ঢাকা ০৪:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খুলনায় চরমপন্থি নেতা বড় শাহীন হত্যার কারণ খুঁজছে পুলিশ, মামলা দায়ের

মোঃ রবিউল হোসেন খান, খুলনা::

ছবি: চেকেপাস্ট

খুলনায় চরমপন্থি নেতা শেখ শাহিনুল হক ওরফে বড় শাহীন (৫০) হত্যার ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। কারা এবং কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তা এখনও পুলিশ খুঁজে বের করতে পারেনি। তবে এ ঘটনায় নিহতের মা রহিমা খাতুন বাদী হয়ে সোমবার সন্ধ্যায় খুলনা সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ৫ জন এজাহারনামীয়সহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮/৯ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাওলাদার সানোয়ার হোসেন মাসুম জানিয়েছেন।

গত দেড় মাস সন্ত্রাসী ও চরমপন্থিদের কার্যক্রম কিছুটা কম থাকলেও পুলিশের ঢিলেঢালা অবস্থানের কারণে সন্ত্রাসীরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দৌলতপুর, আড়ংঘাটা, তেলিগাতী, খানজাহান আলী থানা এলাকায় পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ছিলেন শাহীন। ১৯৯৫ সাল থেকে দৌলতপুরে আলোচিত চরমপন্থি নেতা টাইগার খোকনের সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। শাহীন-কামাল জুটি ছিল আতঙ্কের অপর নাম। এলাকায় আরও এক চরমপন্থি নেতা ছোট শাহীন থাকায় তাকে ‘বড় শাহীন’ বলা হতো। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার রামপালে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর বাঘমারা ব্রিজের কাছে সন্ত্রাসীরা খুব কাছ থেকে শাহীনের মাথায় দুটি গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে রবিবার দুপুরে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিহত শাহীন নগরীর আড়ংঘাটা থানার সদরডাঙা এলাকার শেখ আব্দুর রশিদের ছেলে।

চরমপন্থি নেতা শাহীনের বিরুদ্ধে দৌলতপুরে আলোচিত হুজি শহীদ হত্যা মামলাসহ আরও ১০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এদিকে শাহীনকে হত্যার ঘটনায় পুলিশ এখনো সন্দেহভাজন কাউকে আটক করতে পারেনি। খুলনা সদর থানার ওসি হাওলাদার সানোয়ার হোসেন মাসুম বলেন, ‘কারা এবং কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে তা এখনো জানা যায়নি। তবে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করার জন্য পুলিশ কাজ করছে।’

এদিকে একই রাতে নগরীর হাজীবাড়ি এলাকায় মোস্তাকিন লনি নামের এক তেল ব্যবসায়ী ও টিসিবির ডিলারকে চাঁদার দাবিতে গুলি ও কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এর আগে, ২৪ জানুয়ারি রাতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অর্ণব কুমার সরকারকে নগরীর শেখপাড়া তেতুলতলা মোড়ে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়া নগরীর খালিশপুরের ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাজকির আহমেদকে ত্রিভুজ প্রেমের বলি হিসেবে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনার পর পুলিশ নগরীতে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে। যৌথ বাহিনীর ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর কারণে সন্ত্রাসীরা কিছুটা গা ঢাকা দিয়েছিল। কিন্তু পুলিশের কার্যক্রম আবারও ঝিমিয়ে পড়ায় সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।

নগরীজুড়ে পাড়া-মহল্লায় চলছে অবাধে মাদক ও জুয়ার আসর। পুলিশ জানলেও একপ্রকার নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। ইজিবাইক চালকদের হত্যা করে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের ঘটনাও বাড়ছে। কিছুদিন আগে বটিয়াঘাটায় খালিশপুরের হাফিজুল নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনতাই করা হয়।

নগরীর খালিশপুর থানা এলাকার হাউজিং তিনতলার সামনে রাতের অন্ধকারে এক ইজিবাইক চালককে জবাই করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তবে মাদ্রাসার হুজুররা টের পেয়ে ছিনতাইকারীদের একজনকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। সৌভাগ্যবশত চালক গলায় ছুরি চালানোর পরও প্রাণে বেঁচে যান।

এক কথায়, খুলনা এখন আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে। গত এক সপ্তাহে প্রতি রাতে কাউকে না কাউকে গুলি বা কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে নগরীতে চরমপন্থি, দাগি সন্ত্রাসী, কিশোর গ্যাং, ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী ও জুয়ারিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

 

