খুলনায় পঞ্চবীথী ক্লাব উদ্ধারে সংঘর্ষ, আহত কয়েকজন
খুলনা নগরীর শান্তিধাম মোড়ে সরকারি একটি ভবনের দখল উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়েছে গণঅধিকার পরিষদ ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। গুরুতর আহতদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিতর্কিত ভবনটিতে পূর্বে “পঞ্চবীথী ক্রীড়া চক্র” নামে একটি ক্লাব ছিল। অভিযোগ রয়েছে, ক্লাবটিতে দীর্ঘদিন ধরে জুয়া, মাদক বিক্রিসহ নানা অসামাজিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো। এই অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৭ জানুয়ারি গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা ভবনটি থেকে পঞ্চবীথী ক্লাবের সাইনবোর্ড সরিয়ে সেখানে নিজেদের ব্যানার টাঙান। এই উদ্যোগের নেতৃত্ব দেন গণঅধিকার পরিষদ খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রাশিদুল ইসলাম রাশেদ (এস কে রাশেদ)। বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে রাতেই এস কে রাশেদকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে বহিষ্কারের পরও তিনি ওই ভবনে বসে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।
মঙ্গলবার রাতে ভবনটির দখল উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে বার্তা ছড়িয়ে দেয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির খুলনার নেতাকর্মীরা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা ভবন দখলমুক্ত করতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১০-১২ জন আহত হন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা জেলা কমিটির সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পী এক ফেসবুক বার্তায় দাবি করেন, “পঞ্চবীথী ক্লাবটি খুলনার সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র ছিল। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে গণঅধিকার পরিষদের কিছু নেতাকর্মী এটিকে অবৈধভাবে দখল করে নিজেদের আস্তানায় পরিণত করেছেন। তারা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও দোকানদারদের জিম্মি করে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছিলেন। এলাকাবাসী একাধিকবার প্রতিবাদ জানালেও চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়নি। অবশেষে সাহসী ছাত্র জনতা দখলদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। শান্তিপূর্ণভাবে ক্লাব দখলমুক্ত করতে গেলে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা স্থান ত্যাগে অস্বীকৃতি জানায় এবং ভাড়াটে গুন্ডা এনে হামলা চালায়।”
এ ঘটনায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে লিখেছেন, “খুলনায় গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর দুর্বৃত্তদের সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমাদের স্পষ্ট কথা, প্রশাসন দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা এর সমুচিত জবাব দেবে।”
সংঘর্ষের ঘটনায় স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। রাত আনুমানিক পৌনে ১১টা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলতে থাকে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে সংঘর্ষের কারণে পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে।
এদিকে, সংঘর্ষের সঠিক কারণ ও ভবনের প্রকৃত মালিকানা সম্পর্কে জানতে তদন্ত শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে ও প্রমাণ সংগ্রহের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।