ঢাকা ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাতিল হচ্ছে শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি

চেকপোস্ট ডেস্ক::

ছবি: চেকপোস্ট

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই তালিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী রাজনীতিবিদরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। নতুন প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় তাদের পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা মুক্তিযুদ্ধের মূল নেতৃত্বের ভূমিকাকে পরিবর্তন করবে।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) ৯৪তম সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে এবং ১০ মার্চ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম স্বাক্ষর করেছেন। নতুন খসড়া আইনে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি আরও চার শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধাকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব শ্রেণির মধ্যে রয়েছেন প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচার করা পেশাজীবী, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তারা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, কলাকুশলী এবং ফুটবল দলের সদস্যরা।

নতুন খসড়া আইনে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, “১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন, তারাই মুক্তিযোদ্ধা।” এর ফলে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজনীতিবিদদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং রাজনীতিবিদদের ভূমিকা নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি ইতিহাসের বিকৃতি হতে পারে এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বের গুরুত্ব কমিয়ে ফেলতে পারে। তবে মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, “রাজনীতিবিদরা সরাসরি যুদ্ধ করেননি, তাই তাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করে নতুন পরিচয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তবে এর মাধ্যমে মর্যাদা কমানো হয়নি।”

এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঠিক চিত্র এবং স্বীকৃতি নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ থেকে সমালোচনা করা হয়েছে। মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল ও ইতিহাসবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এই সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক এবং অপচয়মূলক বলে মন্তব্য করেছেন।

এই নতুন খসড়া আইনের কার্যকর হলে প্রায় ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় পরিবর্তন হতে পারে, যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৪:৪৫:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫
৫২৪ বার পড়া হয়েছে

বাতিল হচ্ছে শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি

আপডেট সময় ০৪:৪৫:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই তালিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী রাজনীতিবিদরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। নতুন প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় তাদের পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা মুক্তিযুদ্ধের মূল নেতৃত্বের ভূমিকাকে পরিবর্তন করবে।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) ৯৪তম সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে এবং ১০ মার্চ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম স্বাক্ষর করেছেন। নতুন খসড়া আইনে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি আরও চার শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধাকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব শ্রেণির মধ্যে রয়েছেন প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচার করা পেশাজীবী, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তারা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, কলাকুশলী এবং ফুটবল দলের সদস্যরা।

নতুন খসড়া আইনে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, “১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন, তারাই মুক্তিযোদ্ধা।” এর ফলে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজনীতিবিদদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং রাজনীতিবিদদের ভূমিকা নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি ইতিহাসের বিকৃতি হতে পারে এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বের গুরুত্ব কমিয়ে ফেলতে পারে। তবে মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, “রাজনীতিবিদরা সরাসরি যুদ্ধ করেননি, তাই তাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করে নতুন পরিচয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তবে এর মাধ্যমে মর্যাদা কমানো হয়নি।”

এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঠিক চিত্র এবং স্বীকৃতি নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ থেকে সমালোচনা করা হয়েছে। মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল ও ইতিহাসবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এই সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক এবং অপচয়মূলক বলে মন্তব্য করেছেন।

এই নতুন খসড়া আইনের কার্যকর হলে প্রায় ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় পরিবর্তন হতে পারে, যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।