ঢাকা ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চুল দাঁড়ি কেটে সুবোধ শীলের ৫৪ বছর পার

এম এ ওয়াহেদ, লাখাই, হবিগঞ্জ::

ছবি: চেকপোস্ট

সময় বদলায়, প্রযুক্তি এগোয়, তবে কিছু মানুষ তাদের নিরলস পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। এমনই একজন হলেন হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার করাব গ্রামের সুবোধ চন্দ্র শীল, যিনি ৫৪ বছর ধরে একই টুল-পিড়িতে বসে চুল ও দাঁড়ি কাটার কাজ করে আসছেন। তার জীবন জুড়ে রয়েছে কাজের প্রতি এক অনবদ্য ভালোবাসা, যা তাকে তার পেশায় অটুট রেখেছে।

লাখাই উপজেলার স্থানীয় বুল্লা বাজারে, বুল্লা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তরের দেয়াল ঘেঁষে খোলা আকাশের নীচে একটি ছোট সেলুনে কাজ করেন সুবোধ চন্দ্র শীল। এখানে আধুনিক চেয়ারের বা চকচকে আনার কোনো দেখা নেই, তবে রয়েছে তার দক্ষ হাত এবং কাঁচির কেচ কেচ শব্দ, যা শুনলেই মনে হয় যেন চুল ও দাঁড়ি কাটার শিল্পকর্ম।

জানা যায়, তিনি স্বাধীনতা পূর্ব থেকে এ পেশায় কর্মরত। স্বাধীনতা পূর্বে চুল ও দাঁড়ি কাটার জন্য মাত্র ৫০ পয়সা নিতেন, কিন্তু সময়ের সাথে সেই মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকা। ৫৪ বছরের দীর্ঘ কর্মজীবনে তার কাজে কোনো পরিবর্তন আসেনি, শুধু পরিবর্তন হয়েছে তার খ্যাতি।

সুবোধ চন্দ্র শীল নিজের পরিবারকে চালিয়ে নিচ্ছেন তার পেশার আয় দিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি তার তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন এবং এক ছেলে বর্তমানে বেকার। প্রতিদিন এই পেশা থেকে তার আয় হয় ২ থেকে ৩ শত টাকা, যা দিয়ে তার স্ত্রী, ছেলে ও অন্যান্য সদস্যদের সংসার চলে। চুল ও দাঁড়ি কাটার পাশাপাশি তিনি বয়স্ক ভাতা নিয়মিত পান।

তিনি জানান, চুল দাঁড়ি কাটার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে তিনি সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য একজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন তার কাছে চুল কাটাতে আসে। একজন গ্রাহক বলেন, “অন্য কোথাও সেলুনে গেলে আধুনিকতা পাওয়া যায়, তবে এখানে শান্তি এবং আরাম পাওয়া যায়। তাছাড়া, কম টাকায় আমি আমার চাহিদা মেটাতে পারি।”

সুবোধ চন্দ্র শীল বলেন, “আমার কাজই আমার জীবনের মূল অনুপ্রেরণা। এই পেশা দিয়েই আমি আমার পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারছি এবং আমার তিন মেয়েকে সুপাত্রস্থ করতে পেরেছি। চুল দাঁড়ি কাটা শুধু একটি কাজ নয়, এটি আমার জন্য একটি শিল্প।”

বর্তমানে আধুনিক যুগে সেলুনের ভিড়ে সুবোধ চন্দ্র শীলের মতো মানুষজন তাদের নিষ্ঠা, দক্ষতা এবং ভালোবাসার জন্য এখনও টিকে আছেন। তার জীবনের গল্প প্রমাণ করে, কাজের প্রতি সৎ এবং নিষ্ঠাবান থাকলে কোনো বাঁধাই কাউকে থামাতে পারে না।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৯:৫৯:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫
৫৪৩ বার পড়া হয়েছে

চুল দাঁড়ি কেটে সুবোধ শীলের ৫৪ বছর পার

আপডেট সময় ০৯:৫৯:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫

সময় বদলায়, প্রযুক্তি এগোয়, তবে কিছু মানুষ তাদের নিরলস পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। এমনই একজন হলেন হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার করাব গ্রামের সুবোধ চন্দ্র শীল, যিনি ৫৪ বছর ধরে একই টুল-পিড়িতে বসে চুল ও দাঁড়ি কাটার কাজ করে আসছেন। তার জীবন জুড়ে রয়েছে কাজের প্রতি এক অনবদ্য ভালোবাসা, যা তাকে তার পেশায় অটুট রেখেছে।

লাখাই উপজেলার স্থানীয় বুল্লা বাজারে, বুল্লা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তরের দেয়াল ঘেঁষে খোলা আকাশের নীচে একটি ছোট সেলুনে কাজ করেন সুবোধ চন্দ্র শীল। এখানে আধুনিক চেয়ারের বা চকচকে আনার কোনো দেখা নেই, তবে রয়েছে তার দক্ষ হাত এবং কাঁচির কেচ কেচ শব্দ, যা শুনলেই মনে হয় যেন চুল ও দাঁড়ি কাটার শিল্পকর্ম।

জানা যায়, তিনি স্বাধীনতা পূর্ব থেকে এ পেশায় কর্মরত। স্বাধীনতা পূর্বে চুল ও দাঁড়ি কাটার জন্য মাত্র ৫০ পয়সা নিতেন, কিন্তু সময়ের সাথে সেই মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকা। ৫৪ বছরের দীর্ঘ কর্মজীবনে তার কাজে কোনো পরিবর্তন আসেনি, শুধু পরিবর্তন হয়েছে তার খ্যাতি।

সুবোধ চন্দ্র শীল নিজের পরিবারকে চালিয়ে নিচ্ছেন তার পেশার আয় দিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি তার তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন এবং এক ছেলে বর্তমানে বেকার। প্রতিদিন এই পেশা থেকে তার আয় হয় ২ থেকে ৩ শত টাকা, যা দিয়ে তার স্ত্রী, ছেলে ও অন্যান্য সদস্যদের সংসার চলে। চুল ও দাঁড়ি কাটার পাশাপাশি তিনি বয়স্ক ভাতা নিয়মিত পান।

তিনি জানান, চুল দাঁড়ি কাটার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে তিনি সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য একজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন তার কাছে চুল কাটাতে আসে। একজন গ্রাহক বলেন, “অন্য কোথাও সেলুনে গেলে আধুনিকতা পাওয়া যায়, তবে এখানে শান্তি এবং আরাম পাওয়া যায়। তাছাড়া, কম টাকায় আমি আমার চাহিদা মেটাতে পারি।”

সুবোধ চন্দ্র শীল বলেন, “আমার কাজই আমার জীবনের মূল অনুপ্রেরণা। এই পেশা দিয়েই আমি আমার পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারছি এবং আমার তিন মেয়েকে সুপাত্রস্থ করতে পেরেছি। চুল দাঁড়ি কাটা শুধু একটি কাজ নয়, এটি আমার জন্য একটি শিল্প।”

বর্তমানে আধুনিক যুগে সেলুনের ভিড়ে সুবোধ চন্দ্র শীলের মতো মানুষজন তাদের নিষ্ঠা, দক্ষতা এবং ভালোবাসার জন্য এখনও টিকে আছেন। তার জীবনের গল্প প্রমাণ করে, কাজের প্রতি সৎ এবং নিষ্ঠাবান থাকলে কোনো বাঁধাই কাউকে থামাতে পারে না।