিতে চার মণ বীজ প্রয়োজন। ফলে শুধু বীজের খরচেই ৫৬ হাজার টাকা লেগেছে। সার ও শ্রমিক খরচসহ ১ বিঘা জমিতে ৬৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, কিন্তু বিক্রির পরও সে খরচ উঠে আসেনি।

একই গ্রামের ওমর আলী জানান, দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করে ৪০-৫০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।

বর্গাচাষি আফজল হোসেন বলেন, তিনি ২০ দিন আগে ১ হাজার টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। এতেও তিনি কোনো লাভ করতে পারেননি।

জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৮৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে, যা গত মৌসুমের তুলনায় ৫০ হেক্টর বেশি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, “এ মৌসুমে পেঁয়াজ বীজের দাম বেশি থাকায় কৃষকের উৎপাদন খরচও বেশি হয়েছে। এক মাস আগেও পেঁয়াজের দাম ভালো ছিল, কিন্তু রাজশাহী ও নওগাঁ থেকে পেঁয়াজ আসার কারণে জয়পুরহাটের বাজারে দাম কমে গেছে। ফলে কৃষকরা কিছুটা লোকসানের মুখে পড়েছেন।”

পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ায় জয়পুরহাটের কৃষকদের চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় বেশিরভাগ কৃষকই লাভের মুখ দেখেননি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি উৎপাদন খরচ কমানো ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে কৃষকদের এমন লোকসানের মুখে পড়তে হবে না।