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৪:২৮:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
৫০৬ বার পড়া হয়েছে

খুলনায় চরমপন্থি নেতা বড় শাহীন হত্যার কারণ খুঁজছে পুলিশ, মামলা দায়ের

আপডেট সময় ০৪:২৮:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

খুলনায় চরমপন্থি নেতা শেখ শাহিনুল হক ওরফে বড় শাহীন (৫০) হত্যার ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। কারা এবং কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তা এখনও পুলিশ খুঁজে বের করতে পারেনি। তবে এ ঘটনায় নিহতের মা রহিমা খাতুন বাদী হয়ে সোমবার সন্ধ্যায় খুলনা সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ৫ জন এজাহারনামীয়সহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮/৯ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাওলাদার সানোয়ার হোসেন মাসুম জানিয়েছেন।

গত দেড় মাস সন্ত্রাসী ও চরমপন্থিদের কার্যক্রম কিছুটা কম থাকলেও পুলিশের ঢিলেঢালা অবস্থানের কারণে সন্ত্রাসীরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দৌলতপুর, আড়ংঘাটা, তেলিগাতী, খানজাহান আলী থানা এলাকায় পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ছিলেন শাহীন। ১৯৯৫ সাল থেকে দৌলতপুরে আলোচিত চরমপন্থি নেতা টাইগার খোকনের সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। শাহীন-কামাল জুটি ছিল আতঙ্কের অপর নাম। এলাকায় আরও এক চরমপন্থি নেতা ছোট শাহীন থাকায় তাকে ‘বড় শাহীন’ বলা হতো। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার রামপালে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর বাঘমারা ব্রিজের কাছে সন্ত্রাসীরা খুব কাছ থেকে শাহীনের মাথায় দুটি গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে রবিবার দুপুরে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিহত শাহীন নগরীর আড়ংঘাটা থানার সদরডাঙা এলাকার শেখ আব্দুর রশিদের ছেলে।

চরমপন্থি নেতা শাহীনের বিরুদ্ধে দৌলতপুরে আলোচিত হুজি শহীদ হত্যা মামলাসহ আরও ১০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এদিকে শাহীনকে হত্যার ঘটনায় পুলিশ এখনো সন্দেহভাজন কাউকে আটক করতে পারেনি। খুলনা সদর থানার ওসি হাওলাদার সানোয়ার হোসেন মাসুম বলেন, ‘কারা এবং কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে তা এখনো জানা যায়নি। তবে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করার জন্য পুলিশ কাজ করছে।’

এদিকে একই রাতে নগরীর হাজীবাড়ি এলাকায় মোস্তাকিন লনি নামের এক তেল ব্যবসায়ী ও টিসিবির ডিলারকে চাঁদার দাবিতে গুলি ও কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এর আগে, ২৪ জানুয়ারি রাতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অর্ণব কুমার সরকারকে নগরীর শেখপাড়া তেতুলতলা মোড়ে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়া নগরীর খালিশপুরের ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাজকির আহমেদকে ত্রিভুজ প্রেমের বলি হিসেবে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনার পর পুলিশ নগরীতে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে। যৌথ বাহিনীর ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর কারণে সন্ত্রাসীরা কিছুটা গা ঢাকা দিয়েছিল। কিন্তু পুলিশের কার্যক্রম আবারও ঝিমিয়ে পড়ায় সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।

নগরীজুড়ে পাড়া-মহল্লায় চলছে অবাধে মাদক ও জুয়ার আসর। পুলিশ জানলেও একপ্রকার নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। ইজিবাইক চালকদের হত্যা করে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের ঘটনাও বাড়ছে। কিছুদিন আগে বটিয়াঘাটায় খালিশপুরের হাফিজুল নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনতাই করা হয়।

নগরীর খালিশপুর থানা এলাকার হাউজিং তিনতলার সামনে রাতের অন্ধকারে এক ইজিবাইক চালককে জবাই করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তবে মাদ্রাসার হুজুররা টের পেয়ে ছিনতাইকারীদের একজনকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। সৌভাগ্যবশত চালক গলায় ছুরি চালানোর পরও প্রাণে বেঁচে যান।

এক কথায়, খুলনা এখন আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে। গত এক সপ্তাহে প্রতি রাতে কাউকে না কাউকে গুলি বা কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে নগরীতে চরমপন্থি, দাগি সন্ত্রাসী, কিশোর গ্যাং, ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী ও জুয়ারিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

 


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/checkpostcom/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464