মাদক সম্রাট ও সন্ত্রাসের হোতা টিপুসহ দোষরদের বাঁচাতে মানববন্ধন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নে মাদক সম্রাট ও সন্ত্রাসের গডফাদার হিসেবে পরিচিত ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগ নেতা শাহিদ রানা টিপুর বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠলেও তিনি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। সম্প্রতি, ১২ জানুয়ারী পরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করার পর ২৩ জানুয়ারী রাজশাহী হাসপাতালে মৃত্যুবরণকারী আব্দুল হাকিম পিন্টু হত্যা মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে টিপুর সমর্থকরা এক মানববন্ধনের আয়োজন করে।
রবিবার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে “চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নবাসী” ব্যানারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। তবে এতে অংশ নেয় মূলত টিপু চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠজন ও তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সহযোগী ব্যক্তিরা। স্থানীয়রা মনে করছেন, দীর্ঘদিন ধরে মাদক ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসা টিপু ও তার দোসররা প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করতে নানান ষড়যন্ত্র করছে।
পিন্টুর হত্যার পর তার পরিবার ও এলাকাবাসী এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার এবং আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে সোচ্চার হয়। তবে ২ মার্চ অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে নিহত পিন্টুর স্ত্রী পারভিন আকস্মিকভাবে খুনিদের পক্ষে কথা বলেন এবং অন্যদের নাম জড়িয়ে বক্তব্য দেন। এই ঘটনায় জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে এবং পিন্টুর পরিবারসহ স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহ দানা বেঁধেছে যে, তাকে হয়তো ভয়ভীতি দেখিয়ে কিংবা অন্য কোনো কৌশলে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদক ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মূল হোতা শাহিদ রানা টিপু চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা থাকলেও তিনি প্রশাসনের নাগালের বাইরে থাকছেন। এছাড়া, টিপু ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বিএনপি-জামায়াত নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
পিন্টু হত্যা মামলার বাদী ও তার পরিবার দাবি করেছেন, পুলিশকে প্রভাবিত করতে বিএনপির একজন জেলা পর্যায়ের নেতা টিপুর পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন এবং খুনিদের রক্ষা করতে কাজ করছেন। তবে, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পিন্টু হত্যার সঙ্গে জড়িত দুইজনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অন্যান্য ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটলেও টিপু চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা সবসময়ই আইনের আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, টিপুর বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়, এমনকি হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। টিপু তার নিজস্ব আস্তানায় ধরে নিয়ে গিয়ে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে। তিনি কেবল মাদক ব্যবসায় জড়িত নন, বালু সিন্ডিকেট ও মাটি সিন্ডিকেটেরও মূল গডফাদার হিসেবে পরিচিত।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির অবসান চায় নির্যাতিত ও ভূক্তভোগী পরিবারগুলো। তারা আশা করছেন, প্রশাসন সঠিক তদন্তের মাধ্যমে শাহিদ রানা টিপুসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং এলাকা থেকে মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূল করবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মোঃ ওয়াসীম ফিরোজ জানিয়েছেন, পিন্টু হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে দুইজন গ্রেফতার হয়েছে এবং বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে। পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
চরবাগডাঙ্গার মানুষ অপেক্ষায় রয়েছে—কবে প্রশাসন শক্ত হাতে ব্যবস্থা নেবে এবং এলাকা শান্তির পথে ফিরে আসবে।