ঢাকা ১০:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুন্দরবনের নিষিদ্ধ এলাকায় জেলেদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ বনবিভাগের বিরুদ্ধে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি::

ছবি: চেকপোস্ট

সুন্দরবন রক্ষায় সরকারের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে বন অপরাধের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। সর্বশেষ অভিযোগ উঠেছে, পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বন বিভাগের স্মার্ট পেট্রোলিং টিমের বিরুদ্ধে ৩.৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে ২৯ জন জেলেকে মুক্তি দেওয়ার।

গত ১১ মার্চ সুন্দরবনের নিষিদ্ধ এলাকা কাছিকাটা, দোলনা পীর, তেঁতুলবাড়িয়া, বকবাড়িয়া ও পাগলের খাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাতটি নৌকার ২৯ জন জেলেকে আটক করা হয়। পরে, চালান দেওয়ার ভয় দেখিয়ে জেলেদের কাছ থেকে ৩.৫ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করে তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

৮ মার্চ সুন্দরবনের নটাবেকি খেজুরদানা এলাকা থেকে তিনটি নৌকা আটক করা হয়। এর মধ্যে হোসেন ও অয়ন কোম্পানির দুটি নৌকা চুক্তির আওতায় থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে অপর নৌকাটি চালান দেওয়া হয়। ৯ মার্চ হলদিবনিয়া তালপটিখাল এলাকা থেকে চারটি নৌকা আটক করা হয়, তবে চুক্তির আওতায় থাকায় সব নৌকাই ছেড়ে দেওয়া হয়। ১২ মার্চ মান্দার বাড়িয়া এলাকায় পাঁচটি নৌকা আটক করা হয়। চুক্তি থাকা চারটি নৌকা ছেড়ে দেওয়া হলেও মজনু কোম্পানির একটি নৌকা চালান দেওয়া হয়। ১১ মার্চ দোবেকী মেঘনা এলাকায় শরীফ কোম্পানির একটি নৌকা, হোসেন কোম্পানির তিনটি এবং অয়ন কোম্পানির পারসে পোনার একটি বোট আটকের পর চুক্তির ভিত্তিতে সব নৌকা ছেড়ে দেওয়া হয়।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, স্মার্ট পেট্রোলিং টিমের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে মাছ কোম্পানিগুলোকে সুন্দরবনের নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। চুক্তির আওতায় কাঁকড়ার নৌকার জন্য প্রতি ট্রিপে ২ হাজার টাকা এবং মাছ ধরার নৌকার জন্য ৪ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়।

আটক হওয়া জেলে সালাম অভিযোগ করে বলেন, তার মাছ ধরার নৌকা আটক করার পর মুক্তির জন্য ১ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল। পরে ৪০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধ করার পর তিনি মুক্তি পান।

অপর এক জেলে আব্দুর রহিম জানান, বনদস্যুদের পাশাপাশি বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের অত্যাচারও তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। তিনি বলেন, ‘‘একদিকে বনদস্যুরা টাকা নিচ্ছে, অন্যদিকে বন বিভাগের সাথে চুক্তি না থাকলে বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। টাকা দিতে না পারলে জাল, নৌকা, ডিঙ্গি সব নিয়ে নিচ্ছে।’’

স্মার্ট পেট্রোলিং টিমের টিম লিডার শিবেন মজুমদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সহকারী টিম লিডার গাজী ফয়সাল ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘আমি টিম লিডার ছিলাম না, টিম লিডারের নির্দেশ মেনে চলতে হয়। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’’

সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘‘অভিযোগটি শুনেছি। যদি স্মার্ট পেট্রোলিং টিম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

 

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ১১:২৯:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
৫০৮ বার পড়া হয়েছে

সুন্দরবনের নিষিদ্ধ এলাকায় জেলেদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ বনবিভাগের বিরুদ্ধে

আপডেট সময় ১১:২৯:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

সুন্দরবন রক্ষায় সরকারের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে বন অপরাধের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। সর্বশেষ অভিযোগ উঠেছে, পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বন বিভাগের স্মার্ট পেট্রোলিং টিমের বিরুদ্ধে ৩.৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে ২৯ জন জেলেকে মুক্তি দেওয়ার।

গত ১১ মার্চ সুন্দরবনের নিষিদ্ধ এলাকা কাছিকাটা, দোলনা পীর, তেঁতুলবাড়িয়া, বকবাড়িয়া ও পাগলের খাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাতটি নৌকার ২৯ জন জেলেকে আটক করা হয়। পরে, চালান দেওয়ার ভয় দেখিয়ে জেলেদের কাছ থেকে ৩.৫ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করে তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

৮ মার্চ সুন্দরবনের নটাবেকি খেজুরদানা এলাকা থেকে তিনটি নৌকা আটক করা হয়। এর মধ্যে হোসেন ও অয়ন কোম্পানির দুটি নৌকা চুক্তির আওতায় থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে অপর নৌকাটি চালান দেওয়া হয়। ৯ মার্চ হলদিবনিয়া তালপটিখাল এলাকা থেকে চারটি নৌকা আটক করা হয়, তবে চুক্তির আওতায় থাকায় সব নৌকাই ছেড়ে দেওয়া হয়। ১২ মার্চ মান্দার বাড়িয়া এলাকায় পাঁচটি নৌকা আটক করা হয়। চুক্তি থাকা চারটি নৌকা ছেড়ে দেওয়া হলেও মজনু কোম্পানির একটি নৌকা চালান দেওয়া হয়। ১১ মার্চ দোবেকী মেঘনা এলাকায় শরীফ কোম্পানির একটি নৌকা, হোসেন কোম্পানির তিনটি এবং অয়ন কোম্পানির পারসে পোনার একটি বোট আটকের পর চুক্তির ভিত্তিতে সব নৌকা ছেড়ে দেওয়া হয়।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, স্মার্ট পেট্রোলিং টিমের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে মাছ কোম্পানিগুলোকে সুন্দরবনের নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। চুক্তির আওতায় কাঁকড়ার নৌকার জন্য প্রতি ট্রিপে ২ হাজার টাকা এবং মাছ ধরার নৌকার জন্য ৪ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়।

আটক হওয়া জেলে সালাম অভিযোগ করে বলেন, তার মাছ ধরার নৌকা আটক করার পর মুক্তির জন্য ১ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল। পরে ৪০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধ করার পর তিনি মুক্তি পান।

অপর এক জেলে আব্দুর রহিম জানান, বনদস্যুদের পাশাপাশি বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের অত্যাচারও তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। তিনি বলেন, ‘‘একদিকে বনদস্যুরা টাকা নিচ্ছে, অন্যদিকে বন বিভাগের সাথে চুক্তি না থাকলে বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। টাকা দিতে না পারলে জাল, নৌকা, ডিঙ্গি সব নিয়ে নিচ্ছে।’’

স্মার্ট পেট্রোলিং টিমের টিম লিডার শিবেন মজুমদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সহকারী টিম লিডার গাজী ফয়সাল ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘আমি টিম লিডার ছিলাম না, টিম লিডারের নির্দেশ মেনে চলতে হয়। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’’

সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘‘অভিযোগটি শুনেছি। যদি স্মার্ট পেট্রোলিং টিম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

 


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/checkpostcom/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